৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৩:৫৩

চিকিৎসাধীন রোগী বেড়েছে ৯%

দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গত মাসের একই সময়ের তুলনায় ৯.১৯ শতাংশ বেড়েছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় তা বেড়েছে ৮০.৩৫ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই উপাত্ত পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাইরে এখন ১৫ কোটি মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে।
ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ২০ থেকে ৩০ বছর সারা দেশের মানুষকে এই দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশে এক দিনে ডেঙ্গুতে ১৫ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়ে হলো ৭০৬। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় এই সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৮৭৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, নতুন রোগীদের নিয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৯ হাজার ৭৩০ জন। এর মধ্যে চার হাজার ২৬৫ জন ঢাকার। ঢাকার বাইরে পাঁচ হাজার ৪৬৫ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৪২ হাজার ৫৮৭।

এক সপ্তাহ ধরে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রোগী আছে গড়ে ৯ হাজার ৬৬ জন। আগের মাস আগস্টে এই সময় গড় ছিল আট হাজার ২৩৩ জন। জুলাইয়ের এই সময় গড় ছিল এক হাজার ৭৮২ জন। অর্থাৎ গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকার চেয়ে বাইরের জেলাগুলোতে ডেঙ্গু রোগী এখন বেশি।

এই সমস্যা সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়বে। ঢাকায় আমরা কিছু করতে পারলাম না। এখন ঢাকার বাইরে ১৫ কোটি মানুষ এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বলা যায়, আগামী ২০ থেকে ৩০ বছর তাদের এ যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে।’

ঢাকায় চিকিৎসাধীন রোগী কমেছে, বাইরে বেড়েছে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় সেপ্টেম্বরে এ পর্যন্ত ১৫.৩৫ শতাংশ কমেছে। ঢাকার বাইরে বেড়েছে ৮ শতাংশ। গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা গড়ে তিন হাজার ৯৭৮। আগস্টের এই সময়ের গড় চার হাজার ৬৯৯ জন।

এক সপ্তাহ ধরে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে গড়ে পাঁচ হাজার দুজন রোগী চিকিৎসাধীন। আগস্টের এই সময় গড় ছিল চার হাজার ৫৯৭ জন।

চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ডেঙ্গু রোগীরা সেরে উঠতে বেশ সময় নিচ্ছে। গড়ে ছয় দিনের বেশি সময় হাসপাতালে থাকছে তারা।

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর ছয় দিনের বেশি থাকতে হচ্ছে রোগীদের। এতে দৈনিক ভর্তি হওয়া রোগী এবং ছাড়া পাওয়া রোগীর সংখ্যার মধ্যেই খুব বেশি পার্থক্য থাকে না। শয্যা খালি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার পূর্ণ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে অনেক রোগী আসছে। তারা পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে হাসপাতাল ছাড়তে চায় না। আর নিরাপদ মনে না হলে ছাড়পত্র দিতে স্বস্তিবোধ করছেন না চিকিৎসকরাও।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, বর্তমানে শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। ঢাকায় স্থিতিশীল থাকলেও ঢাকার বাইরে রোগী বেশি বাড়ছে। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে হলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা না হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।


https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/09/09/1316350