৭ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, ১২:২৪

নেটওয়ার্ক ভোগান্তি

কলড্রপ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মুঠোফোন গ্রাহকরা। সমস্যাটি দীর্ঘদিনের হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ভোগান্তি অনেকাংশে বেড়েছে। ভোগান্তির পাশাপাশি গ্রাহকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মোবাইল অপারেটরের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, মোবাইল অপারেটররা ভয়েস কলের পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল্য দিন দিন যেমন বাড়াচ্ছে ঠিক সেভাবে সেবার মান বৃদ্ধি করছে না। কম বেশি সব অপারেটরের সেবার মান প্রায় একই। গত বছরের জুন মাসে মানসম্পন্ন সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গ্রামীণফোনের সিম বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর সেবার মান কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তাদেরকে আবার সিম বিক্রির অনুমতি দেয় নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। কিন্তু ঘুরেফিরে সেবার মান আগের মতোই হয়েছে।

বিটিআরসি বলছে, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে সব ধরনের সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়েছে।

সেবার মান বৃদ্ধি করার জন্য একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। সেখানে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। দ্রুত সেবার মান বৃদ্ধি করার জন্য বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চাপ দেয়া হয়েছে। সংস্থাটি আশা করছে শিগগির অপারেটরগুলো গ্রাহকের মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারবে।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, এই সমস্যাটা নিয়ে আমরা হাইকোর্টেও রিট করেছি। হাইকোর্ট থেকেও বিটিআরসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো উন্নতি হয়নি। এখানে অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা আছে। শুধুমাত্র মোবাইল অপারেটর সার্ভিসের সঙ্গে একা জড়িত না। ২১টি প্রতিষ্ঠান এই সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত। এদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা দরকার। সেগুলোও হচ্ছে না। বিটিআরসি এনবিআরের মতো টাকা আদায়ের প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। গ্রাহক সেবার মানোন্নয়নে তাদের খুব একটা ভূমিকা আছে বলে মনে করছি না। তিনি বলেন, ১৮ কোটির উপরে মুঠোফোন গ্রাহক। অথচ ঢাকায় হাতের নাগালে কোম্পানিগুলোর সার্ভিস সেন্টার খুঁজে পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে বিটিআরসি’র কোনো নির্দেশনা নাই। গ্রাহকরা সেবা নেয়ার জন্য কোথায় যাবে? সত্যিকার অর্থে গ্রাহকরা চরম অবহেলিত ও ভোগান্তিতে আছে। গ্রাহকদের অর্থ লোকসান হচ্ছে কিন্তু তারা ভালো সেবা পাচ্ছে না। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, হাইকোর্টের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রাহকের কলড্রপ হলেই মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিপূরণও দেয়া হচ্ছে না।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, কলড্রপ ও নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে আমরা গ্রামীণফোনের সিম বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিছুদিন বন্ধও ছিল। দুই মাস আগে দেখলাম সেটার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। পরে আমরা আবার সিম বিক্রির অনুমতি দিয়েছি। নেটওয়ার্ক সমস্যায় মোবাইল অপারেটরকে যে পরিমাণ ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ করা দরকার আমরা সেগুলো তাদেরকে দিয়েছি। কিন্তু শুধু ফ্রিকোয়েন্সি দিয়েই কাজ হবে না। আনুষঙ্গিক আরও যন্ত্রপাতি আছে সেগুলো বসাতে হবে। এগুলোর কার্যক্রম চলাকালে করোনা পরবর্তী ধাক্কা এসে পড়ে। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজে কিছুটা ধীরগতি আসে। কিন্তু তারা চেষ্টা করছে দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য। তিনি বলেন, নেটওয়ার্ক সমস্যার ভুক্তভোগী আমরা সবাই। এজন্য আমরা তাদের উপর যতটা চাপ প্রয়োগ করা যায় সেটিই করছি। আমরা প্রায়ই এসব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠক করি। এসব বৈঠকে আরও কতোদিনের ভেতরে সমাধান হবে এ ধরনের একটা সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়।

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শামসুল আলম মানবজমিনকে বলেন, মোবাইল অপারেটর কোম্পানির বিরুদ্ধে হাজার হাজার অভিযোগ জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরে জমা হয়ে আছে। কিন্তু তারা মামলা সংক্রান্ত কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। মোবাইল অপারেটর কোম্পানি অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। ওই মামলায় মোবাইল অপারেটর হেরে গিয়ে আবার আপিল করেছে। আপিলেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো সুবিধা করতে পারেনি। মামলা করার কারণে তারা জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে চলে গেছে। তারা মানসম্পন্ন সেবা না দিয়েও আপিল করার কারণে আইনি ব্যবস্থা থেকে সুরক্ষা পেয়ে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে বিটিআরসি’র ভূমিকা তেমন নাই। কারণ সরকারের কোনো অফিসই জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে আমরা দেখি না। তারা কিছু করতে পারবে বলেও মনে করি না। গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার্থে কিছু করলে কনজ্যুমার এসোসিয়েশনই করতে পারবে।

https://mzamin.com/news.php?news=68235