১০ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:৫৪

বিবেকের দায় ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতাসহ কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষও রয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে। কারণ, তারা চলমান সঙ্কটে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা করছেন। সরকার ও বিরোধীপক্ষ নিজ নিজ অবস্থানে অনঢ় রয়েছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি হচ্ছে না। ফলে আগামী দিনের রাজনীতি আরো সংঘাতপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উভয় পক্ষকে সমঝোতায় পৌঁছানোর ব্যাপারে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

দেন-দরবার করছেন উন্নয়ন সহযোগিরাও। আর সে প্রচেষ্টার অংশ হিসাবেই ৩ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে চাঞ্চলের সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের সাথে বৈঠকের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তারা বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চান। তারা কোন রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি করছেন না। যা তার আগের কথারই পুনরাবৃত্তি। যা ইতিবাচক হিসাবেই দেখা হচ্ছে।
বৈঠকের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী জানিয়েছেন, নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ বিদেশীদের কোনো চাপ অনুভব করছে না, তবে নিজেদের বিবেকের চাপ অনুভব করছেন বলে জানিয়েছেন। তার ভাষায়, ‘আমরা চাপ অনুভব করব কেন? ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন করা আমাদের কমিটমেন্ট। এখানে চাপ অনুভব করব কেন? যদি বলেন, চাপ, তাহলে বিবেকের চাপ। বিষয়টিকে খুবই ইতিবাচক হিসাবেই দেখছেন দেশের আত্মসচেতন মানুষ’।

তিনি আরো বলেছেন, ‘কথা যেটা, আগামী নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা সব সময় বলি, নির্বাচন নিয়ে আমাদের যে বক্তব্য, আমরা যার সাথে আলাপ করি, আমাদের অঙ্গীকার ও বক্তব্য একটি। এটি অত্যন্ত ক্লিয়ার। আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা সবার সাথে বলছি। এটা আমাদের কমিটমেন্ট। দেশের জনগণের কাছে কমিটমেন্ট। তিনি দাবি করেছেন, গণতন্ত্র আওয়ামী লীগের দীর্ঘ আন্দোলনেরই সোনালি ফসল। গণতন্ত্র রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব আমরা পালন করে যাচ্ছি’।

তার ভাষায়, ‘আমরা কোন কমপ্লেইন নিয়ে কথা বলিনি। তার কথা সে বলেছে। আমরা আমাদের কথা বলেছি। মার্কিন অ্যাম্বাসেডর কোথাও তার কথায় কেয়ারটেকার সরকার, পার্লামেন্টের বিলুপ্তি, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এ ধরনের কোনো কথা বলেননি। কথা হয়েছে- ফ্রি, ফেয়ার ও পিসফুল নির্বাচন নিয়ে’।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যমের কাছে যা বলেছেন তা খুবই ইতিবাচক বলেই মনে করছেন দেশের আত্মসচেতন মানুষ। তবে অতীতে এ ধরনের কথার পর রাজনীতিকরা আমাদেরকে অনেকটা হতাশও করেছেন। তাই হতাশা থেকে আশঙ্কার বিষয়টি তারা এখনো উড়িয়ে দিচ্ছেন না বা মন্ত্রীর কথায় আশ^স্ত হতে পারছেন না পুরোপুরি। তবে তিনি যে বিবেকের চাপের কথা বলেছেন তা খুবই যৌক্তিক। কারণ, বিবেকই হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত। তাই আমরা আর নতুন করে আশাহত হতে চাই না বরং দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার দেখতে চাই। আমরা আশা করছি সরকার তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে রক্ষা করবে এবং নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য বিরোধী মতকে গুরুত্ব দেবে।

রাজনীতিকরা তাদের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবেন এ প্রত্যাশা দেশের সকল শ্রেণির মানুষের।

https://dailysangram.info/post/532218