৯ আগস্ট ২০২৩, বুধবার, ৯:২৩

ডেঙ্গুতে আরও ১৩ জনের মৃত্যু হাসপাতালে ভর্তি ২৭৪২

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৩ জন মারা গেছেন। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে আরও দুই হাজার ৭৪২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে দুই হাজার ৭৪২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে এক হাজার দুই জন এবং সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) এক হাজার ৭৪০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট দুই হাজার ৮৩৮ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা সিটির বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এক হাজার ১৬১ জন এবং সারা দেশের (ঢাকা সিটি ব্যতীত) বিভিন্ন হাসপাতালে থেকে এক হাজার ৬৭৭ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৩ জনের জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ১১ জন ঢাকা সিটিতে এবং দুই জন সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) মারা যান।

এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৩৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ২৬৯ জন এবং সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) ৭১ জন মারা যান। চলতি বছরের ৮ আগস্ট পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭২ হাজার ২২৫ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৩৭ হাজার ৭২২ জন ও সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) ৩৪ হাজার ৫০৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৬২ হাজার ৪২২ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা সিটির বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ৩২ হাজার ৯৭১ জন এবং সারা দেশের (ঢাকা সিটি ব্যতীত) বিভিন্ন হাসপাতাল ২৯ হাজার ৪৫১ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।

বর্তমানে সারা দেশে মোট নয় হাজার ৪৬৩ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ঢাকা সিটিতে চার হাজার ৪৮২ জন এবং সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) চার হাজার ৯৮১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ২৮১ জন মারা যান।
ঢামেকে ডেঙ্গুতে চিকিৎসকসহ ৫ জনের মৃত্যু

এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন ডা. দেওয়ান আল মিনা মিশু, মোছা. মাইশা আক্তার, মো. নজরুল ইসলাম, মো. আশিক ও মোছা. আয়েশা খাতুন। এদের মধ্যে চিকিৎসক দেওয়ান আল মিনা মিশু সোমবার (৮ আগস্ট) রাত সোয়া ১টার দিকে মারা যান। ডা. মিশুর বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন এলাকায়। তার ছোট একটি মেয়ে রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ তরুণ চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। মিশু ঢাকার মাতুয়াইলে বাংলাদেশ শিশু ও মাতৃ স্বা¯’্য ইনস্টিটিউটের গাইনি বিভাগে আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী।

খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু শনাক্ত
ছাড়াল ২৭০০ : মৃত্যু ৬
খুলনা ব্যুরো : দিন যতই যাচ্ছে, খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ততই ভয়াবহ হচ্ছে। ক্রমেই মানুষের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা। সরকারিভাবে যে হিসাব সবার সামনে আসছে, তা অত্যন্ত ভয়ানক। কারণ দিনকে দিন যেভাবে অবনতি ঘটছে তাতে বিগত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত খুলনা বিভাগে একদিনে ডেঙ্গু ভর্তি হয়েছিলো ১৩৪ জন। এর একদিন আগে বিভাগে ভর্তি হয়েছিলো ৭৩ জন। এরপর রোববার ভর্তি হয় ১১৯ জন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেখা গেছে ( রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) খুলনা বিভাগসহ দুটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১৭৫ জন। যা এবছরে বিভাগে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৭৫৯ জন এবং মৃত্যু হয় ৬ জনের।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, গত একদিনে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি ২০ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হয় ৪৫৬ জনকে। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ২ জনের। এ সময়ের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৯৯ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ৫৫ জন।

খুলনা সিভিল সার্জন ডা. মো. সবিজুর রহমান বলেন, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্খ্য কমপ্লেক্সগুলো ডেঙ্গু পরীক্ষার টাকা সরকারি নির্ধারণ অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট সংকট নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও মশক নিধন কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সচেতনতা ও মশক নিধন ছাড়া এটা প্রতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে তিনি মনে করেন। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় একদিনে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি মধ্যে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে যশোরে ৩২ জন। খুলনা ও মেহেরপুরে ৬ জন করে, বাগেরহাটে ২২ জন, সাতক্ষীরায় ৭ জন, ঝিনাইদহ ১২ জন, মাগুরায় ২৮ জন, নড়াইলে ১৮ জন, কুষ্টিয়ায় ১৯ জন ও চুয়াডাঙ্গায় ৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ২০ জন এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৭৫৯ জন। এ সময়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ২৭৫ জন এবং মৃত্যু হয় ৬ জনের। বর্তমানে খুলনা বিভাগে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৪৩৮ জন এবং রেফার করা হয়েছে ৪০ জনকে।

https://dailysangram.info/post/532175