১০ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৩:৪১

৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই রাজধানীতে পানিবদ্ধতা

জনজীবনে চরম দুর্গতি

দিনভর শুষ্ক আবহাওয়ার পর গতকাল বিকালের একঘণ্টা টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেলো ঢাকা। পানিতে থইথই করে রাজধানীর নিচু এলাকাগুলো। এতে বিপাকে পড়েন অফিসফেরত নগরবাসী। একদিকে পানি জমে রাস্তাঘাট ডুবে যায়, অন্যদিকে পরিবহন সংকট। রিকশা পাওয়া গেলেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে চালকরা। এদিকে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

রাজধানীতে গতকাল বুধবার ৩ ঘন্টায় ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এদিন দুপুরের পর ৩ ঘণ্টায় ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বিকাল সোয়া ৫টা নাগাদ বৃষ্টি কমে এলেও ডুবে যায় ঢাকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট, অলিগলি। এতে বিপদে পড়ে যান অফিস থেকে বের হয়ে আসা সাধারণ মানুষ।

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ডক্টর মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে সর্বোচ্চ ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মুষলধারে এই বৃষ্টিতে রাজধানীর শান্তিনগর, নয়াপল্টন, মালিবাগ, রামপুরা, খিলগাঁওসহ অনেক এলাকায় দেখা দেয় পানিবদ্ধতা। এ ছাড়াওরাজধানীর বিভিন্ন সড়কে হাঁটু পানি পরিমাণ পানি জমে যায়। ঝুম বৃষ্টিতেই পানিবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়েন এসব এলাকার মানুষ। এদিকে রাস্তায় হাঁটু পানি হওয়ায় এই সুযোগে ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা হাকান রিকশাচালকরা।

বৃষ্টির সময়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে রাস্তায় চলতে দেখা যায় যানবাহনগুলোকে। এসময় বৃষ্টিতে ভিজে গন্তব্যে ছুটতে দেখা যায় পথচারীদের। কেউ রিকশা নিয়ে গন্তব্যে পোঁছান, আবার কেউ জুতা হাতে নিয়ে ময়লা পানি মাড়িয়েই রাস্তা পার হন। মোটরসাইকেল অথবা গাড়ি নিয়ে যারা বের হন তারাও পড়েন বিপাকে। পানি ও ময়লা ইঞ্জিনে প্রবেশ করে বন্ধ হয়ে যায় গাড়ি।

এদিকে প্রবল বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে শাহবাগ, বাংলামোটর, ধানমন্ডি, মগবাজার, মতিঝিল, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, বেইলি রোড, পল্টন, প্রেসক্লাবের সামনেসহ ঢাকার অধিকাংশ এলাকা। জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি নাকাল হতে হয় পুরান ঢাকাবাসীকে।

এর আগে, দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, বাড্ডা, রামপুরা, মগবাজার, হাতিরঝিল, মুগদা, খিলগাঁও, বাসাবো, গুলশান বারিধারা, বনানীসহ বেশ কিছু এলাকায় বৃষ্টি হতে দেখা যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও পরে মুষলধারে বৃষ্টি হয় প্রায় আধাঘণ্টা।

পল্টনে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করে সুরুভী সরকার। অফিস ছুটির পর বের হয়েই পড়েন বিপাকে। ঝুম বৃষ্টিতে আটকে পড়েন। আবার বাসায় যাওয়ারও তাড়া। রিকশা প্রায় নেই। রিকশা পেলেও ভাড়া চায় দ্বিগুণ। বাধ্য হয়ে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করছেন তিনি। দিপালী জানান, তার বাসা বাসাবোতে। বাসায় বাচ্চারা অপেক্ষা করছে। রিকশা না পেলে কী করবেন বুঝতে পারছেন না। বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে মনে হচ্ছে।

রিকশাচালক মহিউদ্দিন রিকশা রেখে দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, তার সারা গা ভেজা। কিছুক্ষণ রিকশা চালিয়ে আর পারছেন না। তিনি বলেন, এই বৃষ্টিতে রিকশা চালানো কঠিন। এরপর রাস্তায় পানি জমা। কোথায় গর্ত, কোথায় কী কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। এরপর আবার দুদিন জ্বরে ভুগছি। দুদিন কিছুই আয় করিনি। আজকে সকাল থেকে ভালোই ছিলাম, এখন যে বৃষ্টি তাতে বিপদে পড়ে গেলাম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরের পানিবদ্ধতা একটা নিয়মিত বিষয়। তবে এখন আর আগের মতো সামান্য বৃষ্টিতেই শহর ডুবে যায় না। সমস্যা নিরসনে আমরা খালসহ করপোরেশনের আওতাভুক্ত নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করছি। এ ছাড়া কিছু জায়গাতে রাস্তার নির্মাণকাজ চলমান থাকায় সেখানে কিছু জলাবদ্ধতা হচ্ছে, যা কয়েক দিনে ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। দেশের ১৪ জেলার উপর দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, কক্সবাজার, সিলেট এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পূর্বাভাসে এসব এলাকার নদী বন্দরসমূহকে ১ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর এবং চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা (১-৩) ডিগ্রী সে. বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

https://dailysangram.info/post/532266