৮ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:০৫

জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বেআইনি ঘোষণা প্রসঙ্গে

ড. মো. নূরুল আমিন

সাউথ এশিয়ান নিউজ এন্ড ভিউজ পরিবেশিত এক খবর অনুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সভা-সমাবেশ ও র‌্যালি অনুষ্ঠানসহ যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মকা- নিষিদ্ধকরণের একটি আবেদন শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আগামী ১০ আগস্ট তারিখ নির্ধারণ করেছেন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ আবেদনটি দ্রুত শুনানির অনুরোধের প্রেক্ষিতে গত ৩ আগস্ট এই আদেশ জারি করেন। আবেদনকারীদের পক্ষে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ও এডভোকেট আহসানুল করিম নিদেন পেশ করেন। ঐ সময় তারা জামায়াত কর্তৃক গত শুক্রবার একটি র‌্যালি অনুষ্ঠানের ঘোষণার জন্য জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার একটি পিটিশনও দাখিল করেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, গত ২৬ জুন জামায়াতের রাজনৈতিক কার্যকলাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তার নিবন্ধনের বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় একটি জনসমাবেশে নিবন্ধন ফেরৎ দেয়ার দাবি জানানোর প্রেক্ষিতে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনার জন্যও আরেকটি পিটিশন দাখিল করা হয়। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রেজাউল হক চাঁদপুরী আরো দু’ব্যক্তিসহ আপিল বিভাগের চেম্বার জজের আদালতে এই আবেদন করেন। জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানসহ ৫ জন জামায়াত নেতাকে সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে জনসভা আহ্বানের জন্য আদালত অবমাননার অপরাধে অভিযুক্ত করে তাদের বিচার দাবি করেন। বলা বাহুল্য তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রেজাউল হক চাঁদপুরী ও আরো ২৪ জন কর্তৃক ২০০৯ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের একটি পিটিশন দাখিলের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে মামলাটি হাইকোর্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন বেআইনি ঘোষণা করেন। তাদের আবেদনে তারা দাবি করেছিলেন যে, জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না। পরবর্তীকালে জামায়াত হাইকোর্টে আদেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল পেশ করে। এখন অন্য প্রসঙ্গে আসি।
আগামী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ন্যায় পুনরায় রাজনৈতিক উন্মত্ততার দিকে অগ্রসর হচ্ছে কিনা এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সরকার তার ইচ্ছা ও জেদকে প্রাধান্য দিয়ে অমসৃণ একটি মাঠে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় অর্থাৎ পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতা দখলের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন বলে মনে হয়। সারা দেশে ভিত্তিহীন অভিযোগে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের (বিশেষ করে বিএনপি জামায়াত সংশ্লিষ্ট) গ্রেফতার নির্যাতন মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নতুন মামলাই শুধু শুরু করা হয়নি, পুরাতন গায়েবী মামলাগুলোও পুনরুজ্জীবিত করে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেকে বাড়িতে থাকতে পারেন না এমনকি গ্রাম ছাড়তেও বাধ্য হয়ে জীবিকা হারিয়ে ফতুর হয়ে পড়ছেন। জামায়াত নেতা ডা. শফিকুর রহমানকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি যেন নির্বাচন পর্যন্ত জামিন না পান তার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারও বিনা অপরাধে জেলে। আদালত থেকে জামিন পেলেও তাকে বের হতে দেয়া হয় না। জেল গেটে নতুন মামলায় আটক করে পুনরায় জেলে পাঠানো হয়। জামায়াতের আরো বহু নেতাকর্মী এখন জেলে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। মহিলা জামায়াত, ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রী সংস্থার নেতা কর্মীদেরও পাইকারী হারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারা সাংগঠনিক বা সামাজিক কোনও কর্মসূচিতেও অংশ নিতে পারেন না।

