২০ আগস্ট ২০২৩, রবিবার, ১০:৫৪

মশা মারার নতুন ওষুধ নিয়ে প্রতারণার শিকার ডিএনসিসি

মশার লার্ভা নিধনের জৈব কীটনাশক বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) আমদানিতে প্রতারণার শিকার হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল এগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ওই ওষুধ সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানি থেকে এনেছে দাবি করলেও তা ওই কোম্পানি থেকে আনা হয়নি। এ ছাড়া লি কিয়াং নামে একজনকে বিটিআই এক্সপার্ট ও রফতানি ব্যবস্থাপক বলে ডিএনসিসিতে আনা ব্যক্তিও দাবিকৃত বেস্ট কেমিক্যালের কর্মচারী নন। এমন প্রতারণা ধরা পড়ার পর মার্শাল এগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ডিএনসিসি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলারও প্রস্তুতি নিচ্ছে সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া বিটিআই আমদানিতে উত্থাপিত জালিয়াতির অভিযোগ ও টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সার্বিক বিষয় তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএনসিসি। শুক্রবার এ বিষয়ে ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকের স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রমে ব্যবহৃত কীটনাশক সরবরাহ কাজে (দরপত্র আইডি-৮১৩৮৩৪) সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্টিজ লি:’ সরবরাহকৃত পাঁচ হাজার কেজি বিটিআই বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি:, সিঙ্গাপুর এর উৎপাদিত এবং তাদের কাছ হতে সংগ্রহ করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সরবরাহকৃত বিটিআই বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি:, সিঙ্গাপুর এর উৎপাদিত এবং সরবরাহকৃত নয় মর্মে ওই কোম্পানির ফেসবুক পেজে সম্প্রতি একটি পোস্ট দেয়া হয়। এর পরই নড়েচড়ে বসে ডিএনসিসি। সরবরাহকৃত বিটিআই বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি:, সিঙ্গাপুর এর উৎপাদিত এবং সরবরাহকৃত কি না অবিলম্বে এ সংক্রান্ত সব প্রমাণ দাখিলসহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি:’কে পর পর দুটি চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা জানতে চায় ডিএনসিসি। গত ১৭ আগস্ট মার্শাল এগ্রোভেটের পাঠানো জবাব নিয়ে মশক নিধন কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি কারিগরি ও যাচাই কমিটি ওই দিনই বৈঠকে বসে। সভায় পর্যালোচনা করে কর্মকর্তারা দেখতে পান, সরবরাহকৃত বিটিআই পণ্যটি যে বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি: সিঙ্গাপুর এর উৎপাদিত এবং সরবরাহ করা হয়েছে এর স্বপক্ষে মার্শাল এগ্রোভেটের কোনো প্রমাণ দাখিল করতে পারে নাই।

এর পরও অধিকতর তদন্তের জন্য ডিএনসিসির ভাণ্ডার ও ক্রয় বিভাগের দাফতরিক ই-মেইল থেকে সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি:-এর সাথে যোগাযোগ করা হয়। তখন তারা জানান, বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি: সিঙ্গাপুর থেকে মার্শাল এগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে বিটিআই সরবরাহ করা হয়নি এবং মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ওই প্রতিষ্ঠানের নিযুক্ত পরিবেশকও না। এ ছাড়া মার্শাল এগ্রোভেট লি কিয়াং যিনি বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিটিআই এক্সপার্ট ও রফতানি ব্যবস্থাপক বলে দাবি করেছেন, তিনি বেস্ট কেমিক্যালের কর্মচারী নন। এভাবে প্রতারণা ধরা পড়ার পর ‘মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি:’কে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সব কার্যক্রমে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ডিএনসিসি।

এ ছাড়া বিটিআই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল এগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ডিএনসিসি। এ দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মশা নিধনের ব্যাকটেরিয়া আমদানিতে উত্থাপিত জালিয়াতির অভিযোগ ও টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সার্বিক বিষয় তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএনসিসি। আদেশে উল্লেখ করা হয়, তদন্ত কমিটি আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন এবং ওই কমিটিকে স্বাস্থ্য বিভাগ সব সাচিবিক সহযোগিতা প্রদান করবে।

এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসি মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম বলেন, বিটিআই আমদানিতে প্রতারণায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ডিএনসিসির সম্মানহানি করায় প্রতারক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার জিরো টলারেন্স। জালিয়াতির অভিযোগ ও টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সার্বিক বিষয় তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িত সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/771152