১৯ আগস্ট ২০২৩, শনিবার, ৭:৫৪

সবজি ও মাছের বাজারে অস্থিরতা চলছেই

একের পর এক নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা লেগেই আছে। গত সপ্তাহে ডিমের বাজারে অস্থিরতা ছিল, এ সপ্তাহে ডিমের দাম কিছুটা কমে আসার পর অস্থিরতা দেখা দিয়েছে সবজি ও মাছের বাজারে। প্রায় সব ধরনের সবজিই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। মাছ-গোশতের দামও লাগামহীন। এ সপ্তাহে সবজির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বাজারে ৬০ টাকার কমে কোনো সবজি মিলছে না। অন্যদিকে মাছের বাজারে কম দামি হিসেবে পরিচিত পাঙাশের কেজি এখন ২৫০ টাকা। ৩৫০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো মাছ। এদিকে বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে রসুন। ক্রেতারা বলছেন, এভাবে দ্রব্যমূল্য যদি ঊর্ধ্বমুখী হতেই থাকে তাহলে তাদের টিকে থাকা কঠিন থেকে কঠিনতর হবে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এ আলুর দাম ছিল ৪০ টাকা। বেগুনের দামও বেড়েছে। বড় আকারের কালো বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। করলার দাম ছুঁয়েছে ১০০ টাকা কেজি। দরদাম করে নিলেও ৯০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আর এ গ্রীষ্মের সবজি ঢ্যাঁড়শ ও পটলের কেজি ৬০-৭০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। শসা ৮০-১২০ টাকা, উচ্ছে ১০০, পেঁপে ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, গাজর ১০০-১৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০-৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ কেজি। লাউ ৭০ টাকা, চাল কুমড়া ৭০-৮০ টাকা পিস। কাঁচাকলা ৩০ টাকা হালি এবং টমেটো ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সস্তার সবজি হিসেবে পরিচিত পেঁপের কেজিও ৪০ থেকে ৬০ টাকা।
গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ টাকা। আবার কয়েকটি সবজির দাম কমেছে। গত সপ্তাহে উচ্ছে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়, যা আজকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে গাজর ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, আজ ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুরমুখী ও বরবটি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজিতে, যা এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৮০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা, দেশী আদা ২০০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ার আদা ২২০ টাকা, চায়না রসুন ২৩০, দেশী রসুন ২৪০ টাকা, আলু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে দেশী ও চায়না রসুন দুটোই বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা কেজিতে। একই রসুন বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ২৪০ ও ২৩০ টাকা কেজিতে।

রসুন বিক্রেতারা জানান, রসুনের দাম বাড়ছে। প্রতি বছর এই সময়ে রসুনের কেজি থাকে ১০০-১২০ টাকা। এবার সেই দাম নেই। দ্বিগুণ দামে রসুন বিক্রি হচ্ছে।

তবে গত সপ্তাহের সবচেয়ে আলোচিত পণ্য ডিমের দাম তিনদিনের ব্যবধানে হালিতে ৫ থেকে ৭ টাকা কমেছে। প্রতি ডজনে কমেছে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত। এখন ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়, যা ১৮০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

এছাড়া বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকা, কক মুরগি ২৯৫-৩২৫, দেশী মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর গোশত ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ক্রেতারা মাছ কিনতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। নদী ও হাওড়ের মাছ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। চাষের মাছও এখন বেশ চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে এক কেজি ছোট ও মাঝারি আকারের পাঙাশের দাম ছিল ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, সেই পাঙাশ এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। দাম বেড়ে তেলাপিয়া মাছের কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। মাঝারি ও বড় মানের তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। অন্যদিকে, এক কেজি ওজনের চাষের রুই-কাতলা মাছের দাম হাঁকানো হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি। ইলিশ মাছ ১৫০০-২০০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ১০০০-১৬০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকা, টেংরা মাছ ৮৫০ টাকা, কৈ মাছ ৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫৫০ টাকা, শিং মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, বোয়াল ৬৫০-৭৫০ টাকা, বেলে মাছ ৭০০-১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, মুদিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে কাটছে না চিনির সংকট। বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। দোকানিরা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন চিনি। এখনো প্যাকেট চিনি পাওয়া যাচ্ছে না অধিকাংশ দোকানে। তবে কমেছে সয়াবিন তেলের দাম। ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়, যা ছিল ১৭৯ টাকা। এছাড়া চিনি ১৩৫ টাকা, মসুরের ডাল ১২৫ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, খেসারি ডাল ৭০ টাকা, বুটের ডাল ৮৫ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমছে না
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে বিভিন্ন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমছে না। এতে বাজার করতে আসা মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত, চাকরিজীবী, শ্রমজীবী মানুষকে হিমসীম খেতে হচেছ। তাদের অভিযোগ, বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নজরদারী প্রয়োজন। কিন্তু তা কার্যত হচ্ছে না।

গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম মহানগরীর কাজীরদেউড়ী বাজার, রেয়াজউদ্দিন বাজার, বক্সিরহাট ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে আদা, রসুন, পেঁয়াজের দাম বেশ চড়া। কমেনি ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম। স্থিতিতে রয়েছে সবজি ও মাছের বাজার। প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যসব পণ্যের দাম। গতকাল শুক্রবার পেঁয়াজ কেজি-৬৫ টাকা, আদা কেজি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা, রসুন কেজি ২১০ থেকে ২১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে।

এদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১৬৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৩১০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা। বাজারে লেয়ার মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজনপ্রতি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। তাছাড়া বাজারে খাসির মাংস কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা, গরুর মাংস কেজি ৮৫০-৯০০টাকায়। ৫০ টাকার নিচে কোন সবজি মিলছে না। তাছাড়া কাঁচামরিচ ও টমেটোর বাজারের অস্থিরতা এখনো কাটেনি। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ২৪০টাকা , শসা ৮০টাকা, গাজর ১৫০টাকা, টমেটো ২৬০টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০টাকা, বেগুন ৬০টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০টাকা, ঝিঙ্গা ৭০-৯০ টাকা,বরবটি কেজি ৬৫-৮০ টাকা,কচুরলতি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা,আলু ৪০ টাকা, কচুমুখি ৫০ টাকা,গাজর ১৫০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা, পটল ৬০টাকা, করলা ৭০টাকা,ঢেড়শ ৬০ থেকে ৭০টাকা, কাঁকরোল ৮০টাকা,লাউ ৫০টাকা ও কচুর ছড়া ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মাছের বাজারেও মিলছে না স্বস্তি। বাজারে প্রতিকেজি রুপচাঁদা ১৪০০টাকা, চিংড়ি ৯৫০টাকা, পাবদা ৫০০টাকা, পোয়া মাছ (দেড়কেজি) ৬০০টাকা, রুই, কাতলা, মৃগেল মাছ কেজি ২৪০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা,পাঙ্গাস ১৬০টাকা, তেলাপিয়া ২৩০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চার দিন আগে লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ হয় সয়াবিন তেলের নতুন দর। পরদিন থেকেই খুচরা বাজারে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। কিন্তু ঘোষণার পঞ্চম দিনেও এখনো আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। তবে প্রতিকেজি চিনি নির্ধারিত দর ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

https://www.dailysangram.info/post/533085