১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১:০৪

জলবায়ু পরিবর্তন

জনচাপ বাড়ছে ঢাকায়

বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতি বছর চার লাখ মানুষ গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় স্থায়ীভাবে চলে আসছে। আর এ সংখ্যা প্রতিদিন কমপক্ষে দুই হাজারের মতো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা সংরক্ষণে টেকসই উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে আগামী ৩০ বছরে বাংলাদেশে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা সাত গুণ বেড়ে যেতে পারে। দেশে জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য মতে, কেবল গত বছরই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৭১ লাখের বেশি বাংলাদেশী। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা এক কোটি ৩৩ লাখে পৌঁছতে পারে। এ ছাড়া আগামী ৩০ বছরে বাংলাদেশে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা সাত গুণ বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ‘অ্যাকশন এইড’ ও ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সাউথ এশিয়া’। প্রতিষ্ঠান দু’টি এক যৌথ জরিপ শেষে জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ ও ভয়াবহ প্রভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে বাস্তুভিটা ছেড়ে দিতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, গ্রাম ছেড়ে স্থায়ীভাবে ঢাকা শহরে চলে আসাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ জলবায়ু উদ্বাস্তু। এদের হিসাবে ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ বাসস্থান হারাবে।

জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি থেকে বাঁচতে আগামী ২৭ বছরে ২৩ হাজার কোটি ডলার ব্যয়ের একটি পরিকল্পনা নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। অভিযোজন পরিকল্পনা বা ন্যাশনাল অ্যাডপটেশন প্ল্যান (এনএপি) নামের এই পরিকল্পনা চলতি বছর থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত চলবে। বেসরকারি জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসকে (সিইজিআইএস) এই পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। সিইজিআইএসর হিসাব বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতিবছর বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ হারে ক্ষতি হচ্ছে। গত বছর দেশের জিডিপির আকার ছিল ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার বা ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। সেই হিসাবে প্রতি বছর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৬৫ কোটি ডলার। কার্যকর পদক্ষেপ না নিতে পারলে বছরে ক্ষতির এই পরিমাণ ২০৩০ সাল নাগাদ জিডিপির ২ শতাংশ এবং ২০৫০ সালে জিডিপির ৯ শতাংশে পৌঁছতে পারে। তেমন ঘটলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে বছরে ৮৫০ কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে। আর ২০২৩-৫০ সাল পর্যন্ত ২৭ বছরে ২৩০ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন পড়বে। বড় আকারে ছয়টি জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু এজেন্ডার মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ধনী দেশগুলোকে অর্থ দিতে হবে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমরা রেসপন্সিবল নই। রেসপন্সিবল হলো উন্নত দেশগুলো। কারণ শতকরা ৭০ ভাগ কার্বন নিঃসরণ করে কয়েকটি উন্নত দেশ। আমরা বলেছি, আমাদের অর্থনীতির শতকরা দুই ভাগ গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে নষ্ট হচ্ছে। তারা যেন আমাদের ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ প্রদান করে।

জলবায়ু সম্মেলন থেকে গঠিত ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল সক্রিয় হবে বলে আশা করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা কয়েকটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি, একটা হলো ‘মুজিব প্রোসপারিটি প্লান’; এটা আমাদের একুশ থেকে একচল্লিশ বছরের। আরেকটি হলো- ‘ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্রোগ্রাম’, যেটা সাতাশ বছরের; ২০২৩-৫০ সাল পর্যন্ত। এবার আমাদের খরচ ধরা হয়েছে ২৩০ বিলিয়ন ডলার। আমরা এই টাকাটা চাই। আমরা রিজিওনাল অ্যাডাপটেশন সেন্টার করেছি। আমরা অনেক সুন্দর অ্যাডাপটেশন ম্যাকানিজম তৈরি করেছি; কিন্তু আমাদের ক্ষতি হচ্ছে, তাই এই টাকাটা আমরা চাই।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/777645