১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:৪৯

এবার আলুর বাজারে কারসাজি

এবার আলু নিয়ে কারসাজি শুরু হয়েছে। বর্তমানে বাজারে এক কেজি আলু কিনতে খরচ হচ্ছে ৫০ টাকা। সপ্তাহ দুয়েক আগেও প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা দরে। যা গত বছরের এই সময় বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। পরিসংখ্যান বলছে-গত এক বছরে আলুর দাম বেড়েছে ৭৮ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন-দেশে পর্যাপ্ত আলু মজুত থাকার পরও অতি মুনাফার লোভে অবৈধ মজুত করে আলুর দাম বাড়ানো হচ্ছে।

কৃষি বিপণন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ লাখ ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭০০ টন। এক কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ১০ টাকা। যা তারা বিক্রি করেছেন সর্বোচ্চ ১৮ টাকায়। এই ১৮ টাকায় আলু কিনে যারা কোল্ড স্টোরেজে রেখেছেন, প্রতি কেজিতে তাদের খরচ হয়েছে ৫ টাকা।

এতে প্রতি কেজি আলুর দাম পড়েছে ২৩ টাকা। কিন্তু সেই আলু এখন খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি।
কাওরান বাজারে আলু কিনতে আসা ইশতিয়াক আহম্মেদ বলেন, গত বছরও এই সময়ে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু কিনেছি। আর এখন ৫০ টাকা করে কেনা লাগছে। মুশফিকুর রহমান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, আলু যদি ৫০ টাকা কেজি করে কিনে খেতে হয়, তাহলে আর অন্য সবজি কীভাবে কিনবে মানুষ?

এদিকে কাওরান বাজার, মোহম্মদপুরের সাদেকখানের কাঁচামালের আড়ৎসহ বেশকিছু আলুর আড়তে গিয়ে দেখা যায়, থরে থরে বস্তাভর্তি আলু সাজানো রয়েছে। পর্যাপ্ত মজুত। মেসার্স পাবনা ভাণ্ডার, মেসার্স রাজবাড়ী ট্রেডার্স, মেসার্স মালেক এন্টারপ্রাইজসহ বেশকিছু আড়তের মালিক জানান, মৌসুমের শুরুতে তারা ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আলু ৭শ’ থেকে ৭শ’ ৫০ টাকায় কিনেছিলেন। সেসব আলুর বস্তা এখন কিনতে হচ্ছে ১৯শ’ থেকে ১৯শ’ ৫০ টাকায়। সেই হিসাবে, কেউ যদি এক হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করেন তবে বর্তমান বাজারে বিক্রিতে তার লাভের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০ লাখ টাকা। আর ১০ হাজার বস্তা সংরক্ষণ করে থাকলে লাভের অঙ্কটা কোটির ঘরে। মেসার্স পাবনা ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের বেশিরভাগ কৃষক ধারদেনা করে ফসল ফলায়। তাই ধার মেটানোর আশায় তাদের উৎপাদিত আলুর সিংহভাগই ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। আর সেই আলু হিমাগারে মজুত করে মুনাফা লুটছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, কোনো হিমাগারে যদি দুই লাখ বস্তা আলু থাকলে তার ২০ হাজার বস্তা কৃষকদের আর বাকি সব ব্যাপারীদের। আগে যেভাবে হিমাগার থেকে ৪ ট্রাক আলু বেড় হতো, এখন সেখান থেকে সিন্ডিকেট করে ২ ট্রাক আলু বের হচ্ছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে আলুর। রহমান নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, সিন্ডিকেটের পাশাপাশি দামবৃদ্ধির আরেক কারণ হলো হাতবদল। হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণে রেখেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেনাবেচা চলতে থাকে। এতে প্রতি হাত বদলেই দাম বেড়ে যায়। ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর আগে যতবার হাতবদল হয় ততবার দাম বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, অনেকেই অতি লাভের আশায় লাখ লাখ টন আলু মজুত করে রেখেছেন। যেই হিসাবটা সরকারের কাছে নেই। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে আলু ধীরে ছাড়ছে বলেই আলুর দাম কমছে না। এদিকে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করেছেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৫ টাকা থেকে ৩৬ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। আলুর দামের কারসাজিতে জড়িতদের চিহ্নিত করতে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাঠে নামেছে। সকল ব্যবসায়ীকে পাকা ভাউচারের মাধ্যমে আলু বিক্রি করতে হবে। পাকা ভাউচার দেখাতে না পারলেই ব্যবস্থা। একই সঙ্গে মনিটরিং জোরদার করা হবে। কোল্ড স্টরেজে নজর রাখা হবে বলেও জানান তিনি।

https://mzamin.com/news.php?news=73980