১৭ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৭:১২

ঘন ঘন হাজিরার তারিখ সম্ভাব্য বিরোধী প্রার্থীদের অযোগ্য ঘোষণার কৌশল?

সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা জাকির হোসেন। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ে সোচ্চার। প্রচলিত আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। তার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে ১৮টি মামলা। এর মধ্যে ৫টি মামলায় হাইকোর্ট থেকে খালাস পেলেও ঝুলছে আরো ১৩টি। কোথাও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেই মামলায় আসামি হিসেবে থাকছে তার নাম। সব মামলায়ই আছেন জামিনে। আগে একেকটি মামলার হাজিরা দিতে হতো ২/৩ মাস পরপর। কিন্তু গত ২ মাস ধরে হাজিরার তারিখ পড়ছে হপ্তায় হপ্তায়। আশঙ্কায় আছেন, যেকোনো মুহূর্তে জামিন বাতিলের। মাসের অধিকাংশ দিন কাটে তার আদালতের বারান্দায়। সাংগঠনিক কাজে সময় দিতে পারছেন না মোটেই।

এটি শুধু ট্রেড ইউনিয়ন করা একজন জাকির হোসেনের ঘটনা। যারা সরাসরি সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বাস্তবতা আরো রূঢ়। জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান হচ্ছে ততোই। ততোধিক গতিময়তা লাভ করেছে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা। কোনো কোনো মামলা লাভ করেছে সুপারসনিক গতি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সরকারের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। সরকার চাইছে, তাই রাজনৈতিক মামলা হঠাৎ করেই সচল হয়ে উঠেছে। এটি মৌসুমী বায়ুর প্রভাব। ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গতিলাভ করেছিলো এমন মামলা। এটি কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। এটি মৌসুমি বায়ুর প্রভাব। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় অন্য মামলার তদন্ত ও বিচারের প্রশ্নে এতোটা মনোযোগী হলে বিচারালয়ে ৪০ লাখ মামলার জট সৃষ্টি হতো না।

দ্রুত হাঁটছে রাজনীতিকদের মামলা : বিএনপি‘র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে দায়ের হয় ৩৭টি মামলা। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দ-িত হয়ে তিনি সাজা ভোগ করছেন। বিচারাধীন রয়েছে আরো ৩৫টি। এর মধ্যে ১৩টি মামলা হয়েছে ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। এগুলোর মধ্যে ৫টিতে দুর্নীতির অভিযোগ, ৪টি মানহানি, একটিতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ রয়েছে। বাকি মামলাগুলোতে আছে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগ।

২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দায়ের হয়েছে বাদবাকি মামলা। এর মধ্যে ২০১৫ সালে রাজধানীর দারুসসালাম থানায় নাশকতার অভিযোগে দায়ের হয় ১১টি মামলা, যাত্রাবাড়ী থানায় রয়েছে ৪টি, কুমিল্লায় ৩টি। নাইকো দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা, গুলশানে বোমা হামলার অভিযোগে মামলা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা, সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে কটূক্তি সংক্রান্ত ২টি মানহানি মামলা, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকালে ৪২ জনকে হত্যার অভিযোগে মামলা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগে ২ মামলা, নড়াইলে মানহানি মামলা, ‘মিথ্যা জন্মদিন উদযাপন‘ মামলা, বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির মামলা, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মানহানি মামলা। মামলাগুলোতে বেগম খালেদা জিয়া জামিনে আছেন। কিন্তু ঘন ঘন তারিখ পড়ছে নাইকো, গ্যাটকো, বড়পুকুরিয়া, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা এবং ‘ভুয়া জন্মদিন পালন‘ সংক্রান্ত মামলার। তবে অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হতে না পারায় তার পক্ষে আইনজীবী নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন। মামলাগুলোর মধ্যে হাইকোর্টে বিচারাধীন নাইকো দুর্নীতি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির তোড়জোড় চলছে। গত ৯ মার্চ মামলাটিতে বেগম খালেদা জিয়াসহ জীবিত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয়। এ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে চলছে আইনি লড়াই।

