৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১০:৪২

পর্যটক হারাচ্ছে কক্সবাজার

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত শহর কক্সবাজারে ছুটে আসে দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটক। কিন্তু নানা কারণে ক্রমান্বয়ে পর্যটক হারাচ্ছে দেশের পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজার। এতে সরকার পর্যটন খাতে রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কক্সবাজারবাসী। এজন্য অতিলোভী কিছু ব্যবসায়ী, অপরিনামদর্শী কিছু সংবাদকর্মী, কিছু বহিরাগত ব্যবসায়ী ও কিছু আমলাদের দায়ী করা হচ্ছে।

জানা যায়, অতিলোভী ব্যবসায়ীদের গলাকাটা ব্যবসা, পর্যটকদের সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার ও কিছু সংবাদ কর্মীর নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে কক্সবাজারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া এসব অপকর্ম রোধে কিছু আমলাদের কার্যকর কোন পদক্ষেপ না থাকায় পর্যটকরা কক্সবাজারের আকর্ষণ হারিয়ে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্য পর্যটন কেন্দ্রের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী-কুতুবদিয়া এবং নয়নাভিরাম বনবনানি ও সাগরের নীল জলরাশির পাশদিয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক কক্সবাজারের অপরূপ সৌন্দর্য। মহান আল্লাহ প্রদত্ত এই অপার সৌন্দর্য্যে বিমুগ্ধ দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। অতীতে কক্সবাজারের এই সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন লাখ লাখ পর্যটক। কক্সবাজারের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে ইউরোপীয় পর্যটকরা সাগর পথে বিলাসবহুল জাহাজে ভ্রমণ করেছেন কক্সবাজার ও মহেশখালী।

ক্রমাগত পর্যটক চাপে সরকার কক্সবাজার বিমান বন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ ও সক্ষমতা বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পরিণত করেছে। দেড়শত বছরের দাবি দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন সম্প্রাসরণ করা হয়েছে। চলতি সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারে রেল চলাচল শুরু হওয়ার কথা ছিল। সম্প্রতি দক্ষিণ চট্টগ্রামের আকষ্মিক বন্যায় রেললাইনের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা পিছিয়ে যায়। সংশ্লিষ্টদের মতে, খুব দ্রুতই কক্সবাজার দোহাজারী রেল যোগাযোগ চালু হবে। শতাধিক পরিবহণ সংস্থার শত শত বাসে হাজার হাজার পর্যটক আসেন কক্সবাজারে। এসব পরিবহন সংস্থার সাথে যুক্ত হয়েছে বিলাসবহুল বাস-কোচ।

পর্যটনের সুবাদেই কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে ডজন খানেক পাঁচ তারাকা হোটেল। এ ছাড়াও চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ, রেস্ট হাউজ ও সমপরিমাণ খাবার হোটেল-রেস্টুরেন্ট। পাশাপাশি কক্সবাজার, হিমছড়ি, ইনানী, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন সৈকতে চালু হয়েছে ছাতা চেয়ারসহ নানাবিধ পর্যটন কেন্দ্রীক ব্যবসা। এতে করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কক্সবাজারের সামগ্রিক অর্থনীতি। কক্সবাজার কেন্দ্রীক পর্যটন অর্থনীতি ভূমিকা রেখে চলেছে জাতীয় অর্থনীতিতেও।

উল্লেখ্য, গত বছর ‘৪০০ টাকায় আলুভর্তা ডাল ভাত’ বিক্রির বিষয়টি ছিল পরিকল্পিত কক্সবাজার বিরূপ একটি প্রচারণা। এটি ব্যাপকভাবে প্রচার হওয়ায় বড় ধরনের ধাক্কা লাগে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে। তদন্তে এটি ধরা পড়ে বহিরাগত রাস্তার একটি অখ্যাত রেস্তোঁরার ঘটনা। মূলধারার কোনো সংবাদ মাধ্যমে প্রচার না পেলেও বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ কিছু অখ্যাত গণমাধ্যমে অপরিকল্পিতভাবে প্রাধান্য পায়। একইভাবে শালিক, জামান রেস্টুরেন্টসহ কিছু কিছু রেস্টুরেন্ট, হোটেল-মোটেল ও পরিবহনে গলাকাটা ব্যবসা করার অভিযোগ থাকলেও পর্যটন জোনে সীবিচ ম্যানেজমেন্ট নামে প্রশাসনিক যে কমিটি আছে তার কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এছাড়াও হোটেল-মোটেল গেস্টহাউজ-রেস্টহাউজ ও রেস্টুরেন্ট মালিক সমতির সংগঠন থাকলেও তারাও কোন পদক্ষেপ নিতে পারনি।

কক্সবাজারে পর্যটক কমে যাওয়ার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথাও এসেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্যুরিস্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পর্যটন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থতি স্থিতিশীল থাকলেও জেলার অন্যান্য এলাকায় তা উদ্বেজনক। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আবুল কাশেম সিকদার বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যটন স্পট সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভবত ঐ সমস্ত এলাকার কিছু ব্যবসায়ী ও ডেভলপার পর্যটকদের কক্সবাজার বিমুখ করার জন্য কক্সবাজার সম্পর্কে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন কৌশলে এই অপপ্রচারের আশ্রয় নিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, এই অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য চলতি মাসের ২৭ তারিখ পর্যটন দিবসে কক্সবাজারকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপনের জন্য তারা নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আগামী সাপ্তাহিক ছুটিতে ৩০-৪০ ভাগের বেশি বুকিং নেই। এজন্য অবশ্য পর্যটক থাকলেও হোটেল সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটক সংখ্যা কমে গেছে বলেও মনে করেন তিনি।

https://dailyinqilab.com/national/article/600376