৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ১০:৫০

দেশে ডেঙ্গুতে প্রাণহানির সংখ্যা ৭ শত ছুঁই ছুঁই

দিন যত যাচ্ছে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিল ততই দীর্ঘ হচ্ছে। একদিনে আরও ২০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এক সপ্তাহে মারা গেছেন ৯৮ জন। দেশে এ পর্যন্ত ৬৯১ জন মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। দেশে ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ও শনাক্তে পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৬৮৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার ৭১১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৬৪ হাজার ১৭২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৭৬ হাজার ৫৩৯ জন। মৃত ৬৯১ জনের মধ্যে নারী ৪০৩ জন এবং পুরুষ ২৮৮ জন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ১৯৪ জন এবং রাজধানীতে ৪৯৭ জন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৬৮৯ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৯৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৭৯০ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ২ হাজার ৬৮৯ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭১১ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ১৫১ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ৫৬০ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার ৭১১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ আক্রান্ত ৮৭ হাজার ২৪ জন এবং নারী ৫৩ হাজার ৬৮৭ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৩০৯ জন।

অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন শনাক্ত এবং প্রাণহানি ৩৪২ জন। সেপ্টেম্বরের ৭ দিনে শনাক্ত রোগী ১৬ হাজার ৯০৩ জন এবং মারা গেছেন ৯৮ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায় নেই।

এদিকে হাসপাতালের লাগামহীন খরচের বোঝা রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বজনদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অপরদিকে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু সেবা বিনামূল্যে হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে চিকিৎসায় টাকা গুণতে হচ্ছে রোগীদের। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের ২০২০ সালে পরিচালিত গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যয়ের মাধ্যমে বা আউট অব পকেট খরচ হয়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গু চিকিৎসার ক্ষেত্রেও একই ধরনের চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণাতেও একই চিত্র দেখা যায়। ২০১৯ সালে বিভাগটির অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ ও তার সহকর্মীদের পরিচালতি গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু রোগীর গড় খরচ ১১ হাজার টাকা। আর ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীর সরকারি হাসপাতালে খরচ ২০ হাজার টাকা।

এ ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালকে গবেষকেরা তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেন। সবচেয়ে দামি বা ‘ক’ শ্রেণির হাসপাতালে একজন রোগীর গড় খরচ ছিল দুই লাখ টাকা। ‘খ’ শ্রেণির হাসপাতালে গড়ে খরচ ছিল ৪১ হাজার টাকা। সর্বশেষ ‘গ’ শ্রেণির হাসপাতালে খরচ ছিল ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা। এসব খরচ রোগীর ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, শয্যা ভাড়া, চিকিৎসকের ফি, যাতায়াত ভাড়া বাবদ হিসেব করা হয়েছিল। বর্তমান বাস্তবতায় যা কয়েক গুণ বেড়েছে।

ঢাবির স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের গবেষণায় হাসপাতালগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করে চিকিৎসা গড় ব্যয় দেখানো হয়েছে। যা বহুলাংশেই রোগীর শারীরিক জটিলতার উপর নির্ভর করে। একই সঙ্গে হাসপাতালের ক্যাটাগরি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসার খরচের কোনো সীমা নেই। সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করা দুইজন ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। রোগীদের দুইজনই বড় কোনো জটিলতা ছাড়াই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাদের আইসিইউ বা প্লাটিলেট গ্রহণের প্রয়োজন পড়েনি।

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার প্রধান ভরসা সরকারি হাসপাতাল। স্বল্প খরচে ভালো চিকিৎসার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই নি¤œ মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত মানুষের। এর অন্যতম কারণ এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা মেলে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, চলতি বছরে ডেঙ্গু চিকিৎসায় সরকার মোট ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। রোগীপ্রতি গড় ব্যয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। দুঃখজনকভাবে সরকারের এত টাকা ব্যয়ের পরেও ডেঙ্গু চিকিৎসা পেতে ব্যক্তি পর্যায়েও খরচ হচ্ছে রোগীদের।

https://www.dailysangram.com/post/534891