৭ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, ১২:১৯

রাজধানীর সড়কে খানাখন্দ

চরম দুর্ভোগে নগরবাসী

রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। অসংখ্য ছোট বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় কোন কোন সড়ক চলাচলের প্রায় অনুপোযোগী হয়ে গেছে। কয়েকটি সড়ক থেকে ম্যানহোল চুরি হওয়ায় সেখানে বাঁশ দিয়ে রাখা হয়েছে। এসব ভাঙ্গাচোরা সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে নানা অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে পথচারী থেকে সব ধরনের যাত্রীদের। সড়কগুলো দীর্ঘ দিন ধরে খানাখন্দে ভরা থাকলেও মেরামতে কোনো উদ্যোগ না থাকায় অসন্তুষ্ট নগরবাসী।

রাজধানীর মুগদা-বাসাবো-মানিকনগর এলাকার অধিকাংশ রাস্তা এখন চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে গেছে। বিশ্বরোড থেকে গ্রিন মডেল টাউনমুখী সড়কে ঢুকতেই বড় বড় গর্ত রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বরোড থেকে বাশার টাওয়ার পর্যন্ত পুরো সড়কেই অসংখ্য খানাখন্দ রয়েছে। মুগদা থেকে বাসাবো যেতে মূল সড়ক ওয়াসা রোড। কিন্তু এ সড়কের অবস্থা বর্তমানে খুবই করুণ। গত প্রায় তিন মাস আগে ঢাকা ওয়াসা সড়ক দিয়ে নতুন পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করেছে। এ সময় সড়কের অসংখ্য স্থানে আড়াআড়িভাবে কাটা হয়েছে। ওয়াসা কাজ শেষ করে চলে গেছে। নিয়ামনুযায়ী সিটি করপোরেশনের ওই সড়ক মেরামত করার কথা। কিন্তু তাদের কোনো খবর নেই। ফলে বর্তমানে অসংখ্যা কাটাস্থানের পাশাপাশি অসংখ্য গর্তের কারণে সাধারণ পথচারী থেকে রিকশাযাত্রীসহ সব ধরনের গাড়ি চলাচলে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে। সম্প্রতি বৃষ্টি হলেই মুগদা ৫০০ শয্যার হাসপাতালের সামনে হাঁটুপানি জমে যাচ্ছে। ফলে ওই সড়কের কয়েকটি স্থানে গর্ত তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেটি মেরামতে কোনো নজর নেই। বরং সড়কের একটি ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকায় সেখানে গাড়িচালকদের সতর্ক করতে প্রায় এক মাস ধরে একটি বাঁশ দিয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানে মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীতে ভর্তি রয়েছে। ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার মানুষ চলাচল করছে। ফলে তাদের নিয়মিত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। মুগদা বিশ্বরোডের টিটিপাড়া একটি ব্যস্ততম এলাকা। এখানে সাম্প্রতিককালে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। সেখানে অনেকগুলো গর্ত তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও গামী সড়কের বেশির ভাগ অংশ ফেটে গেছে। কোথাও ছালবাকলও উঠে গেছে।
সেগুনবাগিচায় মধ্যবর্তী একটি ছোট সড়কে ৯ মাস ধরে ড্রেন লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। সম্প্রতি স্লাব স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এরপর কাটা স্থানে খোয়া ফেলা হয়েছে। কিন্তু পিচ ঢালাই করা হয়নি। ওই সড়কটির কারণে দীর্ঘদিন থেকে এলাকাবাসীসহ সড়ক ব্যবহারকারীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। একটি ড্রেন নির্মাণের কাজ শেষ করতে কত দিন লাগতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।

গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশন রোডে বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। বৃষ্টি শেষ হলেও এ পানি সরতে অনেক সময় চলে যায়। এ কারণে ওই সড়কেও বেশ কয়েকটি গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির সময় জমা পানির মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন ঘেঁষে কমলাপুরমুখী সড়কে বছর খানেক আগে পিচ ঢালাই করা হয়েছিল। কিন্তু সড়কের অনেকস্থানেই এখন খানাখন্দ।

মতিঝিলের সাদেক হোসেন খোকা অডিটোরিয়াম সংলগ্ন আশপাশের সড়কগুলোরও বেহাল দশা। মধুমতি সিনেমা হলসংলগ্ন সড়কের অবস্থা তো ভয়াবহ। উচুনিচু ঢেউ সৃষ্টি হয়েছে এ সড়কে। চরম দুর্ভোগ নিয়েই এসব সড়ক দিয়ে চলতে হচ্ছে নগরবাসীকে। কমলাপুর এবং মতিঝিল এলাকায় মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে দীর্ঘদিন থেকেই আশপাশের সড়কের অবস্থা ভঙ্গুর। এসব সড়ক নগরবাসীর দুর্ভোগের অন্যতম এক কারণ হয়ে উঠেছে।

গুলিস্তানের সাবেক সিনেমা হলের সামনের সড়কের অর্ধেকই দখল করে ব্যবসা চালাচ্ছেন হকাররা। এর বিপরীত পাশ দিয়ে যানবাহন চলতে পারলেও বড় বড় গর্তের কারণে চলাচলই যেন দায় হয়ে পড়েছে। এভাবে রাজধানীর মূল সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই কোথাও না কোথাও সড়কে গর্ত তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে সিটি করপোরেশনের তেমন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।

জাকির নামে মুগদা এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, মুগদার ভেতরের প্রতিটি সড়ক থেকে অলিগলি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। কোথাও ম্যানহোল খোলা, আবার কোথাও ম্যানহোল উঁচু-নিচু। এ ছাড়া ছোট বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। মুগদার মূল সড়ক এবং ওয়াসা রোডের যে ভয়াবহ অবস্থা তাতে এসব সড়ক দিয়ে রিকশা চলার সময় কোন যাত্রী স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না। সারা শরীর ব্যথা হয়ে যায়। কোনো গর্ভবতী নারী এ সড়ক দিয়ে রিকশায় গেলে পথেই তার বাচ্চা প্রসব হয়ে যাবে এমন অবস্থা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে সড়কে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সাময়িকভাবে এগুলো মেরামতের চেষ্টা করছি। এ ছাড়া সড়ক উন্নয়নে একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। আশা করি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তখন আর সমস্যা থাকবে না।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/767947