৭ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, ১২:১৭

চট্টগ্রামে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ

পরস্পরকে দুষে দায় সারার চেষ্টা সিডিএ ও সিটি করপোরেশনের

টানা বর্ষণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার সড়ক, অলিগলি, বাজার, দোকানপাট ও বাসাবাড়ি পানি নিমজ্জিত রয়েছে। ভাটার সময়ও পানি ফুলে উঠায় পানি নিমজ্জিত অবস্থার ভয়ানক রূপ প্রত্যক্ষ করছে চট্টগ্রামবাসী। পানির অস্বাভাবিক উচ্চতার কারণে নতুন করে বিভিন্ন বাসাবাড়ি দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে এখানকার বাসিন্দারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। নিচতলার হাজারো বাসায় চুলা জ্বলেনি। আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক নালার পানিতে ডুবে গেছে। বিপুলসংখ্যক দোকানের মালামাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে পড়েছে। ফলে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া বেশির ভাগ সড়ক পানি নিমজ্জিত থাকায় স্থানীয় বাসিন্দা ও জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া লোকজন, স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রিকশা-ভ্যানে চড়ে চরম ভোগান্তি নিয়ে নারী-শিশুসহ সব বয়সী মানুষ চলাচল করেছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, এত পানি চট্টগ্রামের মানুষ সাম্প্রতিক সময়ে দেখেনি। সেই সাথে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বছরের পর বছর ধরে চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কার্যকরতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। এমন পরিস্থিতির জন্য সিডিএ এবং সিটি করপোরেশন পরস্পরের প্রতি দোষারোপেই দায় সারতে ব্যস্ত। জনভোগান্তি নিরসনে কারো যেন মাথা ব্যথা নেই।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, গতকাল রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস ২৩১ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। আজ সোমবার এবং আগামীকাল মঙ্গলবারও ভারী বর্ষণ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড়ধসের আশঙ্কার কথাও জানান তিনি।

গত দুই দিন ধরেই থই থই পানিতে ডুবেছিল বিস্তীর্ণ নগরী। গতকাল সকাল থেকে আবার ভারী বৃষ্টিতে বহদ্দারহাট, চকবাজার, চান্দগাঁও, ফরিদার পাড়া, বারইপাড়া, কে বি আমান আলী রোড, শুলকবহর, মুরাদপুর, বাদুরতলা, কাপাপগোলা, কাতালগঞ্জ, ফুলতলী, বউবাজার, রাহাত্তর পুল, কালাম মিয়া বাজার, খাজা রোড, খতিবের হাট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, দুই নম্বর গেট, আকবরশাহ, ঝাউতলা, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, ডিসি রোড, সিরাজউদ্দৌলা সড়ক, বাকলিয়াসহ নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। এসময় নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন বাজার এবং দোকানপাট পানি নিমজ্জিত ছিল। গতকাল দুপুরের পর বৃষ্টিপাত কমে এলেও বিস্তীর্ণ সড়ক, অলিগলি পানি নিমজ্জিতই ছিল। সে সময় ভাটার টান থাকলেও পানি যেন নামছিলই না। ফলে নতুন করে বিভিন্ন বাসাবাড়ির নিচতলা, বিভিন্ন দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। গতকালের অস্বাভাবিক উচ্চতার পানিতে হাজারো বাসার নিচতলা ডুবে যাওয়াতে রান্নার চুলা জ্বলেনি। বিভিন্ন দোকানে পানি ঢুকে বিপুল মালামাল নষ্ট হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংকগুলো পানি নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। আবার কোথাও আন্ডারগ্রাউ›ড ট্যাংক না ডুবলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ওভারহেড ট্যাংকে পানি উঠান যায়নি। ফলে নগরবাসীকে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কার্যত গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে বিভিন্ন সড়কে বিশেষ নগরীর প্রধান সড়ক সিডিএ এভিনিউ ও বহদ্দারহাট-চকবাজার সড়কে। পাহাড়ের ২৫০ পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

এদিকে প্রবল বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোতে বসবাসরতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করেছেন। গত শনিবার রাতে আকবরশাহ এলাকার বিজয় নগর ও ঝিল পাহাড়গুলোতে অভিযান চালিয়ে ২৫০টি পরিবারকে দু’টি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ।

চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। সিডিএ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পৃথকভাবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বছরের পর বছর ধরে এসব প্রকল্পের কাজ চললেও চট্টগ্রাম নগরীর পানি নিমজ্জিত অবস্থা থেকে পরিত্রান পায়নি নগরবাসী। গত ৬ বছরে এসব প্রকল্পে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা ইতোমধ্যে খরচ করে ফেললেও জলাবদ্ধতার সমস্যার ন্যূনতমও তো নিরসন হয়নি, বরং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে এসব প্রকল্পের কার্যকরতা নিয়ে জনমনে জিজ্ঞাসার পাশাপাশি দিন দিন জনক্ষোভ বাড়ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/767961