৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার, ১০:২৯

আকাশ ছুঁয়েছে ডলারের দাম

দেশে তীব্র ডলার সঙ্কট চলছে বেশ আগে থেকেই। আর এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার আপাত কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বরং যতই দিন যাচ্ছে সার্বিক পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। ব্যবসায়িরা প্রয়োজনীয় ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছেন না। বিদেশী ব্যাংকগুলোর ঋণ শোধ নিয়ে বড় ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেশে আমদাান নির্ভর পণ্যের তীব্র সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গত কারণেই দামও বেড়েছে আগামহীনভাবে।

মূলত, ডলালের বাজারে অস্থিরতা চলছে দীর্ঘদিন থেকেই। দফায় দফায় ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে তা এখন আকাশ ছুঁয়েছে। সঙ্গত কারণেই হচ্ছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বাড়ছে। ফলে চাপ পড়ছে জাতীয় অর্থনীতির ওপর। সরকার এই জটিলতা সমাধানে বারবার আশ^াস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বরং সার্বিক পরিস্থিতি দিনের পর দিন অবনতিই হচ্ছে। ফলে জনজীবন ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। কিন্তু এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।

সাম্প্রতিক এক ঘোষণার মাধ্যমে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। বিষয়টিকে অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত হিসাবেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এর ফলে পণ্য আমদানিতে ব্যয় বাড়বে। তবে রপ্তানিকারকেরা প্রতি ডলারে আগের চেয়ে বেশি টাকা পাবেন। ডলারের নতুন দর আগামী ৩ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) গত বৃহস্পতিবার এক সভায় ডলারের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগে আমদানি দায় মেটানোর জন্য ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছে প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করছিল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পণ্য বা সেবা রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কেনায় ডলারের দাম হবে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আগে ব্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবাসীদের প্রতি ডলারের জন্য ১০৯ টাকা এবং রপ্তানিকারকদের প্রতি ডলারের জন্য ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দিয়ে আসছিল।

মূলত, দীর্ঘ মেয়াদে চলা করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সঙ্কট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সঙ্কট আরও বেড়ে যায়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এর পর থেকেই সংগঠন দুটি মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে এই দুই সংগঠন।

দেশে তীব্র ডলার সঙ্কট ও মূল্য ক্রমবর্ধমান হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক লেনদেন ও বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। যা জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। অবনতি হয়েছে রিজার্ভ পরিস্থিতিরও। এমতাবস্থায় অনতিবিলম্বে ডলারের ক্রমবর্ধমান মূল্যের লাগাম টেনে ধরে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা না হলে আগামী দিনে অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই সময় থাকতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

https://www.dailysangram.info/post/534403