৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১০:২২

সঙ্কটের দোলাচলে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ

এম এ খালেক

দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলেছেন। বিশেষ করে তিনি বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অদূরদর্শিতার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ একটি দেশের অর্থনীতির শক্তি হিসেবে প্রতীয়মান হয়।

বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ কোনো দেশে বিনিয়োগ করা বা ঋণদানের আগে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের অবস্থা প্রত্যক্ষ করতে চান। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বর্তমান সরকার আমলে ঢালাওভাবে গৃহীত বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের সমালোচনা করে বলেছেন, এখন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নয়। এখন দরিদ্র মানুষকে বাঁচানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের সময়। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নের সমালোচনা করে বলেন, রিজার্ভ অর্থ মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ এতে রিজার্ভের পরিমাণ কমে যায়।

তিনি আরো বলেন, এক সময় আমাদের মাঝে আত্মসন্তুষ্টি প্রত্যক্ষ করা গেছে। রিজার্ভ অর্থ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করে গিয়েছিল। সেই অবস্থায় আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগেছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম এই রিজার্ভ অর্থ কখনোই কমবে না। কিন্তু তাদের এই ধারণা যে মোটেও ঠিক নয় তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। দেশ বর্তমানে ক্রমহ্রাসমান রিজার্ভ ঝুঁকিতে রয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো না গেলে আগামীতে দেশ ভয়াবহ রিজার্ভ সঙ্কটে পতিত হতে পারে।

অর্থনীতিবিদ ড.ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দেশের রিজার্ভ অর্থ এবং সার্বিকভাবে অর্থনীতি নিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা নানা কারণেই উল্লেখের দাবি রাখে। ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাধারণত নির্মোহভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করে থাকেন। তার বক্তব্যে দেশের অর্থনীতির একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক ফুটে উঠেছে। একজন সত্যিকার বুদ্ধিজীবীর দায়িত্বই হচ্ছে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সঠিক তথ্য জাতিকে জানানো। তাই ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের বক্তব্য বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, কোনো কিছু নিয়েই অকারণ বাড়াবাড়ি করা বা আত্মতৃপ্তিতে ভোগা উচিত নয়। কারণে এতে পতনের আশঙ্কা থাকে। মনে পড়ে কয়েক বছর আগে যখন প্রবাসী আয় দেশে প্রেরণের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ নগদ আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সেই সময়‘ রেমিটেন্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই সময় কোনো কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতিবিদ শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন এ মর্মে যে রেমিটেন্স প্রবাহের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বেশি দিন বহাল থাকবে না।

তাই আমাদের এখনই এই খাত নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তখন অর্থমন্ত্রী গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তার বক্তব্যে মনে হচ্ছিল এরা বোধ হয় সরকারের সাফল্যে ক্ষুব্ধ হয়ে এমনতর বক্তব্য দিচ্ছেন। আসলে রেমিটেন্সে প্রবাহ কখনোই কমবে না। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য যে কতটা মূল্যহীন ছিল তা ইতিমধ্যেই প্রামাণিত হয়েছে। আসলে আমাদের কিছু কিছু মানুষের মধ্যে এমন একটি প্রবণতা রয়েছে যে, কোনো কিছুতেই সমালোচনা সহ্য করতে পারি না। বর্তমানে রেমিটেন্স প্রবাহের নি¤œমুখী প্রবণতার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কোনো বক্তব্য দিচ্ছেন না। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনীতিবিদদের সমালোচনা বা আশঙ্কাই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে।

একটি দেশের জন্য ‘উচ্চ হারে বিনিয়োগ এবং স্ফীত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ’ হচ্ছে অর্থনীতির সবচেয়ে ভালো অবস্থার নির্দেশক। এমনকি উচ্চ মাত্রায় বিনিয়োগ এবং তুলনামূলক নি¤œ পর্যায়ের রিজার্ভও কাম্য হতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই বিনিয়োগ বিহীন উচ্চ রিজার্ভ কাক্সিক্ষত নয়। কারণ রিজার্ভ অর্থ যদি বিনিয়োগে না আসে তাহলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না। এখন প্রশ্ন হলো, রিজার্ভ অর্থ কিভাবে বিনিয়োগে আসবে? এটা কি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োজিত হবে নাকি ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হতে হবে? যদি সরকারি খাতে বিনিয়োগ হলে ভালো হতো তাহলে তো ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের মতো অর্থনীতিবিদের এ নিয়ে সমালোচনার কোনো প্রয়োজন হতো না।

