১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৭:৩৫

আলু, শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে, কমেছে ইলিশের

পেঁয়াজের বাজার স্থির না হতেই বাড়ছে আলু ও শুকনা মরিচের দাম। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে আলুর দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। মানভেদে শুকনা মরিচে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে ইলিশের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম, পেঁয়াজ, রসুন ও সবজি।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবজির দাম বাড়তি থাকায় আলুর ওপর চাপ বেড়েছে। এতে আলুর দাম বাড়ছে।
মাছ বিক্রিতারা বলছেন, এখন বাজারে ইলিশ মাছ বিক্রি কমেছে।
এ কারণে দামও কিছুটা কমেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার, রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ডায়মন্ড আলু। এর দাম বেড়ে এখন কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে আলুর কেজি ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।

দেশি ও আমদানিসহ বাজারে তিন ধরনের শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে শুকনা মরিচ। দেশি জাতের পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০, ভারতের পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দেশি ও আমদানীকৃত রসুন ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কেরালা জাতের আদা ২২০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ফার্মের ডিম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। কয়েকটি সবজির দাম কমলেও বেশির ভাগ সবজির দাম বাড়তি। সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। চিকন মসুর ডাল ১৪০ ও মোটা মসুর ডাল ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি ১৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত আখের (লাল) চিনির কেজি ১৫০ টাকা।

রাজধানীর শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মাজেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, পাইকারিতে নতুন করে এখন আর পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। ভারতের পেঁয়াজ ৫৮ থেকে ৬২ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর বাড্ডার ভাই ভাই স্টোরের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পাইকারি বাজারে আলুর দাম বস্তায় (৬০ কেজি) ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এ কারণে এখন খুচরায় ৫০ টাকার নিচে আলু বিক্রি করা যাচ্ছে না। পাইকারিতে শুকনা মরিচের দাম কেজিতে ৫০ টাকার মতো বেড়েছে। আগে যে শুকনা মরিচ ৩৫০ টাকায় বিক্রি করেছি, তা এখন ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। যে শুকনা মরিচ ৪৫০ টাকায় বিক্রি করেছি, তা এখন ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই বাজারে একটু একটু করে রসুনের দাম বাড়ছে। দেশি রসুন কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। আমদানি রসুন ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’

আলুর দাম বৃদ্ধির চিত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরেও দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানটি গতকালের বাজারদরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহে আলুর দাম কেজিতে ৮-১৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের ঢাকা রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. সায়েম কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে চালের দামে কোনো পরিবর্তন নেই, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে মিনিকেট চাল ৬৪-৬৫ টাকা ও মোটা চাল (ব্রি-২৮) ৫২-৫৩ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

দাম কমেছে ইলিশের
সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে কেজিতে ইলিশের দাম কমেছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা, এক কেজির ইলিশ এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা, ৮০০ গ্রামের ইলিশ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা ও ৫০০ গ্রামের ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের ইলিশ বিক্রেতা মো. হৃদয় কালের কণ্ঠকে বলেন, মানুষজন ইলিশ কম কেনার কারণে বাজারে দাম কিছুটা কমে গেছে। তবে বাজারে ইলিশের সরবরাহ আগের মতোই আছে।

সবজির বাজার
রাজধানীর বাজারে সবজির সরবরাহ কমার কথা বলে বেশ কিছু সবজি বাড়তি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কিছু সবজির দাম কমেছে। ভালো মানের গোল বেগুন ১০০ ও লম্বা বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। করলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, শিম ২০০ টাকা, টমেটো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, বরবটি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ ও পেঁপে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চালকুমড়া প্রতিটি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাড্ডার সবজির বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আবুল কাশেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সবজির সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তি। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় এখন কিছু সবজির দাম কমেছে। আগের সপ্তাহে গোল বেগুনের কেজি ছিল ১২০ টাকা, এখন ১০০ টাকা; করলা বিক্রি করেছিলাম ১০০ টাকা, এখন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’

রাজধানীর বাড্ডার একটি গাড়ির গ্যারেজের কর্মী মো. হাবিবুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সবজির দাম বাড়তি থাকায় আলুর ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিলাম। ধাপে ধাপে দাম বেড়ে এখন আলুর কেজিও হয়ে গেছে ৫০ টাকা। এখন বাজারে একটি পণ্যও আমাদের নাগালের মধ্যে নেই। আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/09/01/1313924