এখন শোনা যাচ্ছে যে, জামায়াতকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষিদ্ধ করার একটি পরিকল্পনাও সরকার বাস্তবায়ন করার চিন্তাভাবনা করছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশ ভূখ-ে জামায়াত ১৯৭৯ সাল থেকে কাজ করে আসছে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত দলটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বিরোধী কোনও তৎপরতা পরিচালনার অভিযোগ উঠেনি, দেশবিরোধী কোনও কাজও তারা করেনি। জনগণের অধিকার আদায়সহ গণতান্ত্রিক সকল আন্দোলনে জামায়াত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন প্রভৃতিতে অন্যান্য দল এমনকি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও আশি ও নব্বই-এর দশকে জামায়াতের সাথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছে। শীর্ষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, জামায়াতের তৎকালীন আমীর মাওলানা নিজামী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার যৌথ বৈঠকের বহু ছবি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
দু’টি দলের মধ্যে আদর্শিক বিরোধ থাকলেও আওয়ামী লীগ কখনো জামায়াত অথবা তার নেতাদের যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা বলে গণ্য করতেন না। যুদ্ধাপরাধের ইস্যুটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হবার পর বিএনপি-জামায়াত জোট ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিবেশী দেশের পরামর্শে তারা এই রাজনৈতিক ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে এসেছিল।

জামায়াত নিছক একটি রাজনৈতিক দল নয়। এটি ইসলামী পুনর্জাগরণের একটি আন্দোলনও। সমাজ সংস্কার ও সমাজসেবা জামায়াতের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। দলটি তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সারা দেশে হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা-মক্তব, এতিমখানা এবং হাসপাতাল, ক্লিনিক ও দাতব্য চিকিৎসালয় এমনকি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে এ দেশের কোটি কোটি মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, ব্যাংক-বীমা ও পোল্ট্রি খাতে তাদের সেবার মান অনবদ্য। দেশের সুদভিত্তিক ব্যাংকগুলো যেখানে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় ধ্বংসের পথে সেখানে জামায়াত প্রতিষ্ঠিত সুদমুক্ত ইসলামী ব্যাংক দুর্নীতিমুক্ত এবং মুনাফা ও গ্রাহক এবং সমাজসেবার (CSR) দৃষ্টিকোণ থেকে জোরপূর্বক মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের পূর্ব পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত ছিল। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফও তাদের মানের প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছে। জামায়াত ধর্মান্ধ কোনো দল নয়। ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষা ও তার অনুশীলন জামায়াত নেতা-কর্মীদের দক্ষ ও যোগ্য দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। মন্ত্রিসভায় জামায়াতের দু’জন প্রতিনিধি যে যোগ্যতা, সততা, নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন তার নজির পাওয়া যায় না। তাদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও দলপ্রীতিরও কোনো অভিযোগ কেউ করতে পারেননি। তা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন দল জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। বিষয়টি এতদিন জামায়াত বলে আসলেও সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার স্বীকারোক্তি এই অভিযোগটির সত্যতা পরিষ্কার করে দিয়েছে।

জামায়াত নেতাদের বিচার ও ফাঁসির পর এখন ক্ষমতাসীন দল ও তার কিছু বশংবদ জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত করে তার বিচার করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। আইনমন্ত্রী সংসদে বলেছেন যে, তারা আইন সংশোধন করে সরকার প্রধানের কাছে পেশ করেছেন। এখন কথা দু’রকম হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, আদালতে যে মামলা আছে তার রায়ের ভিত্তিতে জামায়াত নিষিদ্ধ হবে। আইনমন্ত্রী বলছেন, আইন সংশোধন হচ্ছে, অনুমোদিত হলে তার ভিত্তিতে বিচার হবে এবং জামায়াত নিষিদ্ধ হবে। সংগঠনের বিচার করার জন্য বর্তমানে কোনো আইন নেই। শুধু বাংলাদেশ নয়, কোনো দেশেই তা নেই। সংগঠন অপরাধ করতে পারে না। করে মানুষ, মানুষের বিচার হয়। সংগঠনের বিচার করে কোটি কোটি মানুষের প্রাণের স্পন্দন কি স্তব্ধ করা যাবে?

