৩১ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৩

তৈরী পোশাক শিল্প নিয়ে সিপিডি

তদারকিহীন ঝুঁকিপূর্ণ ৮৫৬টি কারখানা

দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ৮৫৬টি কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো কোনো ধরনের মনিটরিংএ নাই। এগুলোকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। রানাপ্লাজা দুর্ঘটনার পর গত ১০ বছরে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে অনেক কাজ হলেও তা পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েই গেছে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কোনো কারখানা অ্যাসোসিয়েশনের বাইরে থাকতে পারবে না। কেননা এসব কারখানায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায়ভার কে নেবে? বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ ওই কারখানার দায়ভার নেবে না। আমরা চাই সব কারখানা যেন কোনো না কোনো সংগঠনের সাথে দায়বদ্ধতায় থাকে। তিনি বলেন, কারখানাতে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামাদি কেনার ক্ষেত্রে মালিকরা অর্থবিনিয়োগ করতে চায় না। এসব স্থাপনে উচিত সরকারিভাবে মনিটরিং প্রতিষ্ঠানগুলোর কঠোর হওয়া।

ধানমন্ডির সিপিডি কার্যালয়ে গতকাল ‘তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা : অর্জন ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ মন্তব্য করেন। ব্রিফিংএ বক্তব্য রাখেন. সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও সিনিয়র রিসার্চ এসোসিয়েট তামীম আহমেদ।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে রফতানিমুখী শিল্পকারখানায় গত কয়েক বছরে অগ্নি দুর্ঘটনা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০২০ সালে ১৭৭টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। গত বছর সেটি বেড়ে হয়েছে ২৪১টি। অন্যদিকে রফতানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা এখনো শূন্যে নামেনি। ২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ১৩ জন পোশাকশ্রমিক। আর গত বছর মারা গেছেন চারজন। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড এবং উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ শুরু করে। অ্যাকর্ড চলে যাওয়ার পর দায়িত্ব নেয় আরএমজি সাসটেইনিবিলিট কাউন্সিল (আরএসসি)। অন্যদিকে অ্যালায়েন্সের দায়িত্ব নেয় নিরাপন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আরএসসির অধীনে বর্তমানে ১ হাজার ৮৮৭টি কারখানা রয়েছে। আর নিরাপনে আছে ৩২০টি কারখানা। তবে বর্তমানে দেশে নিরাপনের কোনো কার্যক্রম নেই।

ব্রিফিং-এ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে এখনো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি রয়েছে। আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিলের (আরএসসি) আওতায় এক হাজার ৮৮৭টি কারখানা মনিটরিংয়ের মধ্যে রয়েছে। আর নিরাপদ হিসেবে ৩৫০টি কারখানা শনাক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেলের (আরসিসি) আওতায় ৬৫৯টি কারখানা মনিটরিংয়ের আওতায় রয়েছে। সব মিলিয়ে ২ হাজার ৮৯৬টি কারখানা আরএসিসি ও আরসিসির মনিটরিংয়ে রয়েছে। কিন্তু ৮৫৬টি কারখানা বর্তমানে কোনো মনিটরিংয়ের আওতায় নেই। কিভাবে এসব কারখানাকে নিরাপত্তার আওতায় আনা যায় সেদিকে চোখ রাখা উচিত। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, তদারকিহীন ৮৫৬টি পোশাক কারখানা অপ্রচলিত বাজারে তৈরি পোশাক রফতানি করছে। এসব কারখানার কোনোটিতে দুর্ঘটনা ঘটলে পুরো পোশাক খাতের ওপর নতুন করে চাপ তৈরি হবে।

তিনি বলেন, তাহলে ওই কারখানাগুলো মনিটরিং কে করবে? এই তিনি বলেন, সংখ্যাটি দিন দিন বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা মোট কারখানার ২২ থেকে ২৩ শতাংশ। মনিটরিং না হলে ভবিষ্যতে ৩০ শতাংশ হতে পারে। কারখানাগুলোকে তদারকির মধ্যে আনতে হবে। আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি) যে কাজগুলো করছে তা গুরুত্বপূর্ণ। তবে তাদের কার্যক্রমের আরো স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতার মধ্যে আনারও দাবি জানিয়েছে সিপিডি।

সিপিডি বলছে, ২০২৩ সালে রানাপ্লাজা ধসের ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই বিপর্যয় পরবর্তী এক দশকে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স গঠন। আর তাদের পরিচালিত কার্যক্রম কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা তদারকির ক্ষেত্রে শক্তিশালী দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পরিচালিত কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অ্যাকর্ড আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানসহ অন্যান্য পোশাক সরবরাহকারী দেশগুলোতে প্রোগ্রামটি পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা তদারকিতে এই বিশেষ অগ্রগতির পরও অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার পর নতুন উদ্যোগগুলোর অর্জন ধরে রাখার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএসইউ অধীনে থাকা ৬৭৯ কারখানার ত্রুটি সংশোধন কাজ হয়েছে মাত্র ৫৪ শতাংশ। মাত্র একটি কারখানা শতভাগ ত্রুটি সংশোধন কাজ শেষ করেছে। অন্যদিকে আরএসসির অধীনে থাকা ১ হাজার ৮৮৭ কারখানার ত্রুটি সংশোধন কাজ শেষ হয়েছে ৯১ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত এপ্রিল পর্যন্ত ১ হাজার ৩১৭ কারখানা ত্রুটি সংশোধন করেছে ৯১-১০০ শতাংশ। ত্রুটি সংশোধনের কাজ এগোলেও অগ্নি নিরাপত্তায় ব্যবহৃত ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি স্থাপনে কারখানাগুলোর মধ্যে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে আরএসসির ফলোআপ পরিদর্শন ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

করনীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে সিপিডির ড. মোয়াজ্জেম বলেন, পোশাক শিল্পের জন্য ডিআইএফইকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করা খুবই প্রয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলোকে বন্ধ করে দিতে বা উৎপাদন কাজ স্থগিত রাখার মতো আইনি ক্ষমতা ডিআইএফইকে দেয়া দরকার।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/773792