১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৭:২৬

আগস্টে ডেঙ্গুতে ৩৪২ জনের প্রাণহানি হাসপাতালে ভর্তি ৭২ হাজার

একদিনে আরও ১৭ জনের মৃত্যু

ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমছে না। দিন যত যাচ্ছে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিল তত দীর্ঘ হচ্ছে। একদিনে আরও ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। চলতি আগস্টে মৃত ৩৪২ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭১ হাজার ৯৭৬ জন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯৩ জনে। দেশে ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রোগী মৃত্যু ও শনাক্তে পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৩০৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৫৮ হাজার ২১ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬৫ হাজার ৭৮৭ জন। মৃত ৫৯৩ জনের মধ্যে নারী ৩৪৫ জন এবং পুরুষ ২৪৮ জন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে ১৫৫ জন এবং রাজধানীতে ৪৩৮ জন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৩০৮ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৭৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৪৩৩ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ২ হাজার ৩০৮ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৭৮ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৮১৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪ হাজার ৫৬১ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ আক্রান্ত ৭৬ হাজার ৮৬৫ জন এবং নারী ৪৬ হাজার ৯৮৩ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৭ জন।

অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন।
আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন শনাক্ত এবং প্রাণহানি ৩৪২ জনের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায় নেই।

ঢাকার ২ হাসপাতালে মৃত্যু শতক ছাড়াল
দেশে এখন ডেঙ্গুতে মৃত্যুর গড় হার শূন্য দশমিক ৫। গতকাল পর্যন্তও ঢাকায় মৃত্যুহার ছিল শূন্য দশমিক ৭। আজ এটি হয়েছে শূন্য দশমিক ৮। অপর দিকে ঢাকার বাইরে এখন মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ২। গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মারা গেছেন ৭ জন। এই হাসপাতালে আজ পর্যন্ত মারা গেছেন ১০১ জন। গতকাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৯৪। ঢাকার আরেকটি হাসপাতাল মুগদা হাসপাতালে আজ মৃুত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০০। গতকাল পর্যন্ত এ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে ৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
ডেঙ্গু সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছা নিয়ে মতভিন্নতা থাকলেও কবিরুল বাশার ও মুশতাক হোসেনের অভিন্ন উদ্বেগ এবারের পরিস্থিতি নিয়ে। কারণটি হলো, ঢাকার বাইরে বিপুল সংক্রমণ। গতকাল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, ঢাকার চেয়ে বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার বেশি। কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু এখন গ্রাম পর্যন্ত চলে গেছে। আর এ কারণে এবার সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
ডেঙ্গু সংক্রমণের সাম্প্রতিক গতি নি¤œগামী হলেও বিপদ কেটে গেছে, তা বলতে রাজি নন জনস্বাস্থ্যবিদ বে–নজির আহমেদ। তিনি বলেন, করোনার ক্ষেত্রে এটা বলা সহজ ছিল। কারণ, সেখানে বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে সংক্রমণ হলে গণ রোগ প্রতিরোধ (হার্ড ইমিউনিটি) ক্ষমতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এমনটি বলা যায় না।

বে–নজির আহমেদের মতে, ডেঙ্গুর চারটি ধরন আছে। কোনটি কোন সময় বেড়ে যাচ্ছে, সেটা বিচার্য বিষয়। আবার এর সঙ্গে মশার বিস্তারের বিষয়টি জড়িত আছে। আছে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি। থেমে থেমে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়লে ডেঙ্গুও বাড়বে। তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী ছড়িয়ে গেলেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে শক্ত সামাজিক সম্পৃক্ততা করা গেল না। এটি আমাদের ব্যর্থতা। কিন্তু ভবিষ্যতের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে সামাজিক সম্পৃক্ততা জোরদার করতেই হবে।’

https://www.dailysangram.info/post/534228