৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১০:৪২

ওএমএস’র ট্রাকসেল

খালি হাতে ফিরলেন সোহরাব-তাসলিমা

মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় ওএমএস ট্রাকসেলের এ সপ্তাহের শেষদিন ছিল গতকাল। তাই পরিবারের জন্য কম টাকায় চাল নিতে এসেছিলেন সোহরাব মিয়া। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চাল না পেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ট্রাকের পাল্লা ধরে। কী যেন এক চিন্তা ভর করেছে তার মাথায়। অনেক আকুতি মিনতি করার পরও বিতরণকারীদের কাছে চাল না থাকায় খালি হাতে ঘরে ফিরেছেন তিনি।
ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়োগকৃত ডিলারের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে ওএমএস’এর পণ্য ট্রাকে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহে রবি, সোম ও মঙ্গল এই তিনদিন মোহম্মদপুরবাসীর জন্য ওএমএস’র ট্রাকসেল হয় টাউনহল এলাকায়। সকাল ১০টা থেকে দেয়া হচ্ছে চাল ও আটা। কার্ডধারী একজন ক্রেতা ৩০ টাকা দরে পাবেন ৫ কেজি চাল ও ২৪ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি আটা। এ ছাড়া দুই কেজি ৫৫ টাকা দরে প্যাকেট আটা কিনতে পারবেন ৪ কেজি। সরজমিন দেখা যায় কেউ কেউ বিতরণকারীদের খুশি করে ২ প্যাকেটের জায়গায় ৫ প্যাকেট আটা ভর্তুকি মূল্যে নিয়ে যাচ্ছেন।

আবার কার্ড ছাড়াও শুধুমাত্র ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, ছবি ও মোবাইল নম্বর দিয়ে এই সুবিধা ভোগ করছেন।
সকাল থেকে মোহম্মদপুর টাউনহল এলাকায় ছিল দীর্ঘ লাইন। এরমধ্যে ছিলেন ষাটোর্ধ্ব সোহরাব মিয়াও। হাতের লাঠিতে ভর দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর তার সিরিয়াল যখন এলো, ততক্ষণে চাল শেষ। শুধু আছে আটা। বিতরণকারীর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেও কাজ হয়নি। ট্রাকসেলের দায়িত্বরতরা বলেন, আমাদের বরাদ্দ ছিল ১ টন চাল ও ২ টন আটা। চালের চাহিদা বেশি থাকায় তা আগেই শেষ হয়ে যায়। আমাদের যতক্ষণ মাল থাকবে ততক্ষণ আমরা মানুষকে দিয়ে যাবো। না থাকলে তো আর কিছু করার থাকে না। কিন্তু কিছুতেই যেন মন মানছিলো না সোহরাব মিয়ার। তিনি বলেন, আয় রোজগার ভালো না। গত সপ্তাহে ৫ কেজি চাল নিয়েছিলাম। তাই দিয়ে এ কয়েকদিন চলেছে। গত সোমবারে চাল নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শরীরটা ভালো ছিল না। তাই আজকে এসেছি। কিন্তু আজ চাল পেলাম না। শুধু আটা নিয়ে যাচ্ছি। তাই খালি হাতে বাড়ি যাচ্ছি। এখন বাধ্য হয়ে বাজার থেকে বেশি দাম দিয়ে চাল কিনতে হবে। সোহরাব মিয়ার মতো আরও অনেকেই চাল না পেয়ে শুধু আটা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।

এদিকে রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের গেটের সামনেও সপ্তাহে রবি, সোম ও মঙ্গলবার সকাল থেকে স্বল্পমূল্যে ওএমএস’র চাল, আটা ট্রাকে সেল করা হচ্ছে। গতকাল সেখানেও বরাদ্দ ছিল ১ টন চাল ও ২ টন আটা। বেলা ১টার আগেই সেখানে শেষ হয়ে যায় চাল। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া তেমন কেউই চাল পাননি। বেশির ভাগই ৫ কেজি করে খোলা আটা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। তাসলিমা বেগম নামে এক গৃহিণী কোলে ছোট শিশুকে নিয়ে এসেছিলেন চাল কিনতে। চাল না থাকায় বাচ্চা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। পরে খালি ব্যাগ হাতেই ঘরে ফিরতে হয় তাকে। তারমতো রেশমা, লিয়াকত, আফসানাসহ আরও অনেকেই চাল ছাড়া ঘরে ফিরেছেন। অনেকে আবার চাল না থাকায় শুধু আটা নিয়েই নিজেকে সন্তুষ্ট রেখেছেন।

এ বিষয়ে বিতরণের তদারকির দায়িত্বে থাকা উপ- খাদ্য পরিদর্শক আতাউর রহমান বলেন, সাধারণত চালের বরাদ্দ কম থাকে আর চাহিদা বেশি থাকে। এজন্য আটার আগেই চাল শেষ হয়ে যায়। তবে আমাদের যতক্ষণ পণ্য থাকে ততক্ষণ আমরা মানুষের মাঝে কম মূল্যে বিতরণ করি। মজুত শেষ হয়ে গেলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। এরপরও মানুষের চাহিদা মেটাতে আমরা সপ্তাহে তিন দিন সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

https://mzamin.com/news.php?news=72676