১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:৩৪

ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের জরিপ

শতকরা ৯১ ভাগ বাংলাদেশী গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে

দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা গেছে, এমন শাসনের পক্ষে রায় দিয়েছেন শতকরা ৯১ ভাগ মানুষ। তারা চান গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ বিশ্ব-কল্যাণের জন্য একটি বড় শক্তি হিসেবে মনে করেন মানবাধিকারকে।
এখানে উল্লেখ্য, ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন হলো একটি অলাভজনক জরিপ সংস্থা। তারা এ মাসে যে জরিপ প্রকাশ করেছে তার শিরোনাম- ‘ওপেন সোসাইটি ব্যারোমিটার : ক্যান ডেমোক্র্যাসি ডেলিভার?’

এতে বলা হয়, বাংলাদেশসহ ৩০টি দেশের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন ৩৬ হাজার ৩৪৪ জন মানুষ। তাতে দেখা গেছে, গড়ে প্রতিটি দেশ থেকে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ জরিপে অংশ নিয়েছেন। ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মার্কিন ধনকুবের জর্জ সরোস একজন দানশীল ব্যক্তি। তার এ প্রতিষ্ঠানটি ন্যায়বিচার, গণতান্ত্রিক শাসন ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে। জরিপ প্রতিবেদনের মুখবন্ধে ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট মার্ক মালোক-ব্রাউন বলেছেন, গণতন্ত্রের ক্ষয় নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা অতিরঞ্জিত।

আসলে গণতন্ত্রের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র বড় যে হুমকিতে রয়েছে, তা কর্তৃত্ববাদের কারণে নয়; বরং রাজনৈতিক নেতারা জনগণকে কতটা দিতে পারছেন, সেটিই বড় বিষয়।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৯১ ভাগ বাংলাদেশী বলেছেন, গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত একটি দেশে বাস করা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো সরকারকাঠামোর চেয়ে গণতন্ত্রকে বাংলাদেশের ৫৯ শতাংশ মানুষ পছন্দ করেন। মানবাধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশের ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, বিশ্বের কল্যাণের জন্য মানবাধিকার একটি বড় শক্তি।

এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, চীন, কলম্বিয়া, মিসর, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ঘানা, ভারত, ইতালি, জাপান, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, রাশিয়া, সৌদি আরব, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে। যারা এতে অংশ নিয়েছেন তারা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। এ বছর ১৮ মে থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সমতা, ন্যায়বিচার, জনগণের চাওয়া, অর্থনীতি, ক্ষমতা ও রাজনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি উচ্চ সমর্থন জানিয়েছেন প্রায় সব দেশের মানুষ। যেমন চীনের শতকরা ৯৫ ভাগ উত্তরদাতা বলেছেন, গণতান্ত্রিক শাসনের মধ্যে বাস করা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এ হার ৬৫ শতাংশ এবং এটাই জরিপে আসা দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের ৯৩, শ্রীলঙ্কার ৮৫, পাকিস্তানের ৭৯ এবং মালয়েশিয়ার ৮৭ শতাংশ মানুষ গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে।

জরিপে গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সমতা, ন্যায়বিচার, জনগণের চাওয়া, অর্থনীতি, ক্ষমতা ও রাজনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বলতে বোঝানো হয়েছে ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার, বাকস্বাধীনতা সুরক্ষা এবং নির্যাতন ও বৈষম্য বন্ধ করাকে।

প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন অধিকার আপনার কাছে বেশি জরুরি? জবাবে বাংলাদেশের ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাদের কাছে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ২৮ শতাংশের কাছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার, ১৭ শতাংশের কাছে পরিবেশগত অধিকার এবং ১৩ শতাংশের কাছে ডিজিটাল জগতের অধিকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আলাদাভাবে বলা হয়, দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এ কারণে অনন্য যে, এই দেশের বেশিসংখ্যক উত্তরদাতা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের চেয়ে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

জরিপে প্রশ্ন ছিল, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে শাস্তি দেয়ার জন্য পশ্চিমাদের দ্বারা মানবাধিকারকে ব্যবহার করা হয় কি না- এই প্রশ্নে একমত বাংলাদেশের ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা। অবশ্য জরিপ প্রতিবেদনে এও উঠে আসে যে, যখন অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, তখন মানুষ জবাবদিহি চায়। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, ব্যাংক হিসাব জব্দ করার মাধ্যমে জবাবদিহির আওতায় আনাকে বেশি সমর্থন করেছে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো। সমর্থনের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে- ৭৯ শতাংশ। এরপরে রয়েছে নাইজেরিয়া ৭৮, মিশর ৭৪, ইথিওপিয়া ও কেনিয়া ৭৩ এবং পাকিস্তান ৭২ শতাংশ।

আগামী বছর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সহিংসতার আশঙ্কা করেন কি না, জরিপে উত্তরদাতাদের কাছে এ প্রশ্ন ছিল। জবাবে বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা সহিংসতার আশঙ্কা করেছেন। হারটি সবচেয়ে বেশি কেনিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায়- ৭৯ শতাংশ। জরিপে ৩০টি দেশের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গড়ে ৫৩ শতাংশ মনে করেছেন, তাদের দেশ ভুল পথে এগোচ্ছে। মোট ছয়টি বিষয়ে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। দেশভেদে সমস্যা ভিন্ন, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দারিদ্র্য ও বৈষম্য ছিল বড় সমস্যা। যেমন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ৫২ শতাংশ করে উত্তরদাতা খাদ্যনিরাপত্তার উদ্বেগ নিয়ে একমত।

জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ও চীনের উত্থান নিয়ে উত্তরদাতাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল। একটি প্রশ্ন ছিল, ২০৩০ সাল নাগাদ কোন দেশের বেশি প্রভাব থাকবে। উত্তরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের নাম ছিল। ‘জানি না’ বলে উত্তর দেয়ারও সুযোগ ছিল। উত্তরদাতাদের মধ্যে গড়ে ৩২ শতাংশ মনে করেছেন চীনের প্রভাব বেশি থাকবে। আর ২৬ শতাংশ মনে করেছেন যুক্তরাষ্ট্রই থাকবে প্রভাবশালী। বাংলাদেশের উত্তরদাতাদের মধ্যে ২৭ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবশালী থাকবে বলে মনে করেন। চীন প্রভাবশালী হবে বলে মনে করেন ১৭ শতাংশ।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/777181