১৯ আগস্ট ২০২৩, শনিবার, ৭:৩৯

মরুকরণের শঙ্কায় বরেন্দ্র অঞ্চল

ইবনে নূরুল হুদা

জলবায়ু পরিবর্তন, গ্রীন হাউস ইফেক্ট এবং অতিমাত্রায় উষ্ণায়নের ফলে গোটা বিশ^ই পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে তৃতীয় বিশে^র দেশগুলোতে এই সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে আমাদের দেশও মুক্ত নয়। সঙ্গত কারণেই আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। প্রতিনিয়তই অবনতি হচ্ছে সার্বিক পরিস্থিতির। ফলে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। একই সাথে দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের বিপর্যয় এবং দেখা দিয়েছে মরুকরণের শঙ্কা।

নানাবিধ কারণেই দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছরই অস্বাভাবিকভাবে নিচে নামছে। জলবায়ু পরিবর্তন, খড়া ও অনাবৃষ্টি সেই সাথে অনিয়ন্ত্রিত পানি উত্তোলনে পানিশূন্যতার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে এ অঞ্চলের ৪০ ভাগ এলাকায়। এতে সেচ ও খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সাধারণ টিউবওয়েলে স্বাভাবিকভাবে পানি মিলছে না। গভীর পাম্প বসিয়ে খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। স্থানভেদে তাও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে মরুকরণের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলে। অনাবৃষ্টির ফলে খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর শুকিয়ে গেছে। ফলে কৃষিতেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব।

মূলত, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কম বৃষ্টিপাত, বেশি খরা ও ভূগর্ভের পানি নিচে নামছে আশঙ্কাজনকভাবে। বিগত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে রাজশাহীর তানোরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে ১১৩ ফুটের মতো। ১৯৯০ সালে সেখানে পানির স্তর ছিল ৬৮ ফুট নিচে। গত দশ বছরে পানির স্তর দ্রুত নিচে নামছে। ২০১০ সালে যেখানে পানির স্তর ছিল ৫০ ফুট নিচে, সেখানে ২০২১ সালে পানির স্তর ৬০ ফুট নিচে এসে ঠেকেছে। আর গত বছর পানির স্তর ২ ফুট নিচে নেমেছে। মূলত, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে কম বৃষ্টিপাত, খরা এবং অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। চলতি বছরের বর্ষাকালে গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই সঙ্গে এই দু’মাসের মধ্যে অন্তত পনের দিন দেশের কোনো না কোনো জায়গায় দাবদাহের মতো পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দেশে সাধারণত জুলাই মাসে গড়ে প্রায় ৫শ’ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এ বছর হয়েছে মাত্র ২১১ মিলিমিটার। যা রীতিমত আতঙ্কের।

সম্প্রতি ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) পক্ষ থেকে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) উঁচু বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর ভূপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ পানি পরিস্থিতি নিয়ে হাইড্রোলজিক্যাল অনুসন্ধান ও মডেলিং শীর্ষক গবেষণা করেছে। গবেষণাটি ২০১৮ সালে শুরু হয় এবং চলতি বছরের জুনে ওয়ারপোর অনুমোদন পায়। গবেষণার ফলাফলে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে পরিস্থিতির প্রতিনিয়তই অবনতি হচ্ছে। গবেষণার তথ্যমতে, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সালে বরেন্দ্র অঞ্চলে গড় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ২৬ ফুট নিচে। সে সময় সর্বোচ্চ তানোরে পানির স্তর নেমেছিল ৬৮ ফুট। খাবার পানি, সেচ, মাছ চাষের মতো বিভিন্ন কাজে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি তোলায় ২০১০ সালে পানির গড় ছিল ৫০ ফুট নিচে। ২০২১ সালে ভূগর্ভস্থ পানির গড় আরও নিচে নেমে দাঁড়ায় ৬০ ফুটে। একই বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের একটি স্থানে ভূপৃষ্ঠ থেকে মাটির নিচে পানি নামে ১৫৩ ফুট। প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ অঞ্চলের ২১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮৭টি ইউনিয়ন অতি উচ্চ ও উচ্চ পানি সঙ্কটাপন্ন এলাকা। পানির স্তর সবচেয়ে বেশি নেমেছে পোরশার ৬ ও নাচোলের চার ইউনিয়নে। অতি উচ্চ পানি সঙ্কটে গোদাগাড়ি, তানোর, গোমস্তাপুর, নিয়ামতপুর ও সাপাহারসহ ৯ উপজেলার ৩৭টি ইউনিয়ন। গবেষণায় ৪০টি ইউনিয়নকে ‘উচ্চ পানি সঙ্কটাপন্ন’ ও ৬৫টি ইউনিয়নকে ‘মাঝারি পানি সঙ্কটাপন্ন’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। এদিকে নওগাঁর কয়েকটি স্থানে ১৫০০ ফুট মাটির নিচেও মেলেনি ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর। তানোরসহ আশপাশে একটি মাত্র পাতলা ৫০ ফুটের অ্যাকুইফার (সচ্ছিদ্র শিলাস্তর) পানির উৎস হিসেবে কাজ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানির পুনর্ভরণ না হওয়ায় দেখা দিয়েছে সঙ্কট।

