৩০ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১২:৪৪

হাওরে অকাল বন্যায় ক্ষতি ১৩ হাজার কোটি টাকা

সাম্প্রতিক অকাল বন্যায় হাওর অঞ্চলের সাত জেলায় গড়ে ৭৫ ভাগ ফসল তলিয়ে গেছে। এতে ২২ লাখ টন ধান হারিয়েছেন হাওরের কৃষক। ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় দুই হাজার টন মাছ এবং ৩০ হাজার হাঁস মারা গেছে। প্রায় এক হাজার টন সবজি নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে অর্থের হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। মাঠ পর্যায়ের জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংগঠন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরবরাহ করা সহায়তাকে অপ্রতুল দাবি করে তা বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। হাওর এলাকার পরিস্থিতি উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ১৮টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কাসমির রেজা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ আইনজীবী সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এএলআরডির প্রধান নির্বাহী শামসুল হুদা প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে কাসমির রেজা বলেন, ফসলহানি, মাছের মড়ক, হাঁসের মৃত্যু, গবাদিপশু পালন জটিলতায় হাওর অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। বাঁচার তাগিদে হাওরের দরিদ্র কৃৃষকরা ভিটাবাড়ি ফেলে শহরমুখী হচ্ছেন। এতে

ভবিষ্যতে কৃষি শ্রমিকের অভাব দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে শহরগুলোতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। আগামী মাসগুলোতে সংকট গভীর থেকে গভীরতর হবে।

তিনি বলেন, মড়কে ডিমসহ মা মাছ মারা গেছে। এতে আগামী কয়েক বছর মাছের সংকট দেখা দিতে পারে। এ জন্য আগামী কয়েক বছর এ অঞ্চলের বিল-হাওরগুলো ইজারা না দিয়ে প্রকৃত জেলেদের মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বন্যার কারণে ফসল, পশু, সম্পদ হারানোর ফলে হাওরে সামাজিক বিপর্যয় এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ গ্রামীণ ঐতিহ্য বিনষ্টের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ভারতের পাহাড়ি ঢলে এই অকাল বন্যা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে ঢলের আগাম তথ্য বাংলাদেশকে জানানোর কথা। তারা তা জানায়নি। এ বিষয়ে ক্ষতিপূরণ আদায়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে যাওয়া যেতে পারে। তবে তিস্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যেভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছে তাতে এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে যাওয়ার মতো নৈতিক সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে কি-না এ প্রশ্ন রাখেন এই পরিবেশ আইনজীবী।

শামসুল হুদা বলেন, সীমান্তের ওপারে বিভিন্ন খনন কাজের কারণে ভারতের নদীগুলো দূষিত হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়, যা বাংলাদেশের হাওরের পরিবেশকেও দূষিত করছে। এ বিষয়ে ভারতের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে। তিনি হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে পৃথক অধিদপ্তর গঠনের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের জন্য স্বল্পমেয়াদি ৮টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো সরকার ঘোষিত স্বল্পমূল্যে চাল-আটা বিতরণ কার্যক্রম আগামী ফসল তোলার আগ পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া, ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রি দুর্গম গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত করা, সরকারি সহায়তা যেন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা পায় তা নিশ্চিত করা, হাওরের জলাশয়গুলো জেলেদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া, কৃষিঋণ ও এনজিওগুলোর ঋণ আদায় বন্ধ রাখা, নতুন করে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া ইত্যাদি।

হাওর সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ১০টি দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। এগুলো হলো_ নদী খনন, কিছু কিছু জায়গায় স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ, বাঁধের মাঝখানে সৃষ্ট গর্ত (খুলফা) আগেই বন্ধ করা, বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম বন্ধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাঁধ সংস্কারের কাজ শেষ করা, ড্রেজার মেশিনে বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটা বন্ধ করা, বাঁধের কাজ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা ইত্যাদি।

http://bangla.samakal.net/2017/04/30/289100