১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১২:৫১

আমলা আমলাতন্ত্র ও রাজনীতি

ইবনে নূরুল হুদা

আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা অতিগুরুত্বপূর্ণ। আমলারাই রাষ্ট্রের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। সরকারের গৃহীত সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব তাদের হাতেই ন্যস্ত থাকে। আর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে তো আমলারাই এখন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা; ক্ষমতাসীনদের জীবনীশক্তি। তাই আমাদের দেশের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও রাষ্ট্রাচারের ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।

বস্তুত, আমলাতন্ত্র (Bureaucracy এমন এক শাসনব্যবস্থা যাতে স্থায়ী সরকারি কর্মকর্তারা দায়িত্ব বিভাজনের মাধ্যমে সরকারের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। আমলারা জনপ্রতিনিধি বা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নন। ফলে রাজনৈতিক সরকার পরিবর্তিত হলেও আমলারা স্বপদে বহাল থাকেন। সঙ্গত কারণেই আমলাতন্ত্রে সরকার পরিচালনার ধারাবাহিকতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত হয়।

আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রাচারের ক্ষেত্রে অতিগুরুত্বপূর্ণ হলেও আমলাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার আমাদের দেশে সুশাসনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। একশ্রেণির আমলাদের অতিমাত্রায় রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ও মাত্রাতিরিক্ত দলবাজি পুরো পরিস্থিতিকে জটিল ও অস্থির করে তুলেছে। অথচ গণতান্ত্রিক দেশ ও সভ্যসমাজে গণপ্রশাসনকে সকল প্রকার দলমত ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকা দরকার। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘রুলস অব বিজনেজ’ মেনে পেশাদারিত্ব রক্ষার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। চাকরি ও আচরণ বিধিতেই আমলাদের রাজনীতি করার ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা কাউকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন কোন ভূমিকা রাখবেন না, ঠিক তেমনিভাবে কোন বিশেষ শক্তিকে ক্ষমতায় আনাও তাদের কাজ নয়। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে ব্যক্তিস্বার্থের অশুভ প্রতিযোগিতায় দলীয়করণ প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। নিরপেক্ষ ভূমিকার বদলে কে কতবড় দলবাজ তা প্রমাণের জন্য মরিয়া একশ্রেণির প্রশাসনিক কর্মকর্তা। আগামী নির্বাচন নিয়ে কতিপয় সরকারি কর্মকর্তার নিলর্জ্জ দলবাজিমূলক বক্তব্য নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে আগেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

যারা আমলাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন তারা আমলাদের নানাভাবে সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন অবলীলায়। প্রশাসনে পদ ছাড়াই নির্বাচনের আগে কর্মকর্তাদের খুশি করতে এ ধরনের ঢালাও পদোন্নতি দেওয়ার ফলে জনপ্রশাসনের আদর্শ কাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক ও সভ্যসমাজে দেশের জন্য দলমত নিরপেক্ষ প্রশাসনের কোনো বিকল্প নেই। এটা এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের জন্য কোন আশার বাণী নেই।

দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এমতাবস্থায় একশ্রেণির মতলববাজ আমলার দলবাজির কারণে পুরো আমলাতন্ত্র আসামীর কাঠগড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। তবে এখন দলবাজ যেসব আমলা আমলাতন্ত্রের শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছেন তাদের দাবি এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা বলছেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বপালন করছেন। কোনো রাজনৈতিক দলে কাজ করছে না। তারা আরো বলছেন, খুশি করতে ভোটের আগে পদোন্নতি এটা ঠিক নয়। পদোন্নতি দেয়া জনপ্রশাসনের রুটিন কাজ। সেটাই করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার সাথে এক বক্তব্যের কোন সামঞ্জস্য নেই। বিরোধী রাজনীতিকরা বলছেন একই কথা। তাদের মতে, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন একাকার হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে তারা যেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেও নিয়ন্ত্রণ করছে। বিষয়টি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল থেকে যুক্তিযুক্তই মনে করা হচ্ছে। ফলে নির্বাচনকালীন একটি দলনিরপেক্ষ প্রশাসন প্রতিষ্ঠার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে।

