৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১০:২৯

ডলার আছে, নেই

দেশের খোলাবাজারে ডলারের দাম আবারো বেড়েছে। ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের বিনিময় হারের পার্থক্য গত কয়েক মাস কম থাকার পর তা আবারো বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমছে। গতকাল সরকারি ছুটি হওয়ায় অধিকাংশ মানি চেঞ্জার বন্ধ ছিল। রাজধানীর পল্টন এলাকা ঘুরে কয়েকটি মানি চেঞ্জার হাউজ খোলা দেখা গেছে। কোনো হাউজে খোঁজ নিলে বলা হয়, ডলার নেই। আবার কোনো হাউজে স্বল্প পরিসরে কেনাবেচা হয়েছে।

খোলাবাজারে ১১৭ টাকা থেকে ১১৭ টাকা ৭০ পয়সায় ডলার বিক্রি হচ্ছে। যেখানে আগের দিন পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোয় প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ১০৯ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছিল। তবে মানি চেঞ্জাররা বিদেশি মুদ্রার একটি মূল্য তালিকা করেছেন। সেখানে ডলার বিক্রির দাম ১১২ টাকা ও কেনার দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে নিজেদেরই তৈরি করা বিদেশি মুদ্রার এই দাম কেউই মানছে না।
সম্প্রতি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করায় ৭ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি একই কারণে আরও দশ মানি চেঞ্জারের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। একই সময়ে বেশি দামে ডলার বেচাকেনার অভিযোগে ১৩ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তলব করা ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতের। এরমধ্যে একটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে।

এদিকে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স এসোসিয়েশনের (বাফেদা) নির্ধারিত দামে ব্যাংকগুলো ডলার কেনাবেচা করছে। তবে এরমধ্যেই ডলারের খোলাবাজারে দাম বেড়ে এই নতুন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, এবিবি ও বাফেদা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে প্রতি মাসে ডলারের দাম নির্ধারণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১লা আগস্ট তারা রেমিট্যান্সের বিনিময় হার ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে। সে হিসাবে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। আমদানিকারকদের জন্য প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ও রপ্তানিকারকদের জন্য ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তবে খোলাবাজারে নগদ ডলার এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায়। এতে ডলারের দামের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও খোলাবাজারের মধ্যে বড় ব্যবধান তৈরি হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশে ব্যাপকহারে ডলার সংকট দেখা দেয়। পাশাপাশি কমছে প্রবাসীদের পাঠানো ডলারের পরিমাণ। ফলে ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বিদেশি মুদ্রার বাজার গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অস্থিরতার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে।

খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন, এ ব্যবধান অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আসা আরও কমে যেতে পারে। এর বিপরীতে হুন্ডির প্রতি আগ্রহ বাড়বে প্রবাসীদের। কারণ, ডলারের দাম যেখানে বেশি পাওয়া যাবে, প্রবাসীরা সেদিকেই ঝুঁকবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী আগস্ট মাস শেষে দেশের রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৩০৬ কোটি ডলার। এটি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগের সময়ের তুলনায় অনেক কম।

বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে ডলার সংকটে ভুগছে। রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি ডলার আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে প্রবাসী আয়। প্রকট ডলার সংকটের সময় প্রবাসী আয় কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভের ওপর চাপও অব্যাহত থেকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের একই মাস অর্থাৎ আগস্টের তুলনায় প্রবাসী আয় কমছে আরও বেশি হারে। যেমন এবারের আগস্টে প্রবাসী আয় ২১.৫৬ শতাংশ অর্থাৎ ৪৪ কোটি ডলার কম এসেছে। গত বছরের আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত ছয় মাসের মধ্যেই এই আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছে সবচেয়ে কম।

https://mzamin.com/news.php?news=72863