৬ আগস্ট ২০২৩, রবিবার, ১২:১৪

ভোটের বছরে ‘বুড়ো গাড়ির’ প্রতি নমনীয় সরকার

বাস ও ট্রাকের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) নির্ধারণ করে গত ১৭ মে জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেছে সরকার। ফলে ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরোনো ট্রাকসহ পণ্যবাহী যান চলাচলে আর বাধা নেই।

গত বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ আগের প্রজ্ঞাপন স্থগিতের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সড়ক পরিবহন বিভাগের উপসচিব (বিআরটিএ অধিশাখা) মো. মনিরুল আলম সমকালকে বলেছেন, প্রজ্ঞাপনটি আজ রোববার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। তিনি জানান, এ সিদ্ধান্তের ফলে গাড়ির আয়ুষ্কাল বিবেচনার বিষয় আপাতত থাকছে না। আয়ুষ্কাল পুনর্নির্ধারণে কমিটি করা হবে।

পরিবহন খাত সূত্র জানায়, বিকল্প ব্যবস্থা না করে ৮০ হাজারের বেশি পুরোনো যানবাহন চলাচল বন্ধ করলে অস্থিরতা ও অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এ যুক্তিতে নির্বাচনের বছরে ‘বুড়ো গাড়ি’ বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।

দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও নির্বাচনে প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় এ মুহূর্তে সড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটি বন্ধে আগ্রহী নয় সরকার। গত ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় তা বলা হয়েছে। সড়ক নিরাপত্তায় পুরোনো গাড়ি উচ্ছেদে স্ক্র্যাপ গাইডলাইনের খসড়া করেও পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে এলো সরকার।

সড়ক আইনের ৩৬ ধারায় সরকারকে যানবাহনের ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সড়ক নিরাপত্তায় শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন কমিটি সুপারিশ মেনে আড়াই মাস আগে বাস ও মিনিবাসের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয় ২০ বছর। ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ পণ্যবাহী সব যানবাহনের আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২৫ বছর।

এরপর থেকে আয়ুষ্কাল ফুরোনো যানবাহনকে সড়কে চলাচলের অনুমতি ও ফিটনেস সনদ দেওয়া বন্ধ রেখেছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। পরিবহন নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্সে চিঠি দিয়ে আয়ুষ্কাল-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন স্থগিতের দাবি জানান। এর আগে তারা বাসের আয়ুষ্কাল ২৫ বছর এবং ট্রাকের আয়ুষ্কাল ৩০ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলেন।

লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের উচ্ছেদ দাবি করে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সমকালকে বলেছেন, গাড়ি পুরোনো হলেই লক্কড়ঝক্কড় নয়। গাড়ির ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ আমদানি হওয়ায় কোনো যানবাহনই অচল থাকে না। ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিন বা ইঞ্জিনের পার্টস, বডি বা অন্যান্য অংশ পুনঃস্থাপন করলে যে কোনো বয়সী গাড়ি ফিটনেস সনদ পাওয়ার উপযুক্ত।

খন্দকার এনায়েত বলেছেন, ২০ হাজারের মতো ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস এবং ৬০ হাজারের মতো ২৫ বছরের বেশি পুরোনো ট্রাক চলছে। এগুলো একসঙ্গে বাতিল হলে সংকট তৈরি হবে। পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হবে। তা সরকারকে জানানো হয়েছে। নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি অনুধাবন করে প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেছেন।

গত ১০ জুন চট্টগ্রামের পরিবহন নেতারা গাড়ির আয়ুষ্কাল বাড়াতে সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীকে চিঠি দেন। এতে বলা হয়, ‘নির্বাচনের আগে ইকোনমিক লাইফ কার্যকর করা হলে সরকারের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
পুরোনো গাড়ি দুর্ঘটনা ও পরিবেশ দূষণের কারণ উল্লেখ করে গত জুনে স্ক্র্যাপ গাইডলাইনের খসড়া করে সড়ক পরিবহন বিভাগ। এতে বলা হয়, আয়ুষ্কাল ফুরোনো গাড়ি সড়কে চালানো যাবে না। আয়ুষ্কাল শেষে ধ্বংস করতে হবে সরকার নিয়োজিত ভেন্ডরের মাধ্যমে। তবে কী কারণে এ অবস্থান থেকে সরকার পিছিয়ে এলো, এ বিষয়ে সড়ক সচিবের বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল।

https://samakal.com/bangladesh/article/2308187941