১০ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৩:৫৮

বৃষ্টি হলেই বাড়ে ছাতা ও রেইনকোটের দাম

বেশ কয়েক দিন ধরে রাজধানীতে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো জোরে, কখনো থেমে থেমে। বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে ছাতা, রেইনকোটের দামও। কম্পানিভেদে বাজারে প্রতিটি ছাতার দাম ২০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টি বেশি হলেই কম্পানিগুলো ছাতার দাম বাড়িয়ে দেয়। দাম বাড়ানো হয়েছে রেইনকোটেরও। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ তিন থেকে চার হাজার টাকা দামের রেইনকোট কেনার পরও শতভাগ রক্ষা পায় না শরীর। দামি রেইনকোটেও শরীরের কিছু অংশ ভিজে যায়।

গতকাল বুধবার রাজধানীর মিরপুর ১০, শেওড়াপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনে ছাতার চাহিদা বেড়েছে তিন-চার গুণ। এসব ছাতার বেশির ভাগই চীন থেকে আমদানি করা। দেশে ছাতার চাহিদা থাকার পরও ব্যবসায়ীরা নির্ভর করছেন আমদানির ওপর। কম্পানি, আকার ও মানভেদে একটি ছাতা ৩৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারে সাধারণত সুইচওয়ালা, অটো ক্লোজ সিস্টেম ও লম্বা হাতলযুক্ত এই তিন ধরনের ছাতা পাওয়া যায়। এর বাইরে বাচ্চাদের জন্য রয়েছে ছোট আকারের ছাতা। এসব ছাতা শহরের বেশির ভাগ দোকানিই পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে পাইকারি দামে কিনে এনে বিক্রি করেন।

ছাতা ও রেইনকোট কিনতে গিয়ে দাম বেশি দেখে অসন্তুষ্ট হচ্ছেন ক্রেতারা। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন খুচরা বিক্রেতারা।
শেওড়াপাড়ার তাবাসসুম তাঁত কালেকশনের স্বত্বাধিকারী মো. নুরুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, ক্রেতার সঙ্গে দামাদামি করে যদি দেখা যায়, ২০ থেকে ৩০ টাকাও লাভ থাকে তখন ছাতা বিক্রি করে দেন। তিনি বলেন, ‘চাহিদা থাকার পরও কম্পানি দাম বাড়ানোর কারণে ছাতা বিক্রি কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বর্ষার শুরুতে যে ছাতা পাইকারিতে ২৯০ টাকা ছিল, সেটা এখন ৩৬০ টাকা। হঠাৎ করে দাম বাড়ালে আমাদের বিক্রি করতে সমস্যা হয়। বৃষ্টি থাকায় গতকাল ১৫টির মতো ছাতা বিক্রি হয়েছে। বৃষ্টি না থাকলে দিনে দুই-চারটি করে বিক্রি হয়।’

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে অন্তত ৮ থেকে ১০ কম্পানির ছাতা পাওয়া যায়। যেমন : শংকর, রহমান, এটলাস, আনোয়ার, আফসার, স্টার ইত্যাদি। বৃষ্টি বাড়ার কারণে সব কম্পানিই ছাতার দাম বাড়িয়েছে। ডলারের দাম বাড়ার পর এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। সেই অজুহাতে এখন ছাতার দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। শুধু বাড়তি মুনাফার জন্যই তাঁরা দাম বেশি রাখছেন। যেমন : শংকর ছাতা আগে যেটার দাম ২৯০ টাকা ছিল, সেটা এখন ৩৬০ টাকা রাখছেন কম্পানির ডিলাররা। অর্থাৎ খুচরা বিক্রেতাদের আগের চেয়ে ৭০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে, যা তাঁরা ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি করেন। একইভাবে পাইকারি পর্যায়ে রহমান ছাতা ২৭০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা, আনোয়ার ২৭০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ২৯০ টাকা, স্টার ২৬০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়ে ২৮০ টাকা, আফসার ২৬৫ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে ২৯০ টাকা হয়েছে। বর্ধিত এই দামে খুচরা বিক্রেতারা কিনে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বা তারও বেশি মুনাফা করে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন।

মিরপুর ১০ নম্বরের শাহ আলী মার্কেটের মো. মিঠু নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘গত সিজনে যে ছাতার দাম ৩০০ টাকা ছিল, তা এই সিজনে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন ডিলাররা। এখন বেশি দামে কিনে আনলেও লাভ কিন্তু আগের মতোই আছে। এতে একই লাভ করতে আমাদের বেশি টাকা লাগছে। আবার কাস্টমাররা দাম শুনে পালানোর মতো অবস্থা। তার পরও এখন সারা দিনই বৃষ্টি হচ্ছে, এতে সাত থেকে আটটি করে বিক্রি হচ্ছে। বৃষ্টি ছাড়া কোনো দিন একটি বা দুটি বিক্রি হয়, আবার কোনো দিন বিক্রি হয় না।’

