৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১০:৩২

এক মণ পাটে চাষির ৫০০ টাকা লোকসান

প্রতি মণ পাট বিক্রি করে চাষির কমপক্ষে ৫০০ টাকা লোকসান হচ্ছে। রংপুর ও চুয়াডাঙ্গার পাট চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা জানান, এখন পুরোদমে পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও বিক্রি শুরু হয়েছে। যাঁরা আগেভাগে চাষ করেছিলেন তাঁদের পাট জাগ দেওয়া শেষে বিক্রি শুরু হয়েছে।

এখনো অনেকের পাট মাঠে। কেউ কেউ জাগ দিয়ে পরিচর্যা করছেন। যেসব কৃষক পাট বিক্রি করতে আসছেন, তাঁরা বাজারে দাম শুনে হতাশ। ব্যবসায়ীরা পাট কিনছেন এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার কুলপালা গ্রামের চাষি সাইদ হোসেন বলেন, তিনি এ বছর এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। মোট খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। পাট পেয়েছেন সাড়ে ছয় মণ।

সদর উপজেলার হানুরবাড়াদী গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে।
বৃষ্টি হয়নি। খরচ আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে।

পাট ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে পাট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ১৬ হাজার ৫৮৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিন বিনতে আজিজ বলেন, কৃষককে বৈরী আবহাওয়ায় পাট চাষ করতে হয়েছে।
এখন পাট জাগ দেওয়ার পানি নেই। এ ক্ষেত্রে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে আঁশ জাগ দেওয়া যেতে পারে। বাজারে এখন পাটের দাম কম, তবে দাম বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এদিকে কয়েক দিন ধরে পাট বিক্রির চেষ্টা করে বারবার পিছপা হয়েছেন রংপুরের অনেক পাট চাষি। কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে হাটে তোলা পাট নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন অনেকে।

পাট চাষি রাজ্জাক মিয়া জানান, পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে বাজার মনিটরিংসহ পাটে ভর্তুকি দিতে হবে।
রংপুরের মমিনপুরের কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, প্রায় এক বিঘা জমিতে পাট আবাদে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক বিঘা জমিতে এবার পাট আবাদ হয়েছে ছয় মণ। কিন্তু বাজারে পাটের দাম প্রতি মণ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। পাঁচ হাজার টাকা লোকসানে ছয় মণ পাট বিক্রি করেছেন তিনি।

সম্প্রতি রংপুরের মিঠাপুকুর হাট, শঠিবাড়ি হাট, সেরুডাঙ্গা বাজার ঘুরে কথা হয় চাষিদের সঙ্গে। বাবুল মিয়া, আলামিন হোসেন, সাদেক আলী ও নাসির উদ্দিন বলেন, পাটে খরচ বেশি, কিন্তু লাভ নেই। অনেকে পাটের আবাদ না করে সরিষা, তামাক, ভুট্টাসহ শাক-সবজি আবাদ করছেন।

রংপুর সদর উপজেলার পানবাজার গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘রিবন রেটিং পদ্ধতিতে এক বিঘায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। আর সনাতন পদ্ধতিতে খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা।’

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পাওটানা হাটে গত মঙ্গলবার এসেছেন কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ ও উলিপুর উপজেলার অনেক পাট চাষি। তাঁরা জানান, দুই সপ্তাহ আগে এই হাটে মানভেদে প্রতি মণ দেশি, তোষা ও মেস্তা জাতের পাট দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মানভেদে সেই পাট বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায়। প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার এই হাটে ৭০০ থেকে এক হাজার মণ পাট বিকিকিনি হয়ে থাকে। গত বছর এই হাটে প্রতি মণ তোষা পাট বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

পাওটানার হাটের ব্যবসায়ী সুকুমার সরকার বলেন, জুট মিলে পাট বিক্রি করতে পারবেন কি না, তারও নিশ্চয়তা নেই। কারণ বড় বড় ব্যবসায়ী ও মালিকরা এক ধরনের সিন্ডিকেট করে পাট কিনে থাকেন। এ ছাড়া পাটকল বন্ধ থাকায় এই খাতের সুদিন হারিয়ে যাচ্ছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারীতে পাটের চাষ হয়েছে ৫২ হাজার ২৫৪ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ২.৫৬ টন। প্রায় ৭৫ হাজার কৃষক পাট চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ‘পাটের আবাদে কৃষকদের আগ্রহ কিছুটা কমে এসেছে। কারণ পাট পচানোর সমস্যা। মাছ চাষ করা পুকুর-জলাশয়ে পাট পচানো সম্ভব হয় না। এই মৌসুমে অন্য ফসলে তুলনামূলকভাবে বেশি আয় করা যায়।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/09/07/1315786