১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১২:৫৯

সরকারের বেঁধে দেয়া দামও মানছেন না ব্যবসায়ীরা

সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও ব্যবসায়ীরা তা মানছে না। তারা বলছেন, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। ডিমের হালি ৫০ থেকে ৫২ টাকা, আলুর কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ও পেয়াঁজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার ডিমের হালি সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা, আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং পেয়াঁজের কেজি ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বিশ্ব বাজারের দামের চেয়ে দ্বিগুণ দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ববাজারে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা ৬১ পয়সা, ভারতে প্রতিটি লাল ডিম বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ দশমিক ৫০ টাকা এবং প্রতিটি সাদা ডিম পাঁচ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অথচ বাংলাদেশে লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১২ থেকে ১৩ টাকায় আর সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১১ টাকা। এদিকে রাজধানীর বাজারে সকল প্রকার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। আর বৃদ্ধি পাওয়া সবজিসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম কমেনি।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, প্রতি হালি ডিম আগের মতো ৫০-৫২ টাকা অর্থাৎ প্রতিটি সাড়ে ১২ থেকে ১৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি সাদা আলু ৫০ টাকা এবং লাল আলু ৫৫ টাকায় রয়ে গেছে। কমেনি পেঁয়াজের দামও। ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৮০-৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সরকারের বেঁধে দেয়া দামে পণ্য বিক্রি করছেন না কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে বিক্রেতাদের অজুহাতের শেষ নেই। কয়েকজন বিক্রেতা আবার বলছেন তারা নাকি বেঁধে দেয়া দামের বিষয়টি জানেন-ই না। তবে অধিকাংশরা বলছেন বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগবে।

এক ডিম বিক্রেতা বলেন, সরকার ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে, আমিও ১২ টাকা বিক্রি করবো। তবে ১০০ পিস নিতে হবে একসঙ্গে। কারণ পাইকারি ডিম কিনেছি ১২ টাকা দরে। এরপর ভাড়া ও অন্যান্য খরচ আছে। আমিতো আর লোকসানে বেচবো না। লোকসানের টাকা কি সরকার আমাকে দেবে?

বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের বর্তমান দামের সঙ্গে দেশের বাজারে একই পণ্যের দামে বড় রকমের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের তুলনায় বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্য অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা নথিতে দেখা গেছে। সামগ্রিকভাবে দামের পার্থক্য অনেক বেশি। বিশেষ করে দেশের বাজারে ডিমের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। যদিও বাংলাদেশে ডিম আমদানি হয় না।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর কৃষিপণ্যের মূল্য পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে উপস্থাপনা দেওয়া হয়েছে, সেখানে এই চিত্র উঠে এসেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক মাসে পেঁয়াজ, আদা, কাঁচা মরিচ ও ডিমের দাম কমেছে। এই সময়ে পেঁয়াজের দাম প্রতি মেট্রিক টনে কমেছে ১২ শতাংশ, আদার দাম কমেছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ, কাঁচা মরিচের দাম ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ডিমের দাম প্রতিটিতে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ কমেছে। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মধ্যে শুধু রসুনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ২৬ দশমিক ৭০ টাকা (প্রতি ডলার ১০৯.৫০ টাকা হিসাবে)। ওই দিন রসুনের দাম ছিল প্রতি কেজি ১৯৩ দশমিক ৫৯ টাকা, আদার দাম ছিল ১২৩ দশমিক ৫২ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ১২০ দশমিক ১৮ টাকা। ডিমের দাম প্রতি পিস ছিল ৫ দশমিক ৬১ টাকা। উপস্থাপনায় অন্য পণ্যের দাম ডলারে উল্লেখ করা হলেও ডিমের দাম টাকায় দেয়া হয়েছে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার বাজারে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। ২০ টাকা বেড়ে সোনালি ৩৪০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৪০ টাকা এবং লেয়ার ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে। এদিকে বাজারে গরুর গোশতের কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির গোশতের কেজি ১ হাজার ৫০-১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুরগি ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে আমরাও বাড়িয়ে বিক্রি করি, কমলে কমিয়ে দেই। গত সপ্তাহে সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কম ছিল। ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকারি ছুটির দিনগুলোতে ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেন। ক্রেতাদের জিম্মি করে তারা ব্যবসা করছেন। কারণ ছাড়াই নানা অজুহাতে বিক্রেতারা পণ্যে দাম বাড়িয়ে দেন। খুচরা বাজারে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

বাজারগুলোতে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকা।

এদিকে মাছের বাজারও অনেক চড়া। বৃদ্ধি পাওয়া মাছের দাম এখনো কমেনি। বাজারে প্রতি কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই মাছ (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, মাগুর মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়, পাঙাশ ১৯০ থেকে ২২০ টাকা, ইলিশ (আকারভেদে) ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বোয়াল ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই মাছ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, মলা ৪৫০ টাকা, ট্যাংরা ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে বৃদ্ধি পাওয়া সবজির দামও কমেনি। বরং দুএকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৮০ টাকা, প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁপের কেজি ৪০ টাকা, লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৪০০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতিটি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। দেশি পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি কিছুটা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ছোট বাঁধাকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ছোট আকারের ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলার কেজি ৪০ টাকা, শিম ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১৬০ টাকা ও গাজর ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

https://www.dailysangram.info/post/535574