১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার, ১১:৪৪

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ৫ মাস: এখনও কেনাবেচা চৌকিতে

রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পার হয়ে গেছে পাঁচ মাসেরও বেশি সময়। ঘটনার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষ থেকে বহুতল ভবন নির্মাণের কথা বলা হলেও এখনও কাজ শুরু হয়নি। কাজ কবে শুরু হতে পারে সেটিও স্পষ্টভাবে জানেন না ব্যবসায়ীরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে বঙ্গমার্কেট। করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন- পোড়া জায়গাটিতে ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান’- নামে একটি ১০ তলা ভবন তৈরি হবে। যেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ৩ হাজার ৪২টি দোকান থাকবে। ইতিমধ্যে নকশা তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে নকশা অনুমোদন হলেই চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে কাজ শুরু হতে পারে।


অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলে অস্থায়ী দোকান নিয়ে তাদের আবারও উচ্ছেদ হতে হবে। তাদের পুনর্বাসন বা কোনো ব্যবস্থা করা ছাড়া যেন কাজ শুরু করা না হয়- দাবি তাদের। বর্তমানে বাঁশ ও প্লাস্টিকের চটের ছাউনির নিচে চৌকি বিছিয়ে অস্থায়ীভাবে কেনাবেচা করছেন অনেকে। রাস্তার দিকে ও ভেতরে কিছু জায়গায় দোকান চালু হলেও ভেতরে বহু চৌকি ফাঁকা রয়েছে।


গত ৪ এপ্রিল দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বঙ্গবাজারে (বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে আগুন পাশের এনেক্সকো টাওয়ার মার্কেট (একাংশ), মহানগর শপিং কমপ্লেক্স (একাংশ), বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও মার্কেটে ছড়িয়ে পড়লে বহু দোকান পুড়ে যায়। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং প্রায় ৩০৩ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে আগুনের ঘটনায় করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে।


শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া মার্কেটের রাস্তার দিকের অংশে চৌকি বিছিয়ে কেনাবেচা করছেন ব্যবসায়ীরা। বেশিরভাগই প্যান্ট, শার্ট ও কাপড়ের দোকান। রোদের মধ্যে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করছেন। গরমের কারণে বিক্রেতাদের অনেককে ছোট টেবিল ফ্যান চালাতে দেখা গেছে। তবে ভেতরের অংশে বহু জায়গায় চৌকি বিছানো থাকলেও সেখানে মালামাল উঠিয়ে কেনাবেচা শুরু হয়নি।


ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডের পর অনেকে ধারদেনা করে দোকান শুরু করেছেন। আবার অনেকে টাকার অভাবে শুরুই করতে পারেননি। এ ছাড়া ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলে ব্যবসায়ীদের কোথায় নেওয়া হবে সেটি ঠিক না হওয়ায় অনেকে চৌকি বরাদ্দ নিলেও অনিশ্চয়তার কারণে দোকান শুরু করেননি বলে তারা জানান।


ফারুক নামে এক দোকানি বলেন, ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে এমনটি বহুদিন ধরে শুনলেও ঠিক কবে শুরু হবে সেটি জানি না।


সবশেষ গত শুক্রবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভবন তৈরির তারিখ জানাবেন এমনটিও শুনেছিলেন। তবে সে ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি বলে তিনি জানান।

শফিক নামের এক দোকানি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর অনেকে চৌকি বরাদ্দ নিলেও টাকার অভাবে দোকান শুরু করতে পারেননি। আবার যারা ধারদেনা করে মাল উঠিয়েছেন, তারাও নতুন ভবনের কাজ শুরুর আলোচনায় ফের উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন। নির্মাণকাজ চলাকালীন ব্যবসায়ীদের অস্থায়ী পুনর্বাসন বা বিকল্প কোনো জায়গায় ব্যবস্থা করে যেন সরানো হয়, সেই দাবি তার।


রুহুল আমিন নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে অস্থায়ী সব দোকান সরিয়ে চারপাশে সীমানা দেয়াল তৈরির কাজ শুরু হবে এমন কথা শুনতে পাচ্ছেন। কিন্তু দোকান সরানোর কোনো লক্ষণ দেখছেন না। তিনিও সবার জন্য কোনো ব্যবস্থা করে দোকান সরানোর কথা বলেন।


অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাটিতে ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান’ নামে একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। যেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ৩ হাজার ৪২টি দোকান থাকবে। ভবন তৈরিতে প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে নকশা অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হবে।


এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, বঙ্গবাজার নতুন ভবন নির্মাণের নকশা তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। আলাদা তিনটি প্রতিষ্ঠান নকশা তৈরির কাজ করছে। নকশা অনুমোদনের পর সবকিছু ঠিক থাকলে নভেম্বর বা ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে।


বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে মেয়রকে দ্রুত ভবন তৈরির কাজ শুরু করতে অনুরোধ করেছিলেন। মেয়রও নকশা অনুমোদনের পর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু করার কথা বলেছেন। জায়গাটিতে ১০ তলা ফাউন্ডেশনের ওপর আটতলা মার্কেট হবে। প্রথম থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত আগের চারটি মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার ৯৬১টি দোকান মালিকরা বরাদ্দ পাবেন। তবে নতুন করে কাউকে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে না।



https://www.shomoyeralo.com/details.php?id=237151