৭ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, ১২:৩০

এবার গরমের অজুহাতে চড়েছে ডিমের দাম

রাজধানীর বাজারগুলোতে এক সপ্তাহে ফার্মের ডিম প্রতি ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে। বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের লাল ডিমের দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। পাড়া-মহল্লার কিছু দোকানে একই ডিমের দাম উঠেছে ডজন ১৬০ টাকা পর্যন্তু। খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে তাঁদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রচণ্ড গরমে খামারে ডিমের উৎপাদন কমেছে। এ ছাড়া নানা কারণে খামারিদের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। এর ফলে গত এক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে প্রতি ১০০ ডিমের দাম বেড়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত। আর খামার পর্যায়ে প্রতি ১০০ ডিমে বেড়েছে ৭০ টাকা পর্যন্ত।

গতকাল রবিবার রাজধানী এবং রাজধানীর বাইরের কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে ডিম ব্যবসায়ী ও খামারিদের কাছ থেকে এসব তথ্য মিলেছে।

বাজারের চেয়ে পাড়া-মহল্লার দোকানে ডিমের দাম বেশি রাখার কারণ জানতে চাইলে গুলশানের কালাচাঁদপুরের মুদি দোকানি মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘বাজারের দোকানগুলোতে পাইকারি বিক্রেতারা ডিম পৌঁছে দিয়ে যান। আর আমাকে বাজারের দোকানদারদের কাছ থেকে নিজ খরচে কিনে আনতে হয়। সে কারণে বাধ্য হয়েই বাজারের তুলনায় একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাড্ডার ডিমের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, ‘এখন প্রতি ডজন ডিম ১৪৪ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বিক্রি করছি ১৫০ টাকায়। ডিমের দাম বাড়ালে বিক্রি কমে। আমাদের লাভও কমে যায়।’

কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী মো. মহিন বলেন, ‘ডিমের দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে এখন ফার্মের লাল ডিম প্রতি ডজন ১৫০ টাকা, আর সাদা ডিম ১৪৫ টাকায় বিক্রি করছি।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আমানউল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের কারণে খামারিদের ডিমের উৎপাদন কিছুটা কমেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এর ফলে গত এক সপ্তাহে প্রতি ১০০ ডিমের দাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পাইকারিতে এখন প্রতি ১০০ ডিম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে এক হাজার ২০ থেকে এক হাজার ৩০ টাকায়।’

ক্রেতারা বলছেন, সাশ্রয়ী দামে প্রোটিনের অন্যতম বড় উৎস ডিম। কিন্তু নতুন করে মূল্যবৃদ্ধিতে সেই প্রোটিনের উৎসও প্রায় হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

উত্তর বাড্ডার বাজারে কথা হয় রিকশাচালক মো. সুমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মাছ ও ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার পর থেকে এসব খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। ৪৫ টাকা হালির ডিম এক সপ্তাহে বেড়ে এখন হয়ে গেছে ৫৫ টাকা, এখন ডিম খাওয়াও ছেড়ে দিতে হবে।’

রাজধানীর বাইরের দাম
এক মাসের ব্যবধানে সাভারে খুচরা বাজারে ডিমের দাম হালিতে অন্তত ছয় টাকা বেড়েছে। আশুলিয়ার বাইপাইলের খুচরা দোকানি আলামিন হোসেন বলেন, ‘আমরা খুচরা ৫০ টাকা হালি ডিম বিক্রি করছি। পাইকারি কেনা পড়ে প্রায় ৪৮ টাকা। মাসখানেক ধরে দাম বেড়েছে। আগে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা হালি বিক্রি করতাম।’

সাভারের আশুলিয়ার ইয়াসিন পোলট্রি ফার্মের মালিক মো. শওকত হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন ডিমের দাম কিছু না কিছু পরিবর্তন হয়। এটা নির্ভর করে ডিমের আড়তদার ও সমিতির ওপর। বর্তমানে খামার থেকে ১০০ ডিম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০ টাকায়। মুরগির খাদ্যের দাম বাড়ার ফলে ডিমের দামও বাড়ছে।’

গাজীপুরের শ্রীপুরের সাতখামাইর বাজারের তারেক স্টোরের মালিক তারেক হাসান বলেন, ‘দুই দিন ধরেই দাম বাড়ছে। আমি সরাসরি খামার থেকে ডিম কিনি। আজ (রবিবার) সকালে ডিম কিনতে হয়েছে প্রতি ১০০ ডিম এক হাজার ১৫০ টাকা দরে। আগের দিন কিনেছিলাম এক হাজার ১০০ টাকা দরে। তার আগে কয়েক দিন এক হাজার ৮০ টাকা দরে কিনেছি। গত কয়েক দিনে প্রতি ১০০ ডিমে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে, যার কারণে প্রতি হালি ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’

সাতখামাইর পশ্চিম পাড়া গ্রামের পোলট্রি খামারি সোহরাব হোসেন হিরন জানান, পাঁচ দিন আগে হঠাৎ ভুট্টার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। ভুট্টার দাম বাড়ায় খাবারের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেড়েছে। একই সঙ্গে গরমের কারণে খামারের উৎপাদনও কিছুটা কমেছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডিমের দাম বাড়ছে। এখন ডিমপ্রতি উৎপাদন খরচই পড়ে ১০ টাকা ২০ পয়সা।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/08/07/1306005