১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ১০:২১

লিবিয়ায় বন্যায় আরো বাংলাদেশী নিখোঁজের আশঙ্কা

নিহতদের ৪ জনের পরিচয় মিলেছে

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল ও বন্যার তাণ্ডবে প্রায় ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। বার্তা সংস্থা আলজাজিরার খবরে এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে যে ৬ বাংলাদেশীর মৃত্যু এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের মধ্যে ৪ জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস। দূতাবাসের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভয়াবহ এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আরো কিছু বাংলাদেশী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের তথ্য সংগ্রহ ও সন্ধান করা হচ্ছে। এই ঘটনার পর লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের তথ্য জানতে দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দূতাবাসের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। দারনা শহরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের খোঁজ নিতে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে রওনা দিয়েছেন।

দুই দিন আগে ত্রিপোলীর বাংলাদেশ দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লিবিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকসহ সবার অবগতির জন্য জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল ও বন্যার তাণ্ডবে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল বিশেষত দারনা, সাহাত, আল-বাইদা, আল-মার্জ শহর এলাকা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে দারনা বাঁধের ভয়াবহ ধসে সৃষ্ট বন্যায় কয়েক হাজার মানুষ ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়াও এই ঘটনায় আরো হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। এই অবস্থায় দারনা শহরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যসহ উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে বলেও দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে।

দূতাবাসের সর্বশেষ তথ্যমতে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে দারনা শহরে বসবাসকারী ৬ জন বাংলাদেশী নাগরিক মারা গেছেন। তাদের মধ্য থেকে ৪ জনের প্রাথমিক পরিচয় পাওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইং।

মৃত্যুবরনকারী বাংলাদেশীরা হচ্ছেন রাজবাড়ী জেলার শাহীন ও সুজন এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার মামুন ও শিহাব। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বাকি নিহত দুইজনের পরিচয় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া দারনা শহরে বসবাসরত আরো কিছু সংখ্যক বাংলাদেশী নিখোঁজ থাকার আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ দূতাবাস। তবে এই সংখ্যা কত হতে পারে তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে সার্বিক বিষয়ে দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের তথ্য জানতে এবং ঘূর্ণিঝড়ে নিখোঁজ প্রবাসীদের তথ্য জানানোর জন্য ত্রিপোলীর বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো: রাসেল মিয়ার মোবাইলে (+২১৮৯১৮৫৮০৮৯৮, +৮৮০১৭৯০৮৪৮৫৮৬) যোগাযোগ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো: রাসেল মিয়ার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, নিহত ৬ বাংলাদেশীর মধ্যে আমরা ৩ জনের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পেয়েছি এবং তাদের আত্মীয় স্বজনের সাথে আমাদের কথাও হয়েছে। এরমধ্যে দু’জন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এবং রাজবাড়ীর দু’জনের মধ্যে একজনের পরিচয় মিলেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দারনা এলাকায় এই মুহূর্তে কোনো নেটওয়ার্ক নেই। বিদ্যুৎ নেই যার কারণে কতজন বাংলাদেশী মারা গেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান আমরা জানতে পারছি না। তবে ধারণা করছি শতাধিক বাংলাদেশী সেখানে থাকতে পারে। সঠিক তথ্য জানার জন্য আমাদের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশারের নেতৃত্বে দূতাবাসের দু’জন মিনিস্টারসহ একটি প্রতিনিধিদল বিমানে রওনা হয়েছেন দারনা। তিনি বলেন, আসলে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া হয়ে অনেকেই সাগরপথে ইউরোপের দেশ ইতালি যাওয়ার জন্য আসেন। সেই হিসাবে আনডকুমেন্ট বাংলাদেশী এখানে বেশি। যার কারণে এখানে কত সংখ্যক বাংলাদেশী আছেন তার সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। লিবিয়ার ত্রিপোলীর বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে দারনার দূরত্ব প্রায় ১৫শ’ কিলোমিটার বলে জানান তিনি।

এদিকে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে সজিব দারিয়া নামের একজন যুবক তার মন্তব্য উল্লেখ করেছেন, ‘স্যার যারা মারা গেছে তাদের আল্লাহ তায়ালা বেহেশত নসিব করুন। আর যারা লিবিয়ায় জীবিত আছে, অ্যাম্বাসির স্যারদের অনুরোধ আমাদের যাদের পাসপোর্ট নাই আউটপাশে বাংলাদেশে যেতে চাই নিজ খরচে আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদের একটু সাহায্য করেন দেশে যাওয়ার জন্য।’

আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে বেশিরভাগ বাংলাদেশী ঢাকা থেকে দুবাই-মিশর তিউনেসিয়া হয়ে অবৈধভাবে লিবিয়ার বেনগাজি যাচ্ছেন। এরপর সাগরপথে ইউরোপের দেশ ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। যারা যেতে পারেন না তাদের অনেকে দেশটিতে জিম্মি দশায় থাকেন। এদের মধ্যে আবার অনেকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে মানবেতর জীবন কাটানোর অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিবিয়ায় বন্যায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে। ঝড়ের কারণে বাঁধ ভেঙে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের দারনা শহর। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই বাঁধ ভেঙে শহরে ঢুকে পড়া পানিতে ভেসে যান অনেকে। এখন সেসব মানুষের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। পচন ধরতে যাওয়া এসব লাশের জন্য বডি ব্যাগ দেয়ার আকুতি জানাচ্ছেন তারা। গত রোববার রাতে লিবিয়ায় দারনায় সৃষ্ট হওয়া ভয়াবহ এই বন্যায় প্রায় সাড় ৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেলেও এই সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে, এমনকি দ্বিগুণ তিনগুণ হতে পারেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/777400