১৭ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৭:০৬

গ্রামে ডেঙ্গু রোগীদের আর্তনাদ

দেশের ৬৪ জেলায় এখন ডেঙ্গু রোগীর থাবা। এবার ঢাকার বাইরেই ডেঙ্গু রোগীর দাপট বেশি। গ্রামে ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা নেই জেলা পর্যায়ের অনেক হাসপাতালে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাইরে চিকিৎসা ব্যবস্থায় যথেষ্ট ঘাটতি থাকায় রোগীরা বেশি ঢাকামুখী হচ্ছেন। মুমূর্ষু রোগীদের অনেকে মারা যাচ্ছেন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৯২ হাজার ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৪৫ হাজার ২৩০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪৬ হাজার ৭৯৪ জন।

জেলায় জেলায় কেন ডেঙ্গু বাড়ছে এবং কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে মাদারীপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহমদ খান মানবজমিনকে বলেন, ডেঙ্গু এখন উপজেলা পর্যায়ে চলে গেছে। তার জেলায় শিবচর উপজেলায় ডেঙ্গু রোগী বেশি। উপজেলা পর্যায়েও ১৫ থেকে ২০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকে। জেলা পর্যায়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন।

বর্তমানে ৩৯ জন রোগী জেলা সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারে ভর্তি রয়েছেন। কী কারণে ডেঙ্গু রোগী তার জেলায় বাড়ছেÑএমন প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, জেলাটি ঢাকার কাছে এবং পদ্মা সেতুর কারণে মানুষ দ্রুত মাইগ্রেশন করছেন। জ¦র হলে ঢাকা থেকে স্বজনদের সেবা পাওয়ার জন্য বাড়িতে চলে আসেন। এজন্য বাড়ছে রোগী। এখন স্থায়ীয় পর্যায়েও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। বৃষ্টিও একটি কারণ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও তার জেলায় আইসিইউ সাপোর্ট দেয়ার ব্যবস্থা নেই। গত ৬ই আগস্ট ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন শিশু মারা গেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

জামালপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস মানবজমিনকে বলেন, তার জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগই ঢাকাফেরত। স্থায়ীয়ভাবে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুবই কম। জেলায় ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও নেই আইসিইউ সাপোর্ট। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা তারা দিতে পারছেন না। এ জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন তারা। তিনি আরও জানান, কম বেশি সব উপজেলায় এখন ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। তাদের কিট ও স্যালাইনের সংকট নেই। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশেষ করে মেয়রদের সঙ্গে বৈঠক করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা মারা উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন তারা। একই সঙ্গে মানুষকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার বাইরে চিকিৎসা ব্যবস্থায় যথেষ্ট ঘাটতি থাকায় রোগীরা বেশি ঢাকামুখী হচ্ছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রতিটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ দেয়ার কথা বলেছিল সরকার। কিন্তু তা বাস্তবায়ন দেখছি না। হাসপাতালে লোকবল নেই, বেড নেই। অনেক হাসপাতালেই রোগীকে মশারিও দেয়া হয় না। এই চিকিৎসক স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগকে ডেঙ্গু মোকাবিলায় আরও উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বছরের শুরুতেই তাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি দ্রুতই ডেঙ্গু মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোকে ভালোভাবে প্রস্তুত করার পরামর্শ দেন।

৪৩৫ জনের প্রাণহানি: ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়, একদিনে আরও ৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গত ১৬ দিনে মৃত্যু ১৮৪ জন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩৫ জনে। দেশে ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রোগী মৃত্যুতে পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ১৪৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৯২ হাজার ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৪৫ হাজার ২৩০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪৬ হাজার ৭৯৪ জন। মৃত ৪৩৫ জনের মধ্যে নারী ২৪৭ জন এবং পুরুষ ১৮৮ জন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ১০৬ জন এবং রাজধানীতে ৩২৯ জন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ১৪৯ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৩৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৩১৫ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ২ হাজার ১৪৯ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৬৫ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ১৬৩ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৯২ হাজার ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ আক্রান্ত ৫৭ হাজার ৬০৬ জন এবং নারী ৩৪ হাজার ৪১৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮২ হাজার ৪২৪ জন। অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টের ১৬ দিনে ৪০ হাজার ১৯২ জন শনাক্ত এবং প্রাণহানি ১৮৪ জনের।

https://mzamin.com/news.php?news=69684