অন্যদিকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গত ২ আগস্ট ‘অবৈধ সম্পদ অর্জন‘-এর একটি মামলায় ৯ বছর কারাদ- দেয়া হয়। একই মামলায় ৩ বছর কারাদ- দেয়া হয় তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকেও। ২০০৭ সালে মামলাটি দায়েরের পর প্রায় ১৫ বছর মামলাটি ঝুলিয়ে রাখা হয়। কিন্তু চার্জ গঠনের মাত্র ৪ মাসের মধ্যে দেয়া হয় উপরোক্ত রায়।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধেও মামলা হয় ২০০৭ সালে। প্রায় দেড় দশক ঝুলিয়ে রাখা হয় মামলাটি। পরে গত ৩০ মে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বিচারিক আদালতে দেয়া ৯ বছরের কারাদ- বহাল রাখেন। টুকুকে বলেন ২ সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে। দ-ের খড়্গ মাথায় নিয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। রাজনৈতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ থেকে রয়েছেন দূরে। তার বিরুদ্ধে আরো ৪টি মামলার বিচার চলছে। একই দিন বহাল রাখা হয় বিএনপির আরেক নেতা আমানউল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে দেয়া ১৩ বছর কারাদ-ের রায়। তাকেও দুই সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।

বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদওয়ান আহমেদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলায় ৩ বছর কারাদ- দেয়া হয় গত ১৪ আগস্ট। মামলা দায়েরের ২১ বছর পর দেয়া হয় এ রায়। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে বিএনপি‘র অন্য নেতাদের মামলাও। তাদের মামলার তারিখ পড়ছে ঘন ঘন। এর মধ্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ৯৩টি, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে ৭টি মামলা। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে ৪টি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে ১৯টি, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৪৮টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ৩২টি, ড. আব্দুল মঈন খানের ১টি, নজরুল ইসলাম খানের ৬টি, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ৬টি, ভারতে অবস্থানরত মো. সালাহ উদ্দিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে ৩৫টি, বেগম সেলিমা রহমানের বিরুদ্ধে ৪টি মামলার বিচার চলমান। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় সাতক্ষীরার সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনকে কারাদ- দেয়া হয় বছর দুই আগে। সম্প্রতি সেই সাজা বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট। হাবিব বর্তমানে কারাগারে।

দ্রুত নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত : এসব শুধু শীর্ষ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মামলা। দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মামলার গতিও বেড়েছে আগের চেয়ে।

হাজিরার তারিখ পড়ছে ঘন ঘন। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদেও (২০১৪-২০১৮) বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হয় হাজার হাজার মামলা। এসব মামলার বেশির ভাগই রয়েছে তদন্ত পর্যায়ে। তদন্তাধীন মামলার দ্রুত চার্জশিট দাখিলের বিষয়েও শুরু হয়েছে তাড়াহুড়া। তদন্তাধীন মামলার দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করতে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘ইউ নোট’।

গত অক্টোবরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাজনৈতিক সহিংসতার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত হয় নীতিগতভাবেই। যেসব তদন্ত শেষে চার্জশিট দেয়া হয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মনিটরিং কমিটিকে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর জন্য ‘সন্ত্রাসী হামলা’র স্থগিত মামলা সচলের সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভার পর নির্দেশনায় সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে বিশেষ কোনো মতামত ও সুপারিশ থাকলে দ্রুত সেই মতামত ও সুপারিশ দিতে দেশের জেলা প্রশাসনগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়। ওই সময় সভায় জানানো হয়, বিভিন্ন সময় সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধ করতে ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা এবং নাশকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। চলতি বছর মে মাসেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ইউ-নোট যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকেও বিচার বিভাগে একটি অলিখিত নির্দেশনা দেয়ার কথা জানা যায়। কিন্তু এর সত্যতা অস্বীকার করেন আইনমন্ত্রী।

এদিকে গত ৫ আগস্ট প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী যশোরে এক বিচারবিভাগীয় বৈঠকে বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, দীর্ঘসময় ধরে মামলা বিচারাধীন থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। এতে বিচার বিভাগের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে।

