৭ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, ১২:২৩

জেলেদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প

পরামর্শ নিতেই ব্যয় হবে ৪১ ভাগ অর্থ

প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অথচ এতে পরামর্শক খাতেই খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৪০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। পরামর্শক খাতে এই ব্যয়কে অনেক বেশি বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। ‘ফিশারিজ লাইভলিহুড ইনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট ইন দ্য কোস্টাল এরিয়া অব দ্য বে অব বেঙ্গল (এফআইএলইপি)’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টরাও এটিকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনুদান দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করতে আজ অনুষ্ঠিত হবে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। সভায় পরামর্শক খাতের খরচসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। যুগান্তরকে এমনটিই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) একেএম ফজলুল হক রোববার যুগান্তরকে বলেন, এটি অনুদানের প্রকল্প। এজন্য হয়তো বেশি পরামর্শক ব্যয় রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে এটি কারিগরি সহায়তা (টিএ) প্রকল্প হওয়ায় পরামর্শক খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। তবে কারণ যাই হোক না কেন, এর যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা হবে সোমবারের (আজ) বৈঠকে। সেখানে পর্যালোচনা করে যতটা সম্ভব ব্যয় কমানো হবে। প্রয়োজনের বাইরে খরচ করার সুযোগ নেই।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের প্রকল্পে এত টাকায় পরামর্শক নেওয়ার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হয় না। এখানে মূল উদ্দেশ্য হলো প্রান্তিক মানুষকে সহায়তা দেওয়া। সেখানে ১০০ টাকা খরচে প্রায় ৪১ টাকা পরামর্শকের পেছনে ব্যয় হওয়াটা মোটেই কাম্য নয়। এর সঙ্গে প্রশাসনিক ব্যয় তো আছেই। এটি দেখে মনে হচ্ছে প্রান্তিক মানুষ নয়, পরামর্শকরাই এখানে সুবিধাভোগী। এত ছোট প্রকল্পে এত পরামর্শক ব্যয় কিছুতেই যৌক্তিক হতে পারে না। এমন প্রস্তাব বিস্ময়কর মনে হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ কোটি ৩ লাখ এবং জাইকার অনুদান থেকে ব্যয় হবে ৪১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি কক্সবাজার জেলার কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। এসব এলাকায় ছোট আকারের উপকূলীয় মৎস্যচাষের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর জীবনমান উন্নয়ন করা হবে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে এটি বাস্তবায়ন করবে যৌথভাবে মৎস্য অধিদপ্তর ও জাইকা। প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, ৪২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা প্রায় ৪০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এই ব্যয় অত্যধিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এ বিষয়ে পিইসি সভায় ব্যাখ্যা চাওয়া প্রয়োজন। এছাড়া প্রকল্প এলাকার মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য ‘সাসটেইনেবল মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্পের আওতায় ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনবিএফ) কাজ করছে। এ অবস্থায় একই এলাকায় একই উদ্দেশ্যে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে কাজের দ্বৈততা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নোত্তর পর্যায়ে প্রকল্পগুলোর ফলাফল নিরূপণে জটিলতা সৃষ্টি হবে কি না, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন রোববার যুগান্তরকে বলেন, পিইসি সভায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পরামর্শকের বিষয়টি আমারও চোখে পড়েছে। এত টাকা ব্যয় প্রস্তাব অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। এ কারণে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করে পরামর্শক ব্যয় কতটা কমানো যায়, সেটির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান থাকলে সাধারণত তারা চায় পরামর্শক থাকুক।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে ক্ষুদ্র মাপের উপকূলীয় মৎস্যজীবী পরিবারের জীবিকা উন্নত করা এবং সুবিধাভোগীদের জন্য কৃষি সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে। এছাড়া সুবিধাভোগীদের জীবিকার সহায়তা দেওয়া, উপযুক্ত উপকূলীয় জলজ চাষ প্রযুক্তির প্রদর্শনী, সামুদ্রিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি এবং বাজারচালিত মৎস্য মূল্য শৃঙ্খল উন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি অফিস সরঞ্জাম হিসাবে ল্যাপটপ, ফটোকপিয়ার, মাল্টিমিডিয়া স্কিন এবং এয়ার কন্ডিশনার কেনা হবে। সেই সঙ্গে কেনা হবে পরামর্শক সেবাও।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কক্সবাজার দেশের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত এলাকাগুলোর মধ্যে একটি। যেখানে জেলার প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে এবং ১৭ শতাংশ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। এ কারণে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর অতিরিক্ত আর্থসামাজিক বোঝা চেপেছে। বেশির ভাগ স্থানীয় সম্প্রদায় তাদের জীবনযাত্রার জন্য কৃষি ও মৎস্যচাষের ওপর নির্ভরশীল। কক্সবাজারের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ২৮ শতাংশ মাছ ধরা এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/704172