পরিবেশবিদরা বরেন্দ্র অঞ্চলের পানির স্তর খুব দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, ১৯৯০ সালে এ অঞ্চলের গড় পানির স্তর ছিল আট মিটার। সেচ ধান, খাবার পানি, মাছ চাষ, আম চাষ এবং শিল্পের অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ওঠানোর কারণে ২০১০ সালে পানির গড় স্তর পনের মিটার দাঁড়িয়ে যায়। ২০২১ সালে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হয় আঠারো মিটার। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছেন, তারা মূলত দেশের খাদ্য যোগান দিতে এক ফসলি ধানের জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করে খাদ্যের যোগান দিয়েছেন। এখন শুধু ধান নয় সব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারের কথা বলা হলেও এর উৎস সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ফলে পানির স্তর ক্রমেই নি¤œমুখী হচ্ছে।

একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বগুড়া অঞ্চলেও। ফলে জেলায় সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। বগুড়া শহর ও শহরতলী এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, হস্তচালিত নলকূপে আর পানি উঠছেই না। এক দশক আগেই বগুড়ার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরের উঁচু এলাকায় হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। এই এলাকাভুক্ত এলাকায় সুপেয় পানির জন্য মাটির গভীরে সাবমার্সিবল পাম্প বসাতে হচ্ছে। তবে বর্তমানে করতোয়া নদীর পূর্বপাড়ের নিচু এলাকায়ও পানিস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আর আগের মতো হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এ অঞ্চলের পানির স্তর এখন এতোটাই নিম্নমুখী যে পৌর কর্তৃপক্ষের পক্ষেও শতভাগ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর সূত্র বলছে, বগুড়ায় ৮০’র দশক থেকেই অনাবৃষ্টি, খাল, বিল, পুকুর, জলাশয় ভরাটের কারণে এবং চাষাবাদের কাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারের কারণে নিচে নামতে থাকে ভূগর্ভস্থ পানিস্তর। বর্তমানে বগুড়া শহরের পানিস্তর নেমে গেছে ৮০ ফিটের নিচে। এই স্তরের পানি হস্তচালিত টিউবওয়েল দ্বারা পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে শতশত টিউবওয়েল এখন অচল হয়ে গেছে। সুপেয় পানির সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। পানি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকে খাল-বিল ভরাটের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। সেচকাজে ভূগর্ভস্ত পানির ব্যবহারও কমানো জরুরি। এছাড়াও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে সেটা সারাবছর যেন সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।

দিনাজপুর অঞ্চলও এ থেকে মুক্ত নয়। এ অঞ্চলে খুব সহজেই সুপেয় খাবার পানির ব্যবস্থা হয়ে যেতো। হাফ হর্সের একটি মোটর পাম্প হলে দ্বিতল বাড়ির টেংকিতে পানি তোলা যেত অতি সহজেই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সে অবস্থার বড় ধরনের অবনতি হয়েছে। তিনটি পাইপ বসিয়েও কাক্সিক্ষত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পাকাবাড়ির মালিকেরা এখন পাম্প পরিবর্তন করে এক থেকে দুই হর্সের মোটর লাগাতে বাধ্য হচ্ছে। কৃষি কাজের সেচের জন্য এখন ১০ ফুট গর্তে পাম্প বসিয়েও পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে না। বসাতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১শ’ ফুট পাইপ। অনাবৃষ্টির কারণে ভরা বর্ষা মৌসুমেও খাল বিলগুলো প্রায় পানি শূন্য। পাট পচানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সেচ। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে অনাবৃষ্টি, মাত্রাতিরিক্ত উষ্ণতা ও সেচের ব্যবহারসহ বায়ুম-লের পরিবর্তন। যা প্রতিনিয়ত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