আদালতের বারান্দায় রাত-দিন : ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা দায়ের হয় ৩ হাজার ৭৮৬টি। এর মধ্যে চার্জশিট দেয়া হয় ৩ হাজার ৫৪৯টির। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয় ১৮৬টি মামলার। ৫১টি মামলার তদন্ত এখনও চলমান। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অন্তত ৩০ হাজার অভিযান চালায়। এসব অভিযানে গ্রেফতার করা হয় ১৮ হাজার ৬৬৬ জনকে। এছাড়া ২০০৯ সাল থেকে গত দেড় দশকে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় অন্তত দেড় লাখ। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪০ লাখ নেতাকর্মীকে। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মী পর্যন্ত এসব মামলায় আসামি। এ সময়ের মধ্যে এমন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীও রয়েছে যাকে অন্তত সাড়ে ৪শ’ মামলার আসামি করা হয়েছে। কারো নামে ৩২৪টি, কারো নামে ৩শ’টি, কারো বিরুদ্ধে ২৭৭টি, কারো বিরুদ্ধে ২৫৪টি, ১৮০টি, ১৩৫টি, কারো বিরুদ্ধে ১৩৪টি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় সপ্তাহের ৫ কার্যদিবস আদালতে হাজিরা দিতে হয়- এমন নেতাকর্মী রয়েছেন। তবে মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির অলিখিত নির্দেশনার পর তাদের হাজিরার তারিখ পড়ছে ঘন ঘন। এমনও দেখা গেছে, এক আদালতে একটি মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে অন্য আদালতে বিচারাধীন মামলায় গরহাজির থাকতে হচ্ছে। ফলে হুট করেই জারি হচ্ছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। ফলে যারা প্রায় সব মামলায় জামিনে রয়েছেন তারাও স্বস্তিতে নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ তো দূরে থাক, মামলার দুশ্চিন্তায় আদালতেই কাটছে তাদের রাত-দিন।

এদিকে উপর্যুপরি মামলার চাপে জট কঠিন আকার ধারণ করেছে আদালতে। জট ক্রমশ বৃদ্ধি পেলেও সেদিকে মনোযোগ নেই বিচার ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের। সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। সরকারি পরিসংখ্যান মতে, দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এ জট হ্রাসের কোনো উদ্যোগ দেখা না গেলেও রাজনৈতিক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির প্রশ্নে দেখা যায় অবিশ্বাস্যরকম তৎপরতা। এ ‘তৎপরতা’র প্রধান কারণই হচ্ছে, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দ্রুত দ-াদেশ দিয়ে বিরোধীদলীয় নির্বাচনযোগ্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের আইনত ‘অযোগ্য’ করে দেয়া, আন্দোলন থেকে নিবৃত রাখতে নেতাকর্মীদের আদালতে ব্যস্ত রাখা।
বাধাগ্রস্ত রাজনৈতিক অধিকার : রাজনৈতিক মামলার বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, নির্বাচনের আগে আমরা মিথ্যা মামলার রাজনৈতিক ব্যবহার দেখছি। আর অতীতে এত অল্প সময়ে এতো বেশি মামলা আমরা হতে দেখিনি। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের ঘায়েল করা। তাদের ভয়ের মধ্যে রাখা অথবা কারাগারে আটক রাখা। এসব মামলার মধ্যদিয়ে রাজনীতি করার যে অধিকার তা বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। বাক স্বাধীনতাকে সঙ্কুচিত করা হয়েছে। তবে ‘রাজনৈতিক মামলা’ শব্দের সঙ্গে দ্বি-মত পোষণ করে অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, আইনে রাজনৈতিক মামলা বলে কিছু নেই। তবে এটিকে ‘রাজনৈতিক কারণে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা’ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এ ধরনের মামলা বিলম্বিত কিংবা দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিচারকের বিশেষ ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। মামলায় পক্ষ-বিপক্ষ থাকে। দ্রুত কিংবা দীর্ঘসূত্রিতা নির্ভর করে মামলার বাদী-বিবাদীর ওপর। তিনি বলেন, মামলা বিনা বিচারে দীর্ঘদিন আদালতে পড়ে থাকাটাই অস্বাভাবিক। আবার হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠাও স্বাভাবিক নয়। এখানে বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষের স্বার্থ কাজ করে।

মৌসুমী বায়ুর প্রভাব : নৈমিত্তিক মামলা ঝুলিয়ে রেখে হঠাৎ রাজনীতিকদের মামলার গতি বাড়িয়ে দেয়ার পেছনে নির্বাচনী মৌসুমী বায়ুর প্রভাব বলে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর হঠাৎ গতিলাভ সরকারের আকাক্সক্ষারই প্রতিফলন। আমরা স্বীকার করি কিংবা না করি, বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের প্রচ্ছন্ন নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। লক্ষ্য করুন, ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গতিলাভ করেছিলো এই শ্রেণির মামলা। এটি মৌসুমি বায়ুর প্রভাব। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় অন্য মামলার তদন্ত ও বিচারের প্রশ্নে এতোটা মনোযোগী হলে বিচারালয়ে ৩৭ লাখের বেশি মামলার জট তৈরি হতো না।

https://dailyinqilab.com/national/article/595336