৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৩:৫৫

প্রতি মাসে গড়ে ৪৫ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

সারা দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। আজ শনিবার তারা এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে তুলে ধরবে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক সংগঠনগুলোর যৌথভাবে কাজ করা জরুরি। প্রতিটি আত্মহত্যার কারণ চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

গত সোমবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অপূর্ব বাড়ৈ (২৪) নামের এক শিক্ষার্থীর ফাঁস লাগানো লাশ উদ্ধার করা হয়। আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

তাঁর বড় ভাই শাওন বাড়ৈ বলেন, কোনো মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনে অভিমানে সে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। পুলিশ বলেছে, তদন্ত পুরোপুরি শেষ হলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর কাজী সামিতা আশকা নামের এক শিক্ষার্থীর ফাঁস লাগানো লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।

সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরে প্রেমিককে ভিডিওকলে রেখে তিনি ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়েন।
গত ১৬ আগস্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের একটি ছাত্রী হলের এক কক্ষ থেকে জয়া কুণ্ডু নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সহপাঠীদের তথ্যের বরাতে পুলিশ জানায়, অনেক দিন ধরে তিনি হতাশায় ভুগছিলেন। এ থেকে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

এসব ঘটনার পুলিশি তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, হতাশা, একাকিত্ব, প্রেমের সম্পর্ক ও নেতিবাচক ভাবনা থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।

পড়াশোনার চাপ ও ভবিষ্যৎ পেশা নিয়ে হতাশা থেকেও আত্মহত্যা করছেন শিক্ষার্থীরা।
গত ২৯ মে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে নিজ বাড়িতে সাকিব (১৬) নামের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর ফাঁস লাগানো মরদেহ উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে, পড়াশোনা নিয়ে বকাঝকা করায় মা-বাবার সঙ্গে অভিমান করে সে আত্মহত্যা করে।
এ বিষয়ে অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আত্মহত্যা নানা কারণে হচ্ছে। অন্যতম হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার, ফেসবুকে অবাধে সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রতারণার শিকার হওয়া, পারিবারিক বন্ধন নড়বড়ে হওয়া, মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ও পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপ। এখানে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সবার দায় রয়েছে এবং ব্যাপকভাবে কাজ করারও সুযোগ আছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, তুচ্ছ কারণেও অনেক সময় আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। তবে যে কারণেই আত্মহত্যর ঘটনা ঘটুক না কেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনসহ মৃত্যুর সঠিক কারণ পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে ২০২২ সালে সংস্থাটির জরিপবিষয়ক প্রতিবেদনে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৫৩২ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা ঘটনা জানা যায়। সেই হিসাবে গত বছর প্রতি মাসে ৪৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৪৪৬ জন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। স্কুল ও সমমান পর্যায়ের ৩৪০ জন ও কলেজ পর্যায়ের ১০৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৪ জন মাদরাসার শিক্ষার্থী।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/09/09/1316356