৬ আগস্ট ২০২৩, রবিবার, ১১:৫৮

ডেঙ্গুতে দেশে মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৩০০ নতুন ভর্তি ২৪৯৫

বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে ০.৫ শতাংশ মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে এককভাবে ঢাকা শহরেই বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে মোট মৃত্যুর ০.৭ শতাংশ হচ্ছে ঢাকা শহরে আর ঢাকার বাইরে ঢাকার বিভাগের অবশিষ্ট এলাকা এবং দেশের অন্যান্য বিভাগে মৃত্যু হচ্ছে মোট আক্রান্তের ০.২ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশান সেন্টার অ্যান্ড কনট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৪৯৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে সাতজনের এবং ঢাকার বাইরে তিনজন। একই সময়ে ঢাকা শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৬৯ জন এবং ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৪২৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, দেশের হাসপাতালগুলোতে সব সময় মোট আক্রান্তদের ১৫ শতাংশ ভর্তি থাকছে চিকিৎসার জন্য। আক্রান্তদের খুব দ্রুত ছেড়ে দেয়া হচ্ছে শরীরের সুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলেই। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলছেন, ‘হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে যারা ভর্তি হচ্ছেন, তাদের মধ্যে সুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পেলেই তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। কারণ এই হাসপাতালে প্রতিদিনই একশ’ থেকে দেড়শ’ রোগী এখানে ভর্তি হচ্ছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ৯৫ জন নতুন রোগী ভর্তি করা হয়েছে। সবাইকে একেবারে সুস্থ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিলে আমরা নতুন রোগী ভর্তি করতে পারব না। সে কারণে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি না হলে এবং রোগী সুস্থ বোধ করলেই ওষুধ দিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে এবং ক’দিন পর আবার হাসপাতালের আউটডোরে দেখিয়ে যেতে বলা হচ্ছে।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, গতকাল পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া রোগীর হার ছিল ৮৫ শতাংশ।

মেডিসিনের বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘এখন ডেঙ্গু চিকিৎসায় ডায়গনস্টিকের চেয়ে ক্লিনিক্যাল সিম্পটমের (জ্বরজনিত কারণে শরীরে স্পষ্ট হওয়া লক্ষণ) চিকিৎসকদের জোর দেয়া উচিত। কারণ জ্বরের তিন দিনের মধ্যে এনএস১ পজিটিভ আসে না। তিনি বলেন, অন্তত ২০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর এনএস১ পজিটিভ আসে না। অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, আবার জ্বরের ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে প্লাটিলেটও কমে না। অতএব, প্লাটিলেট না কমলে এবং এনএস১ পজিটিভ না এলেও লক্ষণ বুঝে চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতে হবে। কারণ ডেঙ্গুর বৈশিষ্ট্যে এখন পরিবর্তন এসেছে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, ডেঙ্গু এখন নোংরা পানিতে জন্মাতে পারে এবং রাতের বেলাও কামড়ে থাকে।’ অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলছেন, মশক নিধনে জোর দিতে পারলে সব ধরনের মশাই নির্মূল হয়ে যেতে পারে। তিনি সংশ্লিষ্টদের মশক নিধনে কাজ করার আহ্বান জানান।

মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাহমুদ হাসান বলছেন, ‘ঢাকায় মূলত কয়েকটি চিহ্নিত এলাকা থেকেই রোগী বেশি আসছে। সে এলাকায় মশক নিধনে বিশেষ অভিযান চালালেই কিন্তু ডেঙ্গু সংক্রমণ কমে আসে। তা ছাড়া সেসব এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারলে মানুষ ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে নিজেরাই সচেতন হবে এবং মশার কামড় থেকে বেঁচে থাকবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমএসআইয়ের পরিচালক অধ্যাপক ডা: শাহাদাত হোসেন ডেঙ্গুবিষয়ক প্রেসব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন ঢাকায় যাত্রাবাড়ী, মুগদা, জুরাইন, মিরপুর, উত্তরা ও বাড্ডা এলাকা থেকেই বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী চলতি আগস্ট মাসের গত ৫ দিনে দেশে ১২ হাজার ১৩৬ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এবং সারা দেশে এই পাঁচ দিনে (প্রকৃতপক্ষে গতকাল ৫ আগস্ট সকাল পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গুতে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটা জুলাই মাসের মোট মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশের চেয়ে বেশি। জুলাই মাসে মোট মৃত্যু হয়েছে ২০৪ জনের।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/767682