এখন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায় দিয়েই আলোচনা শুরু করতে চাই। রায়টি দেয়া হয়েছিল ২০১৩ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে। ঢাকা হাইকোর্টের এই মামলায় তিনজন বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক বলেছেন যে, যে গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে জামায়াতকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে তা নির্বাচন কমিশনের আওতা ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং নির্বাচন কমিশন সাময়িকভাবে কোন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধনও দিতে পারে না এবং সাময়িক নিবন্ধন দেয়ার পরে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে বলার এখতিয়ারও তার নেই। বিচারপতি কাজী রেজাউল হকের লিখিত রায়ের সঙ্গে বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ঐকমত্য পোষণ করে কিছু সংযোজনী দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর তর্কিত নিবন্ধনটি হাসিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রবঞ্চনা বা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল। অতএব ঐ নিবন্ধনটি অশুদ্ধ ও অকার্যকর। মাননীয় বিচারপতি এখানে তার কথিত প্রবঞ্চনা ও প্রতারণার ধরন প্রকৃতি উল্লেখ করেননি। এই বিষয়ে তার সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত না থাকায় রায়ের এই অংশটি অনেকের কাছেই ঢালাও রাজনৈতিক অভিযোগের মত মনে হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের অনুচ্ছেদ ৯০(উ)তে বা উক্ত আইনের অন্য কোথাও কোন রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন, পরিমার্জন বা সংযোজনের জন্য তাগিদপত্র প্রদানের মাধ্যমে অভিভাবক বা পরামর্শদাতার ভূমিকা পালনের কোন ক্ষমতা বা এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনকে প্রদান করা হয়নি। তিনি গঠনতন্ত্র সংশোধনের কথিত সুযোগ প্রদানের জন্যে নির্বাচন কমিশনকে অভিযুক্ত করেন এবং তাদের এই কাজকে সংবিধি বা আইনের সাথে প্রতারণা বলে অভিহিত করেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি এই কাজগুলো নির্বাচন কমিশনের আওতাবহির্ভূতই হয়ে থাকবে তাহলে কোন রাজনৈতিক দলের নির্বাচন কমিশনের সাথে আদৌ নিবন্ধনের প্রয়োজন আছে কি? নির্বাচন কমিশন সংবিধানের আলোকে গঠনতন্ত্র সংশোধনের বা পরিমার্জনের চিঠি শুধু জামায়াতকেই দেয়নি। এই চিঠি ধর্মভিত্তিক প্রতিটি দল এবং আওয়ামী লীগ বিএনপিকেও দিয়েছিল। জামায়াতকে তারা যে পত্র দিয়েছে তা ছিল মূলত সার্বভৌমত্ব, সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনের প্রতিটি স্তরে ইসলামী অনুশাসন ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত বিষয়ে। জামায়াত তার গঠনতন্ত্রে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বলে ঘোষণা করেছে। একটি মুসলিম দেশের ইসলামের অনুসারী একটি দল হিসেবে এটি তার ঈমান, আকীদার অংশ। যারা আল্লাহকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মনে করেন না তারা ঈমানদার মুসলমান হতে পারেন না। তিনি সকল মানুষের রব বা প্রভু, সারা জাহানের মালিক ও স্রষ্টা। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা যায় না, তিনি লা-শরীক আল্লাহ। আল্লাহ যেমন আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের প্রভু, স্রষ্টা, নিয়ন্ত্রক, সর্বাধিনায়ক এবং সকল ক্ষমতার মালিক তেমনি সামাজিক ও রাষ্ট্রজীবনেরও। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে আল্লাহ আকবর বলে আমরা ১৫৩ থেকে ১৭০ বার আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করি। এই অবস্থায় জামায়াত তার গঠনতন্ত্রে সকল শক্তির উৎস এবং সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ এই কথা ঘোষণা করে সকল মুসলমানের ঈমান, আকীদার প্রতিধ্বনি ঘটিয়েছে বলেই আমরা মনে করি। বাংলাদেশের সংবিধানে ক্ষমতার উৎস এবং সার্বভৌমত্বের মালিক জনগণকে বলা হয়েছে। জামায়াত বলেছে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কাঠামোর অধীনেই জনগণের সার্বভৌমত্ব। জামায়াতের এই বিশ্বাসকে