১৭ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৭:১৫

জাতীয় কমিটির উদ্বেগ

রেয়াতি সুবিধা নিয়েও ডিমের বাজার অস্থির

রেয়াতসহ নানা শুল্ক ছাড়ের সুবিধা নিচ্ছেন পোলট্রিশিল্প মালিকরা। কিন্তু এসব সুবিধার প্রতিফলন নেই বাজারে। ডিমের বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে পোলট্রি, ডেইরি ও ফিশ ফিডের উৎপাদনমূল্য পর্যালোচনার জন্য তাগিদ দিয়েছেন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাজার পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় কমিটির সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, ডিমের চাহিদার তুলনায় উৎপাদনে ঘাটতি না থাকলেও অদৃশ্য কারণে বাজারে অস্বাভাবিকভাবে এর দাম বেড়েছে।

খামারিরা বাড়তি দাম না পেলেও সুবিধা নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।
গতকাল বুধবার বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সরকারের বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি এবং সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানায়, দেশের পোলট্রি ফার্মগুলোকে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৭০ কোটি টাকা শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।

২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৯৭৮ কোটি টাকা।
বৈঠক সূত্র জানায়, বর্ষার জন্য পেঁয়াজের বাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে। এ জন্য আগামী অক্টোবর পর্যন্ত আমদানির মাধ্যমে পেঁয়াজের মজুদ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সমন্বিত নীতিমালা, পণ্যের চাহিদা-মজুদ সরবরাহ লাইনের প্রকৃত তথ্যের ঘাটতির ফলে ডিম, তেল, চিনি, লবণ, আটা, পেঁয়াজসহ অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহে নজরদারি বাড়ালে বাজারে যৌক্তিক দামে এসব পণ্য পাবে ভোক্তারা। ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। তবে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দিয়ে শুধু নজরদারি করলেই হবে না, নীতি সহায়তাও দিতে হবে। ব্যবসায়ীদের আস্থায় নিতে হবে। সরকারের ভুলনীতির কারণে যেন শিল্পের সংকট না হয় সে বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।

বৈঠকে উপস্থিত এফবিসিসিআই প্রতিনিধি ও সংঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী কালের কণ্ঠকে বলেন, উৎপাদন পর্যায়ে তদারকির অভাব, অরক্ষিত সরবরাহব্যবস্থা, পোলট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, ডলারসংকট এবং ঋণপত্র (এলসি) খোলায় জটিলতায় ফলে ডিমের বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে এখন সরকারের তদারকি সংস্থার বাজার অভিযানের ফলে দাম কমতে শুরু করেছে।

এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ডিম বাজারজাতকরণে অতিমুনাফা ও ত্রুটিপূর্ণ মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির ফলে ডিমের বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। পার্শ্ববর্তী দেশে ভারতে ডিমের মূল্য প্রতি ডজনে বাংলাদেশি টাকায় ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, যা বাংলাদেশের তুলনায় অর্ধেক। দেশে ডেইরি ও পোলট্রি ফিডের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হলে বাজারে এর সুফল মিলছে না।

জাতীয় কমিটির আগের সুপারিশ
এর আগে গত ১৬ জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় কমিটির সভায় একই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিছু সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—

আমদানি করা পণ্যের মূল্য পর্যালোচনা করা; পোলট্রি, ডেইরি ও ফিশ ফিডের উৎপাদনমূল্য পর্যালোচনা; স্থানীয় উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও আলু ও লবণের দাম বাড়ার কারণ খুঁজে বের করা; পোলট্রি, ডেইরি ও ফিশ ফিডের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক রেয়াত সুবিধা দেওয়ার পরেও উৎপাদনমূল্যে কেন প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ক্ষেত্রে ‘ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি, ২০২৩’ অনুযায়ী সিজনাল বা মিক্সড ট্যারিফ আরোপের বিষয় বিবেচনা করা। ওই বৈঠকে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, কাঁচা মরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন, সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য আমদানি বন্ধ না কারার পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রয়োজনে মৌসুমি শুল্ক আরোপ না করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধি সহযোগে সচিব পর্যায়ে সভা করার প্রস্তাবও রাখা হয়। কিন্তু সেই সভা এখনো হয়নি।

এবারের পর্যবেক্ষণ
এবার জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো হচ্ছে আমদানি ও স্থানীয় উৎপাদন বিবেচনায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি নেই; আন্তর্জাতিক বাজারে চালের মূল্য বাড়লেও স্থানীয় বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে; ভোজ্য তেল, চিনি ও মসুর ডাল ছাড়া অন্যান্য আমদানীকৃত পণ্যে আন্তর্জাতিক মূল্যের সঙ্গে স্থানীয় মূল্যের ফারাক রয়েছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/08/17/1309091