২৯ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ৮:২৮

সুশাসন ও অর্থনীতি

||ড. আবদুল লতিফ মাসুম||

বিশ্বব্যাংক সুশাসনের ছয়টি নির্ধারক নির্ণয় করেছে। এগুলো হলোÑ ১. জবাবদিহিতা, ২. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ৩. সহিংসতা তথা সন্ত্রাসের অনুপস্থিতি, ৪. সরকারের কার্যকারিতা, ৫. আইনের শাসন ও ৬. দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ। এ মাত্রা রাজনীতি, আমলাতন্ত্র এবং এনজিও সর্বত্র প্রযোজ্য। জনগণকে সেবাদানের প্রক্রিয়া এবং প্রায়োগিকতার বিচার বিবেচনায় এসব নির্ধারকের কথা বলা হয়েছে। সুশাসনের বিষয়টি আইনি কাঠামো, প্রত্যার্পিত ক্ষমতা এবং সেবাদানের মাত্রা বিচারের ওপর নির্ভরশীল। এতে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে সিভিল সোসাইটি, স্বার্থগোষ্ঠী, সামাজিক পুঁজি এবং দুর্নীতির বিষয়াদি। অপর দিকে রাষ্ট্রিক অর্থনীতির বিষয়াদি প্রধানত তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত, উৎপাদনের ধরন ও বিনিময়পদ্ধতি; দ্বিতীয়ত, সর্বাধিক লোকের সর্বাধিক সুখ নিশ্চিতকরণে যৌক্তিক আচরণ; তৃতীয়ত, সীমিত সম্পদের সুষম বণ্টন; সুশাসনের এসব ধারণা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সম্পদের সুষম বণ্টনের সাথে সংশ্লিষ্ট।
রাজনীতি ও অর্থনীতির বিভাজন এক রকম অসম্ভব। রাজনীতি অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে নাকি অর্থনীতি রাজনীতির নিয়ন্তা হবেÑ এ বিতর্ক অনেক পুরনো। অর্থনীতিবিদেরা বাজার ও উৎপাদনব্যবস্থার ওপরে রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রিক নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। আইন যদি উৎপাদনব্যবস্থা : শিল্পায়ন ও বাণিজ্যকে সহায়তা দান না করে তাহলে অর্থনীতি হবে বিপদাপন্ন। অপর দিকে, নির্দেশিত অর্থনীতি বা ‘কমান্ড ইকোনমিক্স’ দ্বারা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে না। পণ্ডিত ব্যক্তিরা একমত যে, রাজনীতি ও অর্থনীতির সমন্বয় না হলে রাষ্ট্রের সমৃদ্ধ হবে সুদূরপরাহত। কারণ ‘পলিটিক্স ইজ সামথিং মোর দ্যান ইকোনমিক্স’। সেখানে মানব চরিত্র সম্পর্কে হবসের নিরঙ্কুশ নেতিবাচক ধারণা এবং একই বিষয়ে হেগেলের ‘সর্বাত্মক স্বাধীনতার’ ধারণার সরল সমীকরণ হতে হবে। বিষয়টির সমন্বয় সাধনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’ বা পলিটিক্যাল ইকোনমি অভিধাটি আমদানি করেছেন। এখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা অর্থনীতি নির্ধারণে রাজনীতিবিদ তথা শাসকের ভূমিকা নির্ধারণের চেষ্টা করছেন। রাজনীতিবিদদের মুখ্য বিষয় যেহেতু রাজনীতি, সেহেতু তারা নির্বাচনী রাজনীতির ওপর অর্থনীতির প্রভাব প্রবৃদ্ধি নিয়ে বেশি চিন্তিত। তাদের কাছে মৌলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চেয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা অধিকতর অর্থবহ। তবে বর্তমান পৃথিবীর প্রবণতা অর্থনৈতিক প্রাধান্যের দিকে। এ কারণে কোনো কোনো সমাজবিজ্ঞানী রাষ্ট্রকে শুধু অর্থনীতি বা ‘ইকোনমি’ বলতে চাইছেন।
এ রকম কঠিন তত্ত্বকথার অবতারণা এ কারণেই যৌক্তিক মনে হলো যে, গত সপ্তাহে (২৩-২৪ এপ্রিল ২০১৭) বিষয়টি নিয়ে রাজধানীতে এক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ জার্নি : অ্যাক্সিলারেটিং ট্রান্সফরমেশন’ বা বাংলাদেশের যাত্রা : দ্রুততর রূপান্তর শীর্ষক সম্মেলনে এ বিষয় দেশের বিজ্ঞজনমণ্ডলী তাদের গুরুত্বপূর্ণ অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে দুই দিনের এই সম্মেলনের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানÑ বিআইডিএস। এ সম্মেলনে সুশাসন, শিক্ষা, উন্নয়নের সম্ভাবনা, শ্রমবাজার, মা ও শিশুর পুষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে বিষদ আলোচনা করা হয়। সুশাসনের বিষয়টি মূল বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। অন্য বিষয়ের আলোচকেরাও উপসংহারে সুশাসনের বিষয়ে আলোকপাত করেন। প্রশ্ন উত্থাপিত হয় ‘বাংলাদেশ কী সুশাসন ছাড়া ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন করতে পারবে?’ এ বিষয় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক কাজী আলী তওফিক। নিবন্ধে প্রকারান্তরে স্বীকার করা হয় যে, দেশে সুশাসন নেই। অনেক ক্ষেত্রে সুশাসন না থাকার পরও বাংলাদেশে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর বলে মনে করা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, ‘সুশাসন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়তো আরো কিছু দিন চলবে। শেষ পর্যন্ত এটি চলবে না। পাঁচ বা ১০ বছর পরে বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।’ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাতারাতি সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে নাÑ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখনই সুশাসনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হলেও আগামী ১০-১৫ বছরের আগে অবস্থার পরিবর্তন হবে না।