সরকারি খাতে বিনিয়োগের অর্থই হচ্ছে ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি এবং অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়া। সরকারি জবাবদিহিতা কম থাকে। ফলে সেখানে যারা বিভিন্ন কর্মে যুক্ত হন তারা দুর্নীতির আশ্রয় নিলেও কেউ তা প্রতিরোধ করার থাকে না। রিজার্ভ অর্থ ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা চালাতে হবে। এ জন্য দেশে অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

রিজার্ভ অর্থ থেকে কিছু অর্থ আলাদা করে রেখে তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ হিসেবে প্রদান করা যেতে পারে। আরো ভালো হয়, যদি বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স স্থানীয় সুবিধাভোগীরা বিনিয়োগে নিয়ে আসেন। বিদেশ থেকে প্রতি বছর’ যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা’ রেমিটেন্স হিসেবে আসছে তার বড় অংশই বাড়ি-ঘর নির্মাণ, জমি-জমা ক্রয় এবং ভোগ্য পণ্য ক্রয়ের জন্য ব্যয় করা হয়। কিন্তু এই অর্থ চেষ্টা করলেই কিছুটা হলেও বিনিয়োগে নিয়ে আসা যেতে পারে। কিন্তু সেই উদ্যোগ আমাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। আর সবচেয়ে অসুবিধা হচ্ছে, দেশে বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ নেই বললেই চলে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার এখনো ২৩ শতাংশের মধ্যে সীমিত রয়েছে। অথচ চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) বাস্তবায়নাধীন বাজেটে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার জিডিপি’র ২৭ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিকট অতীতে কখনোই এক বছরের ব্যবধানে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার এক শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়নি। কোনো কোনো বছর ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার কমেছে। তাই এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যেতে পারে যে, চলতি অর্থবছরের জন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জিত হবে না। ব্যক্তি খাতে উৎপাদনশীল’ সেক্টরে বিনিয়োগ প্রত্যাশা মতো না হবার কারণে দেশের অর্থনীতিতে শ্রেণি বৈষম্য এবং সম্পদের সুষম বণ্টন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি সেক্টর হচ্ছে পণ্য রপ্তানি এবং জনশক্তি রপ্তানি খাত। পণ্য রপ্তানি খাত থেকে যে আয় হয় জনশক্তি রপ্তানি খাতের আয়ের পরিমাণ তার প্রায় অর্ধেক। কিন্তু তারপরও জনশক্তি রপ্তানি খাত পণ্য রপ্তানি খাতের চেয়েও বেশি সম্ভাবনাময়। কারণ বাংলাদেশ যেসব পণ্য রপ্তানি করে তার বেশির ভাগ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ পুনরায় বিদেশে চলে যায়। বিশেষ করে তৈরি পোশাক সেক্টরে এই অবস্থা বেশি প্রত্যক্ষ করা যায়। তৈরি পোশাক সেক্টরে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় তার মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০শতাংশ কাঁচামাল আমদানিতে চলে যায়। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে এই খাতের মূল্য সংযোজনের হার তুলনামূলকভাবে কম। অন্য দিকে জনশক্তি রপ্তানি খাতে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় তার প্রায় শতভাগ জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্যসংযোজন করে।

একই সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি খাত দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক অবদান রাখছে। বর্তমানে সোয়া কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান করছে। এরা যদি দেশে থাকতেন তাহলে বেকার সমস্যার কতটা ভয়াবহ আকার ধারন করতো তা সহজেই অনুমেয়। গত বছর বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি করে ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। আর জনশক্তি রপ্তানি করে অর্জিত হয় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পণ্য রপ্তানির ৬০ শতাংশ আয় যদি জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করে তাহলে তার পরিমাণ দাঁড়াবে ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো। আর জনশক্তি রপ্তানি হতে ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হলে তার মধ্যে যদি ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্নভাবে দেশের বাইরে চলে যায় তারপরও জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করবে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

কাজেই যে কোনো বিচারেই পণ্য রপ্তানির (যা মূলত তৈরি পোশাকের উপর নির্ভরশীল) চেয়ে জনশক্তি রপ্তানি বেশি সম্ভাবনাময়। কিন্তু জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের উদাসীনতা রয়েছে। যে কারণে এই খাতের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অনেকেই মনে করছেন, বর্তমানে জনশক্তি রপ্তানি খাত থেকে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে তা প্রকৃত চিত্র নয়। এ খাতের অর্জন আরো অনেক বেশি।