ধর্মনিরপেক্ষ ও এদেশের নাস্তিক শক্তি পছন্দ করে না এবং তারা জামায়াতকে সাম্প্রদায়িক দল বলে মনে করে। তাদের এই বিশ্বাস সঠিক নয়। আদালতের রায়ে এই বিষয়টি কিভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে তা আমি জানি না। তবে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় আমি পড়েছি। বাবরী মসজিদ ধ্বংসের পর ভারতে ব্যাপক হারে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা দেখা দিয়েছিল। ঐ সময় ভারত সরকার জামায়াতে ইসলামী হিন্দকে বে-আইনী ঘোষণা করেছিল। জামায়াত এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করে। দীর্ঘ শুনানির পর ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এই মর্মে আদেশ দেন যে, জামায়াতে ইসলামী হিন্দ সাম্প্রদায়িক কোন দল নয়। ভারতবর্ষে এই দলটি তার স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে পারে। ভারতীয় সংবিধানেও রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় আছে এবং সেখানেও সংবিধান অনুযায়ী সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক জনগণ। কিন্তু তথাপি সেখানে ইসলামপন্থী ও মুসলিম দলসমূহের গঠনতন্ত্রে বর্ণিত আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা হয়নি। একই অবস্থা নেপাল, শ্রীলংকাসহ এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকাতেও। সেখানে প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক দেশে ধর্মভিত্তিক দল রয়েছে। কোন কোন দেশে জামায়াত বা তার ন্যায় ইসলামী আন্দোলনভিত্তিক দলও রয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে যুক্তি ও সহনশীলতার স্থান কম, আবেগ এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসাই এখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য বিস্তার করে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা বলতে গেলে এখানে গণতন্ত্রের নামে ফ্যাসিবাদ এবং স্বৈরতন্ত্রই রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।
বিচারপতি এনায়েতুর রহিম তার রায়ে বলেছেন, ইসলাম ধর্ম ও রাসূলের (সা.) সুন্নতগুলো পালনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশে দেওবন্দ, আহলে হাদীস, তাবলীগ জামাত, হানাফী মাযহাবসহ বিভিন্ন মাযহাবে নিজস্ব কিছু দৃষ্টিভঙ্গি, রীতিনীতি এবং চর্চা পদ্ধতি বিদ্যমান। কিন্তু তারা সবাই মাওলানা মওদূদী ও তার জামায়াত সম্পর্কে এক ও অভিন্ন ভাষায় বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করেছেন। এখানে বিষয়টি পরিষ্কার নয়। মাননীয় বিচারপতি এখানে তুলনামূলক কোন পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ দেননি যা আদালতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ের জন্য অপরিহার্য ছিল। মাওলানা মওদূদী জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু তিনি কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী এমন কোন মতবাদ বা ব্যাখ্যা ইসলামে অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে আমরা জানি না। দেওবন্দ, আহলে হাদীস নামে কোন রাজনৈতিক দল আছে বলে আমাদের জানা নেই। দেওবন্দ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এই প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব আলেম বের হয়ে এসেছেন তাদের মধ্যে যারা জামায়াতকে পছন্দ করেছেন তারা জামায়াতের সঙ্গে কাজ করছেন, আর যারা জামায়াতকে পছন্দ করেননি তারা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজ করছেন। আবার তাবলীগ জামাতের সঙ্গে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বা রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই। ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যার জন্যে তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম বলেছেন, সেগুলো সম্পর্কে তার সঠিক ধারণা আছে কিনা আমি জানি না। তবে এটি সত্য যে, ইসলামের সকল ব্যাখ্যার মানদ-ই হচ্ছে আল্লাহর কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহ। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) পরিষ্কার বলেছেন যে, তার কোন মতামত বা ব্যাখ্যা যদি কুরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী হয় তাহলে তার অভিমত বাতিল বলে গণ্য হবে এবং কুরআন-সুন্নাহকে অনুসরণ করতে হবে। আবার হানাফী মাযহাবের উসূল ফিকাহর সাথে জামায়াতের দ্বন্দ্ব কোথায় সেটাও মাননীয় বিচারপতি বলেননি। উসূল ফিকাহ্্ কুরআন বা হাদীস গ্রন্থ নয়, কুরআন-হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কোন ইমামের সাথে কোন আলেমের কোথাও যদি এখতেলাফ পরিদৃষ্ট হয় তাহলে তাতে কোন অপরাধ হতে পারে না।

