৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৬:২০

রেমিট্যান্সে ছন্দপতন

অর্থনীতিতে অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে। ইতোমধ্যেই রপ্তানি আয়ে ভাটির টান পড়েছে। প্রয়োজনীয় ডলারের অভাবে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। আমদানি ব্যয় মেটানোও বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের বকেয়াও পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এক কথায় জাতীয় অর্থনীতি এখন নানাবিধ সঙ্কটের মুখোমুখি। কিন্তু সহসাই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

দেশের অর্থনীতিতে যখন তীব্র মন্দাভাবে চলছে, তখন আরো একটি দুঃসংবাদের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম প্রধান মাধ্যম প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহ ক্রমেই হ্রাস পেতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই আগের বছরের তুলনায় রেমিট্যান্সে ভাটা পড়ে গেছে। তবে সবচেয়ে কমেছে গত আগস্ট মাসে। বিদায়ী মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরে এসেছিল ২০৪ কোটি ডলার। এ হিসেবে এক মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে সাড়ে ২১ শতাংশ। শুধু তাই নয়, জুলাইয়ের তুলনায়ও আগস্টে কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। যা অর্থনীতিকদের কপালে রীতিমত ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।

রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো মুদ্রা পাচার। এ মুদ্রাপাচার ঠেকাতে না পারলে সামনে আমাদের আরো সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হবে। দেশে যখন ডলার সঙ্কট চলছে তখন বেশি হারে বৈদেশিক মুদ্রা আসার কথা ছিল। কিন্তু হচ্ছে তার বিপরীত। রেমিট্যান্স প্রবাহ না বেড়ে বরং কমে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে তীব্রভাবে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে বৈদেশিক মুদ্রার দায় মেটানো কষ্টকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ডলার সঙ্কট বেড়ে গেলে টাকার মান কমে যাবে। আর টাকার মান কমে গেলে সমপরিমাণ পণ্য আমদানি করতে বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। এতে বেড়ে যাবে মূল্যস্ফীতি।

জানা গেছে, গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে বিদায়ী মাসে অর্থাৎ আগস্টে। যেমন, গত মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.০২ বিলিয়ন ডলার। এপ্রিলে কমে নেমেছিল ১.৬৯ বিলিয়ন ডলার। মে মাসেও আগের মাসের প্রায় সমান অর্থাৎ ১.৬৯ বিলিয়ন ছিল। জুন ছিল ২.২০ বিলিয়ন ডলার। এরপর আবার ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। জুলাইতে রেমিট্যান্স আসে ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর গত আগস্টে কমে নেমেছে ১.৬ বিলিয়ন ডলারে। তবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট অর্থাৎ গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছিল প্রায় ৬ শতাংশ, সেখানে আগস্টে কমেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ২১ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশ থেকে প্রতি মাসেই বিদেশে শ্রমিক যাওয়ার হার বাড়ছে। বিপরীতে বেশি হারে রেমিট্যান্স আসার কথা ছিল, কিন্তু হচ্ছে উল্টো। এর একমাত্র কারণ হলো বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসছে না। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে। এ কারণেই খোলা বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। খোলা বাজারে প্রতি ডলারের বিপরীতে ক্ষেত্র বিশেষ ১১৮ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে। যেখানে আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও আমদানিকারকরা বলছেন, ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে কোনো ব্যাংকেই ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। হুন্ডির কারণেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কম আসছে। এ কারণে গত সপ্তাহে ৭টি মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ১০টি মানি চেঞ্জারের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।

সবচেয়ে বড় কথা হলো দেশে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট ও অস্থিতিশীলতার কারণেই প্রবাসীরা দেশে তাদের উপার্জিত অর্থ নিরাপদ মনে করতে পারছেন না। সঙ্গত কারণেই দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটির টান পড়েছে। সর্বোপরি অবৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার কারণে বৈধপথে রেমিট্যান্স আসা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। আর দেশ থেকে মুদ্রাপাচারের লাগাম টেনে ধরা তো কোনভাবেই সম্ভব হয়নি। এমতাস্থায় দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি ফেরাতে হু-ি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা, বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রণোদনা বৃদ্ধি এবং দেশ থেকে অর্থপাচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। একই সাথে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের একটি যৌক্তিক ও ইনসাফপূর্ণ সমাধান হওয়াও জরুরি।

https://www.dailysangram.info/post/534740