এই প্রেক্ষিতে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উত্থাপিত পারে তাহলে জনশক্তি রপ্তানি খাতের আয় ক্রমশ কমে যাচ্ছে কেনো? প্রথমেই বলা যেতে পারে জনশক্তি রপ্তানি খাতের আয় কমছে এটা মোটেও সত্যি নয়। বরং সত্যি হচ্ছে এটাই যে, জনশক্তি খাতে যে আয় হচ্ছে তা বৈধ পথে দেশে আসছে না। মূলত হুন্ডির মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানি খাতের একটি বড় অংশ দেশে আসছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা কি দেশপ্রেম বিবর্জিত কোনো গোষ্ঠী? তা নাহলে তারা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ প্রেরণ করবেন কেনো? এর সহজ উত্তর হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভ্রান্তিকর নীতির কারণেই হুন্ডি ব্যবসায় উৎসাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ গত শতাব্দির নব্বইয়ের দশক থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসরণ করে চলেছে। কিন্তু মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে মুক্তবাজার অর্থনীতি সুফল দেবার পরিবর্তে কুফলই দিচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির সূত্র মোতাবেক,বাজার চাহিদা এবং যোগানের উপর নির্ভর করেই কোনো পণ্যের মূল্য নির্ধারিত হবে। কিন্তু করতে দেয়া হচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের বিনিময় হার সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করে রেখেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রতি মার্কিন ডলার যে দামে বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারে তার চেয়ে অন্তত ১০ টাকা বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। কথায় বলে, ‘ক্ষুধার্ত মানুষের নিকট নৈতিকতা গৌণ।’ একজন প্রবাসী বাংলাদেশি এক মার্কিন ডলার দেশে প্রেরণ করে যদি ১০০ টাকা পান। আর একই পরিমাণ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে প্রেরণ করলে যদি ১১০ টাকা পান তাহলে কোনো বোকা কি বৈধ পথে তার কষ্টার্জিত অর্থ দেশে প্রেরণ করতে চাইবে? যারা বিদেশে কর্মসংস্থান করেন তারা দেশের বা সমাজের নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তারা চেষ্টা করেন কিভাবে একটি টাকা বেশি পাওয়া যায়। বাজারে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে শুরু করে অনেক সমস্যার জন্য দায়ি হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করে রাখা। আমাদের নীতি নির্ধারকগণ বিষয়টি বুঝেন না তা নয়। তারা জেনে-বুঝেই কিছু মানুষকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানের জন্য এসব করছেন।‘ দেশে মূল্যস্ফীতির হার সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালি অর্থনীতিতেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা (ফেড) গত এক বছরের ব্যবধানে পলিসি রেট ১৩ বার বৃদ্ধি করেছে। পলিসি রেট হচ্ছে‘ সেটাই সিডিউল ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে যে সুদহার চার্জ করা হয়। পলিসি রেট বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে ব্যাংকগুলোর ঋণ গ্রহণের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া। আর বেশি হারে ঋণ গ্রহণ করলে সেই ঋণ উদ্যোক্তাদের নিকট বিনিয়োগের সময় আগের তুলনায় বেশি সুদ চার্জ করা হবে। এতে ঋণ গ্রহণ অধিকতর ব্যয়বহুল হবে। এর অনিবার্য পরিণতিতে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ এই নীতি অনুসরণ করে তাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক বছরের মধ্যে পলিসি রেট তিন বারে এক শতাংশ বাড়িয়েছে। আগে পলিসি রেট ছিল ৫ শতাংশ এখন তা ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর ঋণ দানের ক্ষেত্রে আদায়কৃত সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে রাখার ফলে পলিসি রেট বাড়ানোর আয়োজন বিপরীত ফল দিয়েছে। উদ্যোক্তাগণ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে তুলনায় কম সুদে ঋণ গ্রহণ করতে পেরেছে। এতে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ আগের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। তুলনামূলক কম সুদে ঋণ নিয়ে অনেকেই তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছেন।

এমনকি বিদেশে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজার চাহিদার উপর ছেড়ে না দিয়ে নির্ধারিত করে রাখার ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা হুন্ডির মাধ্যমে তাদের উপার্জিত অর্থ দেশে প্রেরণ করছেন। একই ভাবে পণ্য রপ্তানিকারকগণ বেশি অর্থ পাবার প্রত্যাশায় অর্জিত রপ্তানি আয়ের একটি অংশ হুন্ডির মাধ্যমে‘ দেশে প্রেরণ করছেন বলে অভিযোগ শোনা যায়। মুখের মিস্টি কথায় হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ আগমন কমবে না। এজন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মার্কিন ডলারের বিনিময় হারের উপর থেকে সব ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করতে হবে। এতে স্থানীয়ভাবে টাকার বিনিময় হার আরো অধ:পতিত হতে পারে। কিন্তু হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ দেশে আসা অনেকটাই কমবে। এখনই জরুরি ভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আগামীতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নিয়ে সঙ্কটে পড়তে হতে পারে।

https://www.dailysangram.info/post/534654