৩০ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১:১০

এতিমখানায় দেয়া যাবে ত্রাণের চাল

বন্যা, নদী ভাঙন বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুস্থ ও অসহায় পরিবারের মধ্যে জিআর চাল বরাদ্দ বা বিতরণ করা হয়। এমনটাই ছিল এতদিনের নিয়ম। কিন্তু নতুন করে সরকারি বা বেসরকারি এতিমখানা/ লিল্লাহবোর্ডিং/শিশুসদন/অনাথ আশ্রম/মুসাফিরখানা/বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জিআর চাল বরাদ্দ বা বিতরণের নিয়ম করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের বরাবরে জিআর চাল বরাদ্দ দিতে পারবেন। গত ১৭ই এপ্রিল

বিষয়টি সম্পর্কে দেশের সব ডিসিকে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১০ই আগস্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সব ডিসিদের কাছে একটি আদেশ পাঠানো হয়। ওই আদেশে বলা হয়, ডিসিদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত জিআর (চাল) বা নগদ টাকা শুধুমাত্র দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্যার্থে সীমিত রাখা এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান/ এতিমখানা বা অন্য উদ্দেশ্যে জিআর চাল বা নগদ টাকা ব্যয় না করার নির্দেশনা দেয়া হলো। এ সিদ্ধান্তের পরই গেল বছর অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সামনে বিষয়টি তারা উত্থাপন করেন। এরপরই গত ১৭ই এপ্রিল জারি করা এক আদেশে ডিসিরা আট শর্তে এতিমখানা/লিল্লাহবোর্ডিং/শিশুসদন/অনাথ আশ্রম/মুসাফিরখানা/বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জিআর চাল বরাদ্দ বা বিতরণ দিতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়। ওই আদেশে ‘এ’ গ্রেডের জেলার জন্য বছরে একশ’ টন, ‘বি’ গ্রেডের জেলার জন্য ৭৫ টন ও ‘সি’ গ্রেডের জেলার জন্য ৫০ টন জিআর চাল বরাদ্দ বা বিতরণের জন্য রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শর্তে বলা হয়েছে, ডিসিরা বরাদ্দকৃত চাল বিতরণের আগে সরকারি/বেসরকারি এতিমখানা/লিল্লাহবোর্ডিং/শিশুসদন/অনাথ আশ্রম/মুসাফিরখানা/বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এতিমখানার নিবন্ধন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের তারিখ ও অস্তিত্ব এবং উভয়ক্ষেত্রে পাওয়ার যোগ্যতা যাচাই করবেন। অযোগ্য/অস্তিত্বহীন এতিমখানা/ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এ বরাদ্দ দেয়া যাবে না। একই অর্থবছরে একবারের বেশি একটি এতিমখানা বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া যাবে না। এছাড়া একটি প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ দুই টনের বেশি জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া যাবে না। এতে বলা হয়েছে, মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা, ২০১২-১৩ অনুযায়ী ডিসিরা জিআর চাল বরাদ্দ পাওয়ার অযোগ্য ও অস্তিত্বহীন এতিমখানা/ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জিআর বরাদ্দের দায়-দায়িত্ব বাতিলের ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন এবং বরাদ্দে অনিয়ম হলে এর দায়-দায়িত্ব তিনি বহন করবেন। এছাড়া মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা, ২০১২-১৩ অনুযায়ী শুধুমাত্র সরকারি বা বেসরকারি এতিমখানা/লিল্লাহবোর্ডিং/ শিশুসদন/অনাথ আশ্রম/মুসাফিরখানা/বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আসা ব্যক্তিদের আহার্য বাবদ বিতরণ করতে পারবেন এবং বিতরণের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেবেন ও অবহিত করবেন। আরো চার শর্তে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উগ্রপন্থার সংশ্লিষ্টতা থাকলে ওই সব প্রতিষ্ঠানে এ বরাদ্দ দেয়া যাবে না। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত সরকারি অনুদান বা বার্ষিক গ্রান্ট পাচ্ছে ওই সব প্রতিষ্ঠানে এ বরাদ্দ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। একই সঙ্গে জিআর চাল বরাদ্দের কপি এবং মাসিক প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। এসব বরাদ্দের বাইরে জেলার রিজার্ভ শুধুমাত্র দুর্যোগকালীন ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের অনুকূলে বিতরণের জন্য মজুত রাখতে হবে। বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, তারা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়েছেন। ওই অনুযায়ী তারা কাজ করছেন।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=63550