রিট মামলার নিষ্পত্তির জন্য গঠিত বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি এম মোয়াজ্জেম হোসেনের রায়টি আমার কাছে অধিকতর যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়েছে। তার দেয়া রায়ে তিনি নির্বাচন কমিশনকে জামায়াতের নিবন্ধন ইস্যুটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তার রায়ে বলেছেন, রিটকারীদের মধ্যে ১২ জন ইসলামী রাজনীতির সাথে জড়িত। তারা জামায়াতকে স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দিয়ে তার বিরোধিতা করে। তাদের মধ্যে ৪ জন সরাসরি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সাথে যুক্ত। তাদের মধ্যে একজন তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল, একজন জাকের পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল, একজন সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি এবং একজন তরিকত ফেডারেশনের প্রচার সম্পাদক। রিটকারীদের ১০ জন সাধারণ নাগরিক। তারা তাদের বিশেষ পরিচয় দেয়নি এবং তারা কেন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করতে চান তাও উল্লেখ করেননি। অপর ৩ জন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ নামের সংগঠনের সদস্য। তারা জামায়াতে ইসলামী যাতে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে না পারে সে জন্যে আগ্রহী। বিচারপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তার রায়ে বলেছেন, নিবন্ধন বাতিলের এই আবেদন আইনী নয়, আবেগপ্রবণ। জামায়াতের মতো যোগ্যতা নিয়ে খেলাফত আন্দোলনও নিবন্ধন লাভ করেছে। কিন্তু আবেদনকারী পুরো বিষয়টি নিয়ে আদালতে আসেননি, তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয়। আবেদনকারীদের মামলা জামায়াতের ধর্মীয় চরমপন্থা জঙ্গীবাদ এবং জিহাদের দিকে ইঙ্গিত করে। চরমপন্থা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। জামায়াতের যেসব তৎপরতার কথা বলা হয়েছে তা সবই পুরনো এবং কোনটিই নতুন নয়। তিনি রায়ে বলেছেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের জন্য করা রিট গ্রহণযোগ্য নয়। এই প্রেক্ষিতে তিনি দলটির নিবন্ধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দিয়ে রুল নিষ্পত্তি করলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন। তার এই অভিমতটি আমার কাছে বেশ যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। বিচার আইন দিয়ে হয়, আবেগ দিয়ে নয়।

এখানে একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য-এই রিট আবেদনটি করা হয়েছিল ২০০৮ সালে। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলোর উৎসাহ, অর্থানুকূল্য ও প্ররোচনায়। যারা এই রিট করেছিলেন তাদের পরিচয় সুস্পষ্ট। এরা পীরপূজা ও মাজার পূজায় বিশ্বাসী এবং যেহেতু ইসলামে এর কোনটিরই স্থান নেই, সেহেতু জামায়াত পীর-মুরিদী ও মাজার ব্যবসা এর কোনটিকেই অনুপ্রাণিত করে না। আসলে জামায়াতের দাওয়াতী কার্যক্রম বাংলাদেশে পীর ও মাজার পূজার পথে যেমন অন্তরায় হয়ে পড়েছে তেমনি আওয়ামী লীগের ন্যায় ধর্মনিরপেক্ষতার নামে যারা ধর্মহীনতার প্রসার চান তাদের জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার বিএনপির সাথে জামায়াতের জোট এদের ক্ষমতা লিপ্সা ও লুটপাটেরও অন্তরায়। আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা ২০০৮ সালে সুপরিকল্পিতভাবেই এই রিট মামলাটি করিয়েছেন এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত তা তারা জামায়াতের মাথার উপর খড়গ হিসেবে রেখে দিয়েছেন। জামায়াতকে বিএনপি জোট থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়ে এবং আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকারের দুঃশাসন, অত্যাচার, অবিচার, দুর্নীতির বিরোধিতা করা থেকে বিরত রাখতে না পেরে তারা দলটিকে নির্মূল করার পথ অবলম্বন করেন। এ জন্যে তারা প্রথমেই জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তথাকথিত মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটনের মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ আনেন এবং তাদেরই সৃষ্ট গণজাগরণ মঞ্চ থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধকরণ এবং জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের দাবি তোলেন। এই দাবির প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী এই রিট মামলাটি পুনরুজ্জীবনের ঘোষণা দেন। এ থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, যে মামলা চার বছর পর্যন্ত মৃত অবস্থায় ছিল সেই মামলা সরকারই উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুনরুজ্জীবিত করেছেন এবং একই ধরনের অবস্থাসম্পন্ন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে শুধুমাত্র জামায়াতকেই এই মামলার বলী বানানো হয়েছে। আদালত এক্ষেত্রে কতটুকু নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বিচারকার্য সম্পন্ন করেছেন তা আমার জানা নেই, দেশের মানুষই তা বিচার করবেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ এই রায়ের ফলে জামায়াত তার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন না। কিন্তু তার রাজনীতি করার অধিকার থাকবে বলে আইন বিশ্লেষকরা মত প্রকাশ করেছেন। জামায়াত আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টে আপিল পেশ করেছে এবং আপিলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হবার কথা। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে আদালতের মাধ্যমে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। কথাটি কতটুকু সত্য আমি জানি না। তবে এ ধরনের কিছু যদি হয় তাহলে এর ফলে বাংলাদেশের সামাজিক স্থিতিশীলতার স্বাভাবিক ধারা যে বজায় থাকবে তা আশা করা যায় না। এ ধারা ব্যাহত হবে। কোটি কোটি মানুষের একটি সংগঠনকে আদালতের রায় দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না। নদী প্রবাহের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ হলে একাধিক পথ সে তৈরি করে নেয়। এতে জনপদে লাভ-ক্ষতি দুটোই আছে। তবে ভাঙনের পরিমাণই বেশি হয়। আমাদের সমাজে ভাঙনের চেয়ে বন্ধন জোরদার করার প্রয়োজনই এখন বেশি। আদালতের রায়ের মধ্যে বন্ধন জোরদারের উপাদানই মানুষ বেশি আশা করে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের আন্দোলন স্বাভাবিকভাবে চলবে না সহিংস হয়ে উঠবে তা সরকারের উপর নির্ভর করে। এর কারণ সরকারি উস্কানি এবং সরকারি অনুপ্রেরণায় সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিলোপ সাধন। অভিযোগ আছে যে, আমাদের মহামান্য উচ্চ আদালতের কয়েকজন বিচারপতি সরকারের সাথে যোগসাজশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে রায় দিয়ে সমাজ জীবনে যে স্থিতিহীন অবস্থার সৃষ্টি করেছেন তাতে যে হারে মানুষের জীবন ও সম্পত্তিহানি ঘটেছে তা ইতিহাসে বিরল। ত্রয়োদশ সংশোধনীর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছিল জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাটি আদালত সংবিধানের গণতান্ত্রিক কাঠামোর পরিপন্থী বলে বাতিল করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এখন কোন গণতন্ত্র বাংলাদেশে চলছে। সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারগুলো খর্ব করে কি তথাকথিত ফ্যাসিবাদ চর্চা করছেন না? তারা এসব করছেন আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে। আবার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অধীনে বিচারপতি হাবিবুর রহমান ও বিচারপতি লতিফুর রহমানের ন্যায় সাবেক প্রধান বিচারপতিরা প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। তারা কি অজ্ঞ ছিলেন, সংবিধানের গণতান্ত্রিক কাঠামো বুঝতেন না?