মূলত, প্রশাসনে পদবিহীন গণপদোন্নতি রাজকোষের অপচয়। কারণ, পদ দিলেও তাঁদের প্রয়োজনীয় কাজ দেয়া যাচ্ছে না। এতে জনপ্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। অভিজ্ঞমহল থেকে সবসময় প্রশাসনকে সব সময় দলমতের ঊর্ধ্বে রাখার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। যাতে সকলইে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। এক্ষেত্রে কোন আমলার পক্ষে রাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই। রাজনীতি করবেন রাজনীতিবিদরা। কর্মচারীরা কাউকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন চেষ্টা করবেন না, তেমনি কাউকে ক্ষমতায় আনার জন্যও ভূমিকা রাখবেন না। একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক দেশের জন্য দলমত নিরপেক্ষ প্রশাসনের বিষয়টি একেবারে অনস্বীকার্য। কিন্তু এসব আপ্তবাক্যে সংশ্লিষ্ট মহলের কোনদিই চেতনা ফেরেনি বা সহসাই ফেরার কোন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সরকার পুরোপুরি প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল। সঙ্গত কারণেই জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের খুশি করতে ও সন্তুষ্ট রাখতেই পদ না থাকলেও ঢালাওভাবে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দলীয় কর্মকর্তাদের বসানো হয়েছে। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে এভাবে পদোন্নতি দিয়েছে, এবারও তাই করা হয়েছে। বর্তমান সরকার প্রশাসনকে এমনভাবে সাজিয়েছে, যাতে আরেকটি নির্বাচন করে তারাই আবার নির্বিঘেœ ক্ষমতায় আসতে পারে। তাই দেশে একটি গণতান্ত্রিক ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে এমন একটি নির্বাচনকালীন সরকার দরকার, যাতে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর এক্ষেত্রে কোন বিকল্প ভাবার কোন সুযোগ নেই।

পর্যবেক্ষক মহল অভিযোগ করছে, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত সমস্যা হলো গণতন্ত্র ও বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার কর্তৃক জনগণের ভোটাধিকার হরণ। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। কিন্তু রাষ্ট্রের মালিকানা এখন জনগণের হাতে নেই বরং চলে গেছেই একশ্রেণির ফরিয়াদের হাতে। আর এরাই এখন পুরো রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় অসীন হয়েই নানাভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে সর্বব্যাপী দলীয়করণের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। অথচ নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের জন্য কোন আসার বাণী নেই বরং দিনের পর দিন সার্বিক পরিস্থিতির অবনতিই হচ্ছে। ফলে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে দেশের রাজনৈতিক ঐতিহ্য, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ।

তথ্যাভিজ্ঞমহল মনে করছে, যতদিন রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিতে প্রকৃত শুদ্ধি অভিযান হবে না, ততদিন দেশে কোন কার্যকর ও সফল গণপ্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য দলমত নিরপেক্ষ প্রশাসনের বিষয়টি অনস্বীকার্য হলেও এক্ষেত্রে আমাদের জন্য কোন আশার বাণী নেই বরং একশ্রেণির দলবাজ প্রশাসনিক কারণেই দেশে রীতিমত সুশাসন ব্যহত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন)-এর বক্তব্য হলো, সরকার এখন পুরোপুরি প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের খুশি করতে ও সন্তুষ্ট রাখতেই পদ না থাকলেও পদোন্নতি দিচ্ছে। নিরপেক্ষ প্রশাসন করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আর এটিই এখন রীতিমত গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। আর চলমান সঙ্কট উত্তরণে এর কোন বিকল্পও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কিন্তু এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের কোন বোধদয় নেই।

বস্তুত, আমলারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি। সকল প্রকার দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে প্রজাতন্ত্রের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করা আমলাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এক্ষেত্রে শ্রেণি, দল বা ব্যক্তি বিশেষে তাদের পক্ষে অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা কোনো দলকে ক্ষমতায় আনার চেষ্টা যেমন করবে না, তেমনি কোনো সরকারকে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেওয়া ষড়যন্ত্রও করবে না। আমলারা আইন ও বিধিবিধানের মধ্যে থেকে রাজনৈতিক সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। কারণ দেশ চালাবেন রাজনীবিদরা। সংবিধান, সংসদ এবং সরকার সবার ওপরে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনগণের সেবক হিসাবে কর্মচারীর মতো কাজ করবেন। এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

