৩০ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১২:২১

নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হবেন

নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) আইনের আওতায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলে মূদ্রাস্ফীতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। আইনটা অনেক ভালো। হলেও ক্ষমতা অপব্যবহারে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হতে পারেন। ব্যবসায়ীরা যদি হয়রানির শিকার হন তা দূর করতে কোনো আইন এখনো হয়নি।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা বিষয়ক এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি আবুল কাসেম খান এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ সময় চেম্বারের অন্যান্য সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আবুল কাসেম খান বলেন, আমরা নতুন ভ্যাট আইন চাই। আমরা চাই ভ্যাট আইন আসুক। ভ্যাট আইনে অনেক ভালো কিছু বিষয় আছে। তবে আমরা ব্যবসায়ীরা দাবি করেছি, ভ্যাটের হার যেন ৭ শতাংশ হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ৭ শতাংশ ভ্যাট চাই। কারণ, আমরা আশঙ্কা করছি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকরে মূদ্রাস্ফীতি হতে পারে। সবক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্য্কর হলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। যেমন- রড কিংবা ভোজ্যতেলে ওপর এখন ভ্যাট নেই। নতুন আইনে ভ্যাট কার্য্কর হবে। আর দ্রব্যমূল্য বাড়লে চাহিদা কমে যেতে পারে। এর প্রভাবে উৎপাদকারী তার উৎপাদন কমিয়ে দেবে। এতে অর্থনীতির পরিসর অপেক্ষাকৃত ছোট হতে পারে। এজন্য আমরা ৭ শতাংশ ভ্যাটের দাবিতে শেষ পর্যন্ত ফাইট করব।

নতুন আইন বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের হয়রানি বাড়তে পারে, এ আশঙ্কা প্রকাশ করে আবুল কাসেম খান বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুবিধা আছে। কারণ, আইনটা অনেক ভালো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ক্ষমতা অপব্যবহারে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হতে পারেন। ব্যবসায়ীরা যদি হয়রানির শিকার হন তা দূর করতে কোনো আইন এখনো হয়নি।
তিনি আরো বলেন, এনবিআর বলছে, ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) মেশিন ব্যবহারে হয়রানি ও হিসাবের ঝামেলা অনেকটা কমে যাবে। কিন্তু আমাদের এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যাদের ইসিআর মেশিন বসানোর মতো জায়গাও নেই। তাদের কী হবে?
আবুল কাশেম বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৩০ শতাংশের বেশি অবদান রাখে অতিক্ষুদ্র এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) খাত। বেসরকারি খাতের ৭৫ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই ক্ষুদ্র ও মাঝারি। দেশের কর্মসংস্থানের ৭৫ শতাংশ হয় এমএসএমই খাতে। শিল্প খাতের চাকরির ৮০ শতাংশই এমএসএমইভিত্তিক। অথচ নতুন ভ্যাট আইনে খুচরা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ফলে এসএমই ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে আগামী (২০১৭-১৮) অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার দাবি জানিয়েছে ডিসিসিআই।

একই সঙ্গে নারী ও বয়স্ক (৬৫ বৎসর) করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা এবং প্রতিবন্ধী করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। আয়কর সীমা বাড়ানোর বিষয়ে ডিসিসিআইয়ের যুক্তি হচ্ছে, বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো প্রায়োজন।
ডিসিসিআই সভাপতি প্রস্তাবনায় আরো বলেন, নিট সম্পদের ওপর আরোপিত সারচার্জের হার ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করছি। এ ছাড়া নন-পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানির করপোরেট করহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার প্র্স্তাব, পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে করপোরেট করহার অন্যান্য লিমিটেড কোম্পানির মতো সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ প্রস্তাব করছি। ব্রোকারেজ এসোসিয়েশনের ক্ষেত্রে করপোরেট করহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩২ শতাংশ ও কোম্পানির লভ্যাংশ আয়ের ওপর আরোপিত করহার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।
ডিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়, বড় ব্যবসায়ীদের বর্তমানে টার্নওভার ট্যাক্স লিমিট বর্তমানে ৮০ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার শূন্য থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত ও ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি ২০ লাখ পর্যন্ত ৩ শতাংশ করা হোক। এ ছাড়া প্রত্যেক ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন হোল্ডারদের সরকারি খরচে ইসিআর মেশিন স্থাপনসহ ভ্যাট স্মার্ট কার্ড সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়।

http://www.dailysangram.com/post/281940