৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ১০:৪৫

প্রতিনিয়ত তলে পড়ে যাচ্ছি

সার্বিক উন্নয়নের জন্য যেসব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয় সেগুলো প্রধানত দেশের সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট, দৈন্য-দুর্দশা লাঘবে। দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সার্বিকভাবে উন্নয়নখাতে যেপরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, সেপ্রত্যাশা অনুযায়ী জনগণ কি যথাযথ সুবিধা পায়?

দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের হিসেব করলে বিকল সরঞ্জামের সংখ্যা গুণে শেষ করা যাবে না। সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশ, বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল বিশেষায়িত হাসপাতাল বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেলের একমাত্র এমআরআই মেশিন এবং ১০টি এক্সরে মেশিন দীর্ঘ ছয় বছর ধরে অচল হয়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, এ হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ প্রায় সবাই স্থানীয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মেশিন নষ্ট বলে এক্সরে, ইসিজি, এমআরআই ইত্যাদি টেস্ট করতে রোগীদের সরকারি হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে বেসরকারি ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে নিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। কোটি টাকা খরচ করে সাধারণ মানুষের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবার পরও জনসাধারণের এমন ভোগান্তি নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক। কারণ এ ধরনের ভোগান্তি যাতে না হয়, তা দেখবার জন্য বিভিন্ন স্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা রয়েছেন।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির এক রিপোর্টে বলা হয়, দেশের প্রধান তিনটি হাসপাতালের ১৯ ধরনের যন্ত্রের প্রায় ২৩৮টি চিকিৎসা সরঞ্জাম অচল হয়ে পড়ে আছে। এ যন্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে এক্সরে, এমআরআই, ইসিজি মেশিন, সিটি স্ক্যান, অটোক্লেভ, ডেন্টাল ডিভাইস, অক্সিজেন জেনারেটর প্রভৃতি।

শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে নয়, দেশের বিভিন্ন সেবা খাতে ভোগান্তি, অনিয়ম ও দায়িত্বহীনতার অসংখ্য খবর প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। সাধারণ জনগণ শিকার হচ্ছেন নানা ভোগান্তির। শিক্ষিত জনবল তৈরির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞান সরঞ্জাম, কম্পিউটার, প্রজেক্টর সরকার থেকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এ সব ডিভাইস কিংবা যন্ত্রপাতি অচল হয়ে পড়ে আছে। হয়তো সামান্য মেরামত কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ করলেই এ সব মূল্যবান যন্ত্রপাতি পুনরায় চালু করা যায়। কিন্তু কথায় বলে, “সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল।” দেখা যায়, দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকেই এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম দায়িত্ববোধের পরিচয় দেন না। এ দায়িত্বহীনতার কারণে অনেক শিক্ষার্থী এ সব উন্নত প্রযুক্তির পঠনপাঠন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র তখনই উজ্জ্বল হবে যখন তার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় লোকবল বা মেরামতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

দেশের প্রত্যেক নাগরিক যদি নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে এবং সততার সঙ্গে পালন করেন, তাহলে এ ধরনের নিয়মের বিচ্যুতি কিংবা দায়িত্বহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমরা ক্রমশ বের হয়ে আসতে পারবো। দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট বলেছিলেন, “কোনও কার্য হাসিলের জন্য মানুষের দায়িত্ব পালনের সদিচ্ছা থাকতে হবে।” সুতরাং শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই শেষ কথা নয়, মানুষের নৈতিক উন্নয়নের প্রতিও নজর দিতে হবে। যে বুদ্ধি ও বিবেকের কারণে মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বলা হয়েছে, তার প্রতিফলন সমাজ গঠনে ঘটছে কি না, সে প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের নিজেদেরই করতে হবে। দেখতে হবে বুদ্ধি ও বিবেকের আয়নায়। অন্যথায় মানুষ আর পশুর মধ্যে ফারাক থাকে না। এ ফারাক না থাকবার ফলে আমরা প্রতিনিয়ত তলে পড়ে যাচ্ছি। পিছিয়ে পড়ছে দেশ।

https://www.dailysangram.com/post/534857