দেশের উঁচু এলাকা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় এলাকা ভেদে ২৫ থেকে ৩০ ফুট গভীরে পাইপ বসিয়ে টিউবওয়েলের সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা গত ৫-৬ বছর ধরে। খরা মৌসুমে পানির জন্য এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চলতি বছর খরা মৌসুমে একেবারেই অচল হয়ে গেছে অধিকাংশ হস্তচালিত নলকূপ। ভরা মৌসুমে এই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে যা সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। ৩০-৩৫ ফুট গভীর থেকে হস্তচালিত নলকূপের পানি উঠছে। কিন্তু এর নিচে গেলেই পানি উঠছে না। বড় বড় হাইরাইজ ভবনের পানি তুলতে ব্যবহার করতে হচ্ছে বড় বড় পাম্প। যা বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়।

দিনাজপুর সদরের দক্ষিণ কোতয়ালী, বীরগঞ্জ ও পার্বতীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শীত ও খরা মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। ১৮০ ফুট গভীরে পাইপ বসিয়ে পানি পাওয়া যায় না ঠিকমতো। গ্রামাঞ্চলে একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় ডিপ-টিউবওয়েল থেকে দূরে গিয়ে ডিপ-টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে হয়। স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র বলছে, বায়ুম-লের পরিবর্তন, কম বৃষ্টিপাত, অতিরিক্ত তাপদাহ সব মিলিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি নেমে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। সূত্র মতে, কম বৃষ্টিপাতের কারণে নদী-নালা-খাল-বিল পানি শূন্য হয়ে থাকছে। সেচ কাজে ভূ-গর্ভের পানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এ জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে আমাদের আরো সাবধানী ও সচেতন হতে হবে।

মূলত, রংপুর অঞ্চলের সর্বত্রই চলছে প্রচ- তাপদাহ। আষাঢ় ও শ্রাবণ পেরিয়ে ভাদ্রে এসেও প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাতের দেখা মিলছে না। বর্ষাকালেও নদ-নদীতে পানি নেই। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপগুলোতেও পানি উঠছে কম। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাব এবং সেচ কাজসহ ভূগর্ভস্থ পানির যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে রংপুর অঞ্চলে পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। একের পর এক পুকুর জলাশয় ভরাট করে কৃষি জমি কিংবা আবাসিক ঘর-বাড়ি তৈরি করায় ক্রমান্বয়েই পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় ইতোপূর্বে ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীরে গেলেই পানির স্তর পাওয়া যেত। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বর্তমানে ২৫-৩০ ফুটের নিচে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বিএডিসি সূত্র বলছে, বেশ কিছুদিন ধরে ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় বিশেষ করে বর্ষার মওসুমেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলি জমিতে সেচ দেওয়া এবং তাপদাহ বেড়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে অনেক স্থানেই নলকূপগুলো থেকে পর্যাপ্ত পানি উঠছে না।

সূত্রমতে, ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের নলকূপে মিলছে না সুপেয় পানি। প্রয়োজন মেটাতে অনেকেই কুয়ার পানি ব্যবহার শুরু করলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই সেখানেও একই অবস্থা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে গ্রামগুলোর কয়েক হাজার পরিবার। সরেজমিনে সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের অনেক গ্রামে গিয়ে পানি সঙ্কটের বিষয়টি রীতিমত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এসব ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে এ সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, এসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। বেশ কয়েক বছর আগেও ৬০ বা ৯০ ফুট গভীরে পানির স্তর মিললেও এখন ১৫০ ফুট গভীরেও মিলছে না। এতে করে অচল হয়ে পড়েছে নলকূপগুলো। কিছু নলকূপে পানি মিললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। ফলে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে জনদুর্ভোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামী দিনে সঙ্কট আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলগুলো মরুকরণের শঙ্কায় পড়েছে। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ, কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ এসেছে সংশ্লিষ্ট মহলের পক্ষ থেকে। আর এই মরুকরণ রোধে দ্রুত যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করা গেলে এ অঞ্চল বড় ধরনের দুর্যোগের কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় মরুকরণ রোধ করতে হলে ওই অঞ্চলে নতুন পুকুর খনন ও বিদ্যমান পুকুরগুলোর পুনঃখনন, স্বল্প সেচের ফসল চাষ, ভূগর্ভস্থ পানির অতিব্যবহার ও অপব্যবহার বোধ এবং পানির কৃত্রিম রিচার্জে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সাথে সারাদেশেই সবুজায়নের ওপরও গুরুত্ব দেয়া দরকার। অন্যথায় দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

https://www.dailysangram.info/post/533056