২১ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, ৬:২৮

শুল্ক আরোপের খবরে রাতারাতি বাড়ল পেঁয়াজের দাম

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই বাংলাদেশে পণ্যটির বাজারে হঠাৎ অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। শুল্কযুক্ত দামের পেঁয়াজ এখনো আমদানি না হলেও দেশের বাজারে একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি অন্তত ২০ টাকা বেড়ে গেছে। বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাবে হঠাৎ এমন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন সরবরাহ কম থাকায় পণ্যটির দাম বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এতদিন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে কোনো শুল্ক দিতে হতো না বাংলাদেশকে। গত শনিবার হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় দেশটি। দেশটির বাজারে পেঁয়াজের দামের নাগাল টানতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানানো হয়। গতকাল রোববার থেকে এটি কার্যকর হয়ে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, শুল্ক আরোপের ঘোষণাতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের স্বভাব এমনই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি দামের পণ্য দেশে আসার আগেই দাম বাড়িয়ে দেন তারা। আবার কোনো সময় দাম কমলেও পণ্য এখনো আসেনি বলে দাম কমাতে চান না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সবশেষ ভারত থেকে ৩৮ থেকে ৪৬ টাকায় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। শুল্ক আরোপের পর কেজি প্রতি ৫৩ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়বে।

এদিকে ভারত থেকে এখনো বাড়তি দামে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেননি ব্যবসায়ীরা। তারপরও কেবল শুল্ক আরোপের খবর শুনেই দেশের বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শনিবার দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪৬ থেকে ৫০ টাকা। রোববার বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা দোকানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার বাজারগুলোতেও একই অবস্থা। গত শনিবার যে পেঁয়াজের কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা ছিল সেই পেঁয়াজ এখন ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ির পাইকারি বাজারের একাধিক আড়তদার বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন গোডাউনে পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। একই কারণে বাজারে কয়েকদিন গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। এতে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বাড়তির দিকে।

হিলিতে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা
হিলি সংবাদদাতা জানান,বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত সরকার। গতকাল রোববার থেকে এই নতুন শুল্ক কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা। এতে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকলেও দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।

এর আগে শনিবার রাতে ভারত সরকারের ডেপুটি সেক্রেটারি অমরিতা তিতুস স্বাক্ষরিত এক নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এই শুল্ক আরোপের বিষয়টি জানানো হয়। গতকাল থেকেই শুরু হয়ে এই শুল্ক আরোপ চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

গতকাল হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার যে ইন্দো খারাপ মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা আজ সেই পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর নাসিক পেঁয়াজ শনিবার ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে সেই পেঁয়াজ ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক রাতের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ জানান, শনিবার রাত সোয়া ৮ টার দিকে ভারতীয় রফতানিকারকরা একটি নোটিফিকেশন পাঠিয়েছেন। তাতে জানানো হয়েছে, পেঁয়াজ রফতানির ক্ষেত্রে ভারত সরকার ৪০ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছে। এতদিন শুল্কমুক্ত পণ্য হিসেবে রফতানি হলেও রোববার থেকেই নতুন এই শুল্ক পরিশোধ করে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি করতে হবে। নতুন এই শুল্ক আরোপের ফলে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকলেও দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
পূর্বের এলসি করা পেঁয়াজ শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৪১টি ট্রাকে এক হাজার ২০৬ টন, গতকাল রোববার ৭টি ট্রাকে ২০১১ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে এ বন্দর দিয়ে।

https://dailyinqilab.com/national/article/596360