১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ২:৪০

বিদেশি ঋণ পরিশোধ প্রসঙ্গ

বিদেশি ঋণ পরিশোধ করার বিষয়ে বাংলাদেশের সমস্যা ও অনিশ্চয়তা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। একযোগে বাড়ছে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ার বিপদ। আমদানিকারক ও রফতানিকারকসহ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারও এমন অবস্থার শিকার হয়েছে। কারো পক্ষেই ঋণ পরিশোধ করার মতো অর্থ যোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একদিকে সুদে ও আসলে বিদেশিদের পাওনার পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে, অন্যদিকে নতুন ঋণ পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে। সে কারণে অনেক প্রয়োজনেও নতুন করে ঋণ চাইতে বা নিতে পারছে না সরকার। ব্যবসায়ীদের অবস্থাও একই রকম।

বিষয়টি সরকারের জন্য তো বটেই, অনেক বেশি বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ব্যক্তি ও কোম্পানি বা গোষ্ঠী পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের জন্য। গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকের রিপোর্টে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো অন্য একটি খবরও জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এমন অবস্থার মধ্যেই আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডিস ইনভেস্টরস এবং এসএন্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে। জানা গেছে, এ ধরনের সংস্থা কোনো দেশের ঋণমান কমিয়ে দিলে সে দেশের পক্ষে নতুন পর্যায়ে ঋণ পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। অনেক কষ্টে পাওয়া গেলেও একদিকে ঋণের পরিমাণ কমে যায় এবং অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় সুদও গুণতে হয় অত্যধিক উচ্চ হারে। এই সময়ের বাংলাদেশ তেমন অবস্থায়ই পড়েছে।

প্রকাশিত রিপোর্টে কিছু বিশেষ তথ্যের উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে চলমান যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বলতে গেলে ঋণই দেয়া হচ্ছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমগ্র বিশ্বেই ডলার সংকট মারাত্মক হয়েছে। একই ডলার সংকটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক হিসেবে বিবেচিত এলসি বা আমদানির ঋণপত্র খোলার ব্যাপারে ভীষণ সমস্যায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা এলসি খুলতে পারছেন না বলে বিদেশিরাও হাত গুটিয়ে নিয়েছেÑ যার ফলে নতুন পণ্য তো আসছেই না, আগে থেকে চলে আসা অনেক প্রকল্পও বন্ধ হয়ে গেছে বা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও বেসরকারি সকল পর্যায়েও চলছে একই অবস্থা।

উদ্বেগের অন্য একটি কারণ হলো, দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা এবং আমলাদের কারণে সরকারের প্রায় সকল প্রকল্পেই দফায় দফায় বাজেট তথা খরচের পরিমাণ কয়েকগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এভাবে ঋণের পরিমাণ যেমন অনেক বেড়ে গেছে তেমনি বেড়েছে সুদের পরিমাণও। এবার আসছে সেই সব ঋণ ও যেগুলোর সুদের টাকা পরিশোধের পালা। ওদিকে দেশে কারো কাছেই নেই যথেষ্ট পরিমাণ ডলার। সকলেই রয়েছে ডলার সংকটে। একই কারণে পরিশোধের প্রশ্নে প্রচন্ড চাপেরও সৃষ্টি হয়েছে।

বাস্তবে ঋণের পরিমাণ কিন্তু খুব বেশি নয়। কারণ, বাংলাদেশের সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়ার ব্যাপারেও অনেক আগে থেকেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কঠোর মনোভাব দেখানো এবং সিদ্ধান্ত নেয়া ও কার্যকর করা হয়েছে। কোনো দেশের কোনো পক্ষই সহজে বাংলাদেশকে ঋণ দিচ্ছে না। প্রকাশিত একই খবরে জানানো হয়েছে, বিগত অর্থবছরে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ পেলেও চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্তও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য কোনো ঋণ পায়নি। ফলে দেশের সকল খাতেই অর্থ সংকট মারাত্মক হচ্ছে। এমন অবস্থার মধ্যেও সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও ঋণ পরিশোধের তাগিদ দিন দিন জোরদার হচ্ছে। জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণের কিস্তি হিসেবে বাংলাদেশকে অন্তত এক হাজার দুইশ’ কোটি মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু ওই পরিমাণ অর্থ জোগাড় করা সহজে সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

তথ্যাভিজ্ঞরা মনে করেন, সরকারের উচিত ব্যবসায়ীসহ আমদানি রফতানিতে জড়িত সকল পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে অনতিবিলম্বে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া। সরকারকে একই সঙ্গে এমন আয়োজনও নিশ্চিত করতে হবেÑ যাতে সংশ্লিষ্টদের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় এবং বাংলাদেশকে যাতে আর কখনো এবারের মতো তীব্র অর্থ সংকটের মুখে না পড়তে হয়।

https://www.dailysangram.info/post/535270