সম্মেলনে সুশাসন ও উন্নয়ন পর্বের সভাপতি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং ‘পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন সেন্টার’-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান, অর্থনীতির মূল বিষয়ের অবতারণা করেন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় থাকা না থাকার চেয়ে, প্রবৃদ্ধি বাড়বে কি না সেটি আলোচনা হওয়া দরকার। এক দশক ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একই জায়গায় আটকে আছে। তিনি আরো বলেন, দেশের সবখানে সমঝোতার নির্বাচন দেখা যাচ্ছে। শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রে এমনটি হচ্ছে তা নয়। বিভিন্ন পেশাজীবীর ক্ষেত্রেও তা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলার কোনো প্রক্রিয়া নেই। স্থানীয় নেতাকর্মীদের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে চলতে হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি না হওয়ার ক্ষেত্রে এগুলোর প্রভাব পড়ছে। একই সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ১৯৯০-এর দশকের পর থেকেই দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধরন স্থিতিশীল। এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি হলেও সেটি স্থিতিশীল হয়নি। বাংলাদেশে সুশাসন ছাড়াই এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছেÑ সুশাসন ছাড়া এ প্রবৃদ্ধি বজায় থাকবে কি না। রাজনীতি দোদুল্যমান হলেও অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গুড গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’-এর ফেলো মীর্জা হাসান। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিকেরা সমঝোতার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সুবিধা ভাগ করে নিয়েছে। একটি দল কুক্ষিগত না করে দলগুলোর মধ্যে সুবিধা ভাগ করেছে, যা প্রবৃদ্ধিকে ধরে রেখেছে। উন্মুক্ত আলোচনায় সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে মারামারি, বিশৃঙ্খলা অশান্তি তৈরি করছে, যা প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে। বিভিন্ন রকম ফায়দা পেয়ে পেশিশক্তির লোকজন রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করছেন। এদের অনেকের আধুনিক রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালনা করতে হয়, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাদের লক্ষ্য টাকা-পয়সা বানানো এবং পাচার করা।
তাদের এ ধরনের বিবিধ বক্তব্য সারসংক্ষেপ হিসেবে এভাবে উপস্থাপন করা যায়Ñ ‘তিন দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল। তবে এ প্রবৃদ্ধি বেশি দিন বজায় থাকবে না। আগে নি¤œ অর্থনীতির দেশ হওয়ায় উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্র ছিল, ফলে সুশাসন এতটা জরুরি ছিল না। এ পর্যায় অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে দেশে সুশাসন জরুরি।’ বস্তুত দেশের উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের হাল-হকিকত এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যথার্থ মন্তব্য করেছেন। দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছেÑ এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সুশাসনের অভাব থাকায় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের সুফল সাধারণ জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন করছে না। উইপোকা যেমন ভেতরে ভেতরে সব কিছু খেয়ে ফেলে, ঠিক তেমনি দৃশ্যমান সুশাসনের অভাবে সরকারের জনপ্রিয়তা কোনো কাজে আসছে না। সর্বোপরি নিবন্ধের শুরুতে আমরা সুশাসনের যে নির্ধারকগুলো দেখেছি তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থাকে পর্যালোচনা করলে আরো কিছু বিষয় বেরিয়ে আসবে। প্রথমত, জবাবদিহিতার মাত্রায় যদি আমরা বর্তমান সময়কে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাবো জাতীয় সংসদ অকার্যকর। বিচার বিভাগ নিজেই আতঙ্কগ্রস্ত। দুর্নীতি দমন কমিশন বিরোধী দমনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যম স্বেচ্ছামূলক সেন্সরের পথ বেছে নিয়েছে। বহুলাংশে তারা প্রশংসা প্রশস্তিতে ব্যস্ত। কোনো প্রতিষ্ঠান তার নিজ ধারায় নিজ আইনকানুন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারছে না। সর্বত্রই