১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:৩৯

কেনাকাটার হিড়িক শেষ সময়ে

এক দিনেই ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

জাতীয় নির্বাচন হতে মাত্র মাস তিনেক বাকি। সরকারের এই শেষ সময়ে কেনাকাটার হিড়িক পড়েছে। এক দিনেই ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি কেনাকাটার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে মোট ৪২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও স্থাপিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিতব্য বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণসহ ১৪টি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সবগুলো ক্রয় প্রস্তাবে মোট ব্যয় হবে প্রায় ২৩ হাজার ৮২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে জানান, বৈঠকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিইউবি) উদ্যোগে বেসরকারি খাতে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ স্থাপিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিতব্য বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণের তিনটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেই ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনবে সরকার।

তিনি জানান, তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলা ও ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হবে। বিল্ড-ওন-অপারেট (বিওও) এবং ‘নো ইলেকটিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করবে কনসোর্টিয়াম অব গ্রিন প্রোগ্রেস রিনিউয়েবল বি.ভি এবং আইআরবি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড। প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ ১০.৮৭৮২ টাকা হিসাবে ২০ বছরে এ কেন্দ্র বিদ্যুৎ কিনতে সরকারকে আনুমানিক তিন হাজার ৫২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

অপর দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হবে। উপরোক্ত একই শর্তে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করবে কনসোর্টিয়াম অব ডিট্রলিক এসএ ইন্টারন্যাশনাল পিটিই এবং পাওয়ারনেটিক এনার্জি লিমিটেড। প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ ১০.৯২৮১ টাকা হিসাবে ২০ বছরে এ কেন্দ্র বিদ্যুৎ কিনতে সরকারকে আনুমানিক তিন হাজার ৫৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

অতিরিক্ত সচিব জানান, এ ছাড়া কক্সবাজার জেলার চকোরিয়ায় ২২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হবে। একই শর্তে এটি স্থাপন করবে জেটি নিউ এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড। প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ ১৩.৪১৪ টাকা হিসাবে ২০ বছরে এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারকে আনুমানিক ১২ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।

তিনি জানান, বৈঠকে টার্নকি ভিত্তিতে ইউনিফাইড প্রিপেইড সিস্টেমের আপগ্রেডেশনসহ উন্নত মিটারিং পরিকাঠামোর ডিজাইন, সরবরাহ, ইনস্টলেশন, টেস্টিং কমিশনিং কাজের বিইউবির আরেকটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যৌথভাবে এ কাজটি করবে ওসিউলিন টেক বিডি লিমিটেড; নুরিফ্লেক্স কোং ও এসকিউ ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। এতে ব্যয় হবে ৪৬০ কোটি ৫০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

তিনি জানান, বৈঠকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কর্তৃক যশোর বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ে সারফেসে অ্যাসফল্ট কংক্রিট ওভারলেকরণ-এর পূর্ত কাজ সম্পাদনে ঠিকাদার নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনটি লটে তিনটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ কাজটি করবে। এতে মোট ব্যয় হবে প্রায় ৭৭২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক রাশিয়ান ফেডারেশন থেকে জি-টু-জি পদ্ধতিতে তিন লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রতি কেজি গমের মূল্য পড়বে ৩৪.৪৩ টাকা।

তিনি জানান, বৈঠকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে তিন কোটি ৩০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান ব্রিজো মেরিন এসডিএন বিএইচডি (স্থানীয় এজেন্ট : সেনা এডিবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ) এ তেল সরবরাহ করবে। ব্যয় হবে ৪৩৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। সব খরচসহ প্রতি লিটার তেলের দাম পড়বে ১৫৫.৯৩৩ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের টিসিবির আরেকটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রডাক্ট লিমিটেড এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৭৯ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি লিটার তেলের দাম পড়বে ১৫৯.৮৫ টাকা।

তিনি জানান, এ ছাড়া টিসিবি কর্তৃক স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ছয় হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এই ডাল সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৫৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রতি কেজি ডালের দাম পড়বে ৯৬.৮৫ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর কর্তৃক হাতিরঝিল-রামপুরা সেতু-বনশ্রী-শেখের জায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ কাজে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এলইএ অ্যাসোসিয়েটস সাউথ এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ৫৩ কোটি ৩০ লাখ ১৪ হাজার টাকা।

তিনি জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশন থেকে দু’টি পৃথক লটে (লট নম্বর ১৩ ও ১৪) ৫০ হাজার মেট্রিক টন করে মোট এক লাখ মেট্রিক টন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানির দু’টি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পৃথকভাবে দু’টি লটেই ব্যয় হবে ১৭৭ কোটি ৬৫ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে বিএডিসি কর্তৃক রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কোর ওসিপি, এসএ থেকে দু’টি লটে সার আমদানির দু’টি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২৩১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

অন্য দিকে ৭ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১২৮ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/777173