প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী-উপমন্ত্রী, উপদেষ্টা ও আজ্ঞাবহ ব্যক্তিরা সব সময় আদালতের দোহাই দিয়ে তাদের সকল গণবিরোধী কাজ চালিয়ে যান। আদালত অবশ্য সম্মানের পাত্র এবং আদালতকে অবমাননা করা অন্যায়। কিন্তু আদালত যারা পরিচালনা করেন তাদের এবং আমাদের বিচার বিভাগ নিয়ে সাধারণ মানুষের মূল্যায়ন দুঃখজনকভাবে অত্যন্ত খারাপ। ২০১০ সালে টিআইবি তার এক জরিপে বলেছে যে, বাংলাদেশে বিচার বিভাগই হচ্ছে দুর্নীতির শীর্ষে। এ নিয়ে দেশে অনেক হৈ চৈ হয়েছে। টিআইবির বিরুদ্ধে সরকার মামলাও করেছিলেন। এই মামলার যথার্থতা নিয়ে ঐ বছরের ২৮ ডিসেম্বর কয়েকটি পত্রিকা জনমত জরিপ করেছিল।

মানবজমিনের জরিপে ৮৬.১ শতাংশ পাঠক বলেছেন যে, এ মামলা সমর্থনযোগ্য নয়। বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর জরিপে ৯৮.২৫ শতাংশ পাঠক এই মামলাকে সমর্থন করেননি। ২৬/১২/১০ তারিখে প্রথম আলো পাঠকদের প্রশ্ন করেছিল, ‘দেশের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ বিচার বিভাগের দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার’ টিআইবির এই প্রতিবেদন তারা সমর্থন করেন কিনা। এর উত্তরে ৯৪.৭৪ শতাংশ লোক হ্যাঁ বলেছেন। ‘কালের কণ্ঠ’ ২৬/১২/১০ তারিখে তাদের একটি জরিপের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তারা পাঠকদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ টিআইবির এই রিপোর্ট তারা সমর্থন করেন কিনা। উত্তরে ৯৬.৭৪ শতাংশ উত্তরদাতা হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছেন। একই তারিখে একই ধরনের প্রশ্নের জবাবে সমকালের পাঠকদের ৮২.৫৪ ভাগ, ইত্তেফাকের পাঠকদের ৯০ শতাংশ, ‘আমাদের সময়ের পাঠকদের ৯২.৩৩ শতাংশ টিআইবির রিপোর্টের সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। ৩০/১২/২০১০ তারিখে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত এক জরিপ রিপোর্টে দেখা যায় যে, ৭১.৮৩ শতাংশ পাঠক টিআইবি চেয়ারম্যানের সাথে এই মর্মে একমত পোষণ করেছেন যে, দেশে আইনের শাসন নেই। চলছে অঘোষিত ফ্যাসিবাদ। একই তারিখে আমাদের সময় পত্রিকায় প্রকাশিত জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী ৯২.৩৫ শতাংশ পাঠক অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের সাথে একমত পোষণ করে বলেছেন যে, আইনের শাসনের দুর্বলতার কারণে কেউ কোথাও বিচার পাচ্ছে না। ১/৬/২০১২ তারিখে দৈনিক যুগান্তর স্পিকারের একটি মন্তব্য ‘আদালতের রায়ে যদি জনগণ ক্ষুব্ধ হয়, তাহলে তারা একদিন আদালতকেও রুখে দাঁড়াতে পারে’ এর উপর পাঠকদের একটি মূল্যায়ন ছেপেছে। এতে ৯০.০৪ শতাংশ পাঠক জাতীয় সংসদের স্পিকারের সাথে একমত পোষণ করেছেন। ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন, কিন্তু বিচারকরা নন’ ব্যারিস্টার রফিকুল হকের এই বক্তব্যের উপর প্রথম আলো ১৩/০৬/১২ তারিখে একটি জরিপ প্রতিবেদন ছেপেছে। এতে দেখা যায় যে, ৯৩.১১ শতাংশ পাঠক ব্যারিস্টার রফিকুল হকের সাথে একমত। তৎকালীন আইনমন্ত্রী শফিক আহমদ বিচার বিভাগ নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদনকে বিভ্রান্তিকর বলেছেন। ২৭/১২/১০ইং তারিখে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনের’ জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী ৯৭.১৬ শতাংশ পাঠক মন্ত্রীর এই বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

উপরোক্ত অবস্থা মাননীয় আদালত ও আমাদের বিচার বিভাগের জন্য সুখকর নয়। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে অচিরেই আমরা অসভ্য জাতিতে পরিণত হবো। জামায়াতের ন্যায় ন্যায়নিষ্ঠ একটি প্রতিষ্ঠানকে বেআইনী করার প্রক্রিয়ায় এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা দরকার বলে আমরা মনে করি।

https://dailysangram.info/post/532037