দলীয়করণের নমুনা প্রকট। উদাহরণ হিসেবে তৃণমূলপর্যায়ে পৌরসভা ও ইউনিয়ন কাউন্সিলের কথা বলা যেতে পারে। সেখানে ছিটেফোঁটা ভিন্নমত, যা আছে তা হামলা-মামলা দিয়ে নির্মূল করা হচ্ছে। এই সে দিন নির্বাচিত কুমিল্লার মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, সুশাসনের আরেকটি বড় শর্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকারটি ক্ষমতায় এসেছে তাদের স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণে একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ‘শক্তি প্রয়োগ’। বিরোধী প্রায় সব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ শক্তি প্রয়োগের নির্মম নিষ্ঠুরতার শিকার। দেশে মৌলিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা এবং সমাবেশের স্বাধীনতা এক রকম অনুপস্থিত। এখানে পরিবেশ আন্দোলনের দায়ে লাঠিপেটা করা হয়। ছাত্রদের পেশাগত সমস্যার জন্য আহূত মিছিল পুলিশ পিটিয়ে দেয়। স্থিতিশীলতা যদি মৌলিক অধিকার অস্বীকার করার নাম হয়, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা রয়েছে। নির্বাচন যদি শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের নিয়ামক হয়, তাহলে বাংলাদেশে তা অনুপস্থিত। তৃতীয়ত, সহিংসতা ও সন্ত্রাসের যে মাত্রা প্রতিদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলার জন্য যথেষ্ট। সন্ত্রাস দমন করতে গিয়ে এক একটি জায়গায় মরছে মানুষÑ এ প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে অ্যাকশনের আইনগত ভিত্তি নিয়ে। চতুর্থত, সরকারের কার্যকারিতা প্রসঙ্গে বলা যায় এ মুহূর্তে প্রায় প্রতিটি প্রকল্প স্থবির অথবা অসমাপ্ত রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ থেকে রাজনৈতিক কর্তৃত্বশালীÑ সবাই আইনকে অগ্রাহ্য করছে। পঞ্চমত, আইনের শাসনের কথা এ সময়ে বাতুলতা মাত্র। একই আইনের প্রয়োগ এবং অপপ্রয়োগ প্রকাশ্যেই ঘটানো হচ্ছে। ষষ্ঠত, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারাই দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। সামাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি প্রবেশ করেছে। নিরাপত্তাকর্মী থেকে সেনাকর্মকর্তা কেউই নিরাপদ নয়। সীমান্ত হত্যা এবং রোহিঙ্গা ইস্যু আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। সামগ্রিকভাবে সুশাসনের পরিবর্তে দেশে কুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
শাসন বা সুশাসনের সাথে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের একটি সঙ্গতি এবং সুসম্পর্কের কথা তাত্ত্বিকভাবে আলোচিত হয়েছে। আমরা কী অর্থনৈতিক অবস্থানে আছি তা সবারই জানা কথা। অর্থনীতির প্রাণ হিসেবে ১. গার্মেন্ট শিল্প, ২. বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের রেমিট্যান্স, ৩. কৃষকের ঘামঝরা ফসলÑ এ তিনটি বিষয়ের ওপর বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত। এ তিনটির সাথে সরকারের সম্পৃক্ততা বা অবদান নামমাত্র। সরকার এখন পর্যন্ত এমন কোনো খাত সৃষ্টি করতে পারেনি, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করবে। যতটুকু অর্জিত হয়েছে ততটুকু প্রধানত ব্যক্তি উদ্যোগ, যৌথ ব্যবস্থাপনা এবং শ্রমিকের ঘামের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ বাঁচার জন্য বা দুই মুঠো অন্ন সংস্থানের জন্য এখন কঠোর পরিশ্রম করে। এ পরিশ্রম নিজেদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করতে না পারলেও ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির চাকা সচল করেছে। উৎপাদনের উপায়-উপকরণের ওপরে সরকারের কর্তৃত্ব, পণ্যসামগ্রীর বিপণন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে সরকারের লোকেরা অর্থনীতিকে নিজেদের ভোগ-বিলাস, আরাম-আয়েশের বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে। অর্থনীতি ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে।
রাজনীতির সাথে অর্থনীতি যেমন সংশ্লিষ্ট, তেমনি সুশাসনের সাথে সুষম বণ্টনও সম্পৃক্ত। সুতরাং শিল্পে অথবা তৃণমূলে উৎপাদনের কর্মীরা অর্থনৈতিকভাবে যদি সুষম ও নিরাপদ না থাকে তাহলে তাদের কাছে গণতন্ত্রও অর্থহীন। যত দিন দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হবে, তত দিন মানুষকে সুশাসনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃতপক্ষে কখনই সুশাসনের স্নিগ্ধ আলো দেখেনি। গণতন্ত্রকে অনেকে সুশাসনের পরিপূরক অথবা পূর্বশর্ত বলে থাকেন। একটি গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মিত হলে মানুষ সুশানের সুফল ভোগ করতে পারবেÑ এমন আশায় দিন গুনছে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/215917