ছাতা সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বৃষ্টির সময়ে। অন্য ঋতুতে খুবই কম বিক্রি হওয়ায় দেশি ও বহুজাতিক কম্পানিগুলো ছাতা উৎপাদনে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে প্রায় সব ছাতাই আমদানি করে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে মনে করেন আরএফএল কম্পানির একজন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমাদের কম্পানির ছাতা উৎপাদনের কোনো কারখানা নেই। মানে আমাদের ব্র্যান্ডের কোনো ছাতা নেই, যা বিক্রি করা হয় সেগুলো চীন থেকে আমদানি করা।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটা সিজনাল পণ্য হওয়ায় ও সারা বছর চাহিদা না থাকার কারণে কেউ কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হচ্ছে না। আর চীন থেকে আমদানি করলে কম দামে আনা যাচ্ছে। সেই তুলনায় দেশে তৈরি করলে দাম অনেক বেশি পড়ে যাবে। তাই সবাই আমদানির দিকে ঝুঁকছেন।’
শরীর পুরোপুরি রক্ষার রেইনকোট নেই

ছাতার সঙ্গে বেড়েছে রেইনকোটের দামও। কিন্তু বেশি দাম দিয়ে রেইনকোট কিনলেও বৃষ্টির হাত থেকে শরীর শতভাগ রক্ষা করার মতো রেইনকোট বাজারে নেই বলে জানান ব্যবহারকারীরা। তাঁদের অনেকেই বলেছেন, সর্বোচ্চ দামের রেইনকোট কেনার পরও দেখা যায় গলার কাছ থেকে পানি ভেতরে ঢুকে যায়।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীতে ২০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা দামের রেইনকোট পাওয়া যায়। একদম পাতলা বা পলিথিন জাতীয় রেইনকোট, যা বাচ্চাদের জন্য বিক্রি হয়, তার দাম ২০০ টাকা থেকে শুরু। বড়দের রেইনকোটের দাম শুরু ৫০০ টাকা থেকে। বাজারে পলিথিলিন, পলিয়েস্টার বা প্যারাসুট কাপড়ের রেইনকোট পাওয়া যায়। এসপি গোল্ড, সেঞ্চুরি, আরওয়ানফাইভ, অরবিট, এভেঞ্জার ইত্যাদি নামের।

রাজধানীর ভাটারা এলাকায় জিনিয়াস শপিং সেন্টারের বিক্রয়কর্মী মো. আবির হাসান তাঁর দোকানে থাকা রেইনকোটের বিষয়ে বলেন, ‘দেশি এবং চায়না রেইনকোট এগুলো। কম্পানির লোকেরা আমাদের কাছে দিয়ে যায়। গত মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিনে ২০ পিসেরও বেশি বিক্রি হয়েছে। অন্য সময়ে মানে বৃষ্টি ছাড়া এত বিক্রি হয় না। হয়তো দুই থেকে চারটি বিক্রি হয়। আর গরমের সময় তো বিক্রিই হয় না। বাচ্চা ও বড়দের সবটিরই দাম বেড়েছে। যেমন : গতবার বাচ্চাদের যেটা ৪২০ টাকা ছিল সেটা এখন ৪৮০ টাকা। বড়দের সবচেয়ে কম দামি এক পার্টের রেইনকোট ৫৭০ টাকা। গতবার এর দাম ছিল ৫১০ টাকা। মধ্যম মানেরটি ৬৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ৮৪০ টাকা হয়েছে। ভালো মানের ডাবল পার্টের রেইনকোট ১৫৫০ টাকা থেকে ১৬৮০ টাকা হয়েছে। মানে প্রতিটি রেইনকোটে ৪০ থেকে ১৩০ টাকা বেড়েছে।

দাম বাড়লেও রেইনকোটের মান ভালো হচ্ছে না বলে মনে করেন একটি ডেভেলপার কম্পানিতে কাজ করা মো. জাকারিয়া। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি তিন হাজার টাকা দামের রেইনকোটও কিনেছি। তার পরও প্রচণ্ড বৃষ্টি যখন হয়, তখন শরীর ভিজে যায়। এমন কোনো রেইনকোট পাইনি যে শরীর না ভেজে। তিন থেকে চার হাজার টাকা দিয়ে রেইনকোট কেনার পরও যদি শরীর ভিজেই যায় তাহলে এত টাকা দিয়ে তো কেনার দরকার নেই। রেইনকোট না কিনে বাসায় গিয়ে গোসল করে ফেললেই তো হয়ে গেল।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/08/10/1306958