জানা গেছে, সম্প্রতি গণপ্রশাসনে ২২১ জন উপসচিব ও সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সচিব করা হয়েছে। এর আগে গত মে মাসে ১১৪ জন অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। আগামী মাসে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৯তম ব্যাচকে পদোন্নতি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। ১০ জন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হয়েছেন। তাদের মধ্যে ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের দ’জন করে এবং ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের একজন করে রয়েছেন। সর্বশেষ যে ২২১ জনকে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সরকারের ১১ জন হলেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একান্ত সচিব (পিএস)। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনে কর্মরত ছয়জন কর্মকর্তাও আছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, জনপ্রশাসনে যুগ্ম সচিবের অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৩৩২। গত বছরের নভেম্বরে ১৭৫ জনকে যুগ্ম সচিব করার পর এই পদে কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৭২৫। এই পদে সম্প্রতি ২২১ জনকে পদোন্নতি দেওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা দাঁড়াল ৯৪৬। এখন দেশে অনুমোদিত পদের চেয়ে যুগ্ম সচিবের সংখ্যা প্রায় তিন গুণ। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে বেশ কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা পদোন্নতি পেতে পারেন। এখন উপসচিবের নিয়মিত পদ আছে এক হাজারের মতো।

সূত্র বলছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে বেশ কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা পদোন্নতি পেতে পারেন। এখন উপসচিবের নিয়মিত পদ আছে এক হাজারের মতো। সারা দেশে সমপর্যায়ের পদগুলো মিলিয়ে উপসচিব বা সমপর্যায়ের পদ আছে ১ হাজার ৭৫০-এর মতো। বর্তমানে এই পদে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৬৯৮ জন। নতুন পদোন্নতির পর অনেক উপসচিবকেও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবের পদে কাজ করতে হবে। পুরো প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। আর এই অশুভ বৃত্ত থেকে আমাদের সহসাই মুক্তি মিলবে বলে মনে হচ্ছে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র দাবি করেছে, এটা নির্বাচন সামনে রেখে পদোন্নতি নয় এটা নিয়মিত পদোন্নতি। অনেক দিন পর এই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পদ না থাকলেও কেন এতসংখ্যক পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা হচ্ছে, শূন্য পদের বিপরীতে পদোন্নতি দেয়া হয়। এবারো তার ব্যত্যয় হচ্ছে না। তবে মন্ত্রণালয়ের এই বক্তব্যের সাথে অনেকেই একমত নয় বরং এই সত্য লুকানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টিকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কসরত হিসাবেই দেখছেন অভিজ্ঞমহল।

রাজনীতি কোন লাভজনক কাজ নয় বরং গণমানুষের কল্যাণ ও সেবার চিন্তা থেকেই এই সেবামূলক কাজের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। বস্তুত রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতি হলো হল দলীয় বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ক্ষমতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ক কর্মকা-ের সমষ্টি। রাজনীতি এ্যাকাডেমিক অধ্যয়নকে রাজনীতিবিজ্ঞান বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কাজ হলো রাজনীতি নিয়ে গবেষণা। যার প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো গণমানুষের কল্যাণের নিমিত্ত একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রস্তুত করা। কিন্তু আমাদের দেশের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এর বিচ্যুতিটা রীতিমত চোখে পড়ার মত। কারণ, একশ্রেণির অতি উচ্চাভিলাষী রাজনীতিকের কারণেই দেশের চলমান রাজনীতিতে বড় ধরনের বিচ্যুতি ঘটেছে। রাষ্ট্রের সকল বিভাগকে রাজনীতির সাথে একাকার করে ফেলার বিষয়টি ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে আমলাতন্ত্রের বিচ্যুতি এবং একশ্রেণির দলান্ধ আমলাদের দলবাজি পুরো পরিস্থিতিকে জটিল ও অস্থির করে তুলেছে।

এমতাবস্থায় দেশকে আইন ও সাংবিধানিক শাসনে ফিরিয়ে নিতে এই অশুভবৃত্ত থেকে আমাদেরকে বেড়িয়ে আসতে হবে। নিজ কক্ষপথে ফিরিয়ে আনতে হবে আমলাতন্ত্রকে। কারণ, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমলাদের অপেশাদারী ও দলবাজ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা সম্পর্কে রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অগ (Ogg) বলেন, (The body of the civil servants is an expert, professional, non-political, permanent and subordinate staff.) অর্থাৎ ‘রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা হবে সুদক্ষ, পেশাদারী, অধীনস্থ কর্মকর্তা যারা স্থায়ীভাবে চাকরি করেন এবং রাজনীতির সাথে যাদের কোনো সংশ্রব নেই’। অন্যথায় গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও স্বাধীনতার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।

https://www.dailysangram.info/post/535557