১৭ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৬:৫৬

একজন বিচারপতির বক্তব্য নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন আইনজীবীরা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে আবেদনের দ্বিতীয় দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি অসমাপ্ত অবস্থায় আগামী ২১ আগস্ট সোমবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
এ দিন শুনানির শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির একটি বক্তব্যের বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের অডিটোরিয়ামে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম তার বক্তব্যে বলেছেন, আমি প্রায় সময় বলি, বার বার বলি, সুযোগ পেলে বলি যে আমরা বাংলাদেশের বিচারপতিরা হলাম শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। এই প্রসঙ্গটি তুলে ধরে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতে বলেন, খালেদা জিয়া একজন রাজনীতিবিদ। তিনি তার বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরেন। তখন আদালত বলেন, বিচারপতিরা রাজনীতিবিদ হবেন কেন? বিচারপতিরা হচ্ছেন বিচারক। অতি উৎসাহী কেউ এ কথা বলতে পারেন।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ওই বক্তব্য আদালতের নজরে এনেছি এই কারণে যে বলা হয়েছে, বিচারকরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় আমরা একজন বিচারপতির বক্তব্য দেখেছি যে তিনি বলেছেন, বিচারকরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। আমরা যেহেতু একজন রাজনীতিবিদের মামলা নিয়ে সেই বিচারকের আদালতে গিয়েছি। সে কারণে আমরা বলেছি আমরা একজন রাজনীতিবিদের মামলা নিয়ে এসেছি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদের কাছে।

তিনি বলেন, আশঙ্কার কথা বলেছি এ কারণে যে আমরা রাজনীতিবিদ। আমাদের আশঙ্কা যেমন আছে, প্রত্যাশাও তেমন আছে। কারণ শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ হয়ে বিচারকের আসনে বসে যদি আরেকজন রাজনীতিবিদের মামলা বাতিল করে দেয়া হয়। আমাদের আশার কথা হলো, বেগম খালেদা জিয়া যেহেতু একজন রাজনীতিবিদ উনার মামলাটাও বাতিল করে দেয়া হবে। আবার আশঙ্কার জায়গা সেটা আমরা পরিপূর্ণ শুনানির সুযোগ পাব কি না? এই রাজনীতিবিদের (খালেদা জিয়া) ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে কি না? আদালত আমাদের শুনেছেন। শুনে বলেছেন, বিচারক কখনো রাজনীতিবিদ হতে পারেন না। বিচারক তো বিচার করবেন। শপথ নেয়ার পর আর রাজনীতিবিদ হতে পারেন না।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আরো বলেন, শেখ হাসিনার মামলার রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, আমরা চোখ বন্ধ রাখতে পারি না। আমরা বোবা না, আমরা বধির না। হাইকোর্ট সব কিছু দেখে বিবেচনা করেছেন। আমরাও বলেছি, খালেদা জিয়ার মামলার ক্ষেত্রে আদালত একই বিবেচনা করবেন। এখনো বিচারকরা বধির না। এই বিষয়টি একজন রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে যেহেতু ব্যবহার করা হয়েছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও যেন তা ব্যবহার করা হয়। কোনো ধরনের বৈষম্য না করা হয়। এই সাবমিশনটা আমরা আদালতের কাছে রেখেছি।

তিনি আরো বলেন, এ দিন আমরা মামলার চার্জশিট পড়েছি। চার্জশিটের মধ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার নাইকোর সাথে চুক্তি করে। সেটার ধারাবাহিকতা শুধু রক্ষা করা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার সময়।

আদালতে খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সাথে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আবদুল জব্বার ভূইয়া, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মো. আক্তারুজ্জামান, জাকির হোসেন ভূইয়া, মো. মাহবুবুর রহমান খান, রেজাউল করীম রেজা, সালমা সুলতানা, মো. মাকসুদ উল্লাহ, কে আর খান পাঠান প্রমুখ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।

এর আগে গত ১৯ মার্চ কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৯ নম্বর (অস্থায়ী) বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালত এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন।
এর পর ১৭ মে নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

২০০৭ সালে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/770440