২৮ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ১:৫২

হাজারিবাগে সংযোগ বন্ধে ১৫ দিনে ক্ষতি ২ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা

গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিছিন্ন করে দেয়ায় গত ১৫ দিন বন্ধ রয়েছে হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানাগুলো। এতে ট্যানারি খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এ ক্ষতির দায় সরকারকেই নিতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে চামড়া শিল্প রক্ষা ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবি করেছেন ট্যানারি শিল্প মালিকরা। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ফিনিশ লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, বিটিএর সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার এসোসিয়েশনের সভাপতি ও ঐক্য পরিষদের কো-চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৮ এপ্রিল হাজারীবাগে ট্যানারি শিল্পকারখানা বন্ধ করে দেয়ার পর এ পর্যন্ত এ খাতে দেড় হাজার কোটি টাকার রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে। উচ্চ আদালত সাভারের চামড়া শিল্প নগরে ১৫ দিনের মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয়ার আদেশ দিলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ১৪০টি কারখানা গ্যাস-সংযোগের জন্য আবেদন করা হলেও পাওয়া গেছে মাত্র নয়টি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ১৫ দিনে দুই হাজার ৬৮৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি এক হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। রফতানিতে ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ১১ কোটি টাকা। এছাড়াও চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩৭ কোটি টাকা।
এদিকে, গত ৯ এপ্রিল এক নির্দেশে আদালত পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে সাভারের ট্যানারি শিল্প এলাকার সব কারখানার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দেয়ার নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বুধবার ছিল আদালতের বেঁধে দেয়া সময়ের শেষ দিন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে নয়টি কারখানায়।
এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে অবিলম্বে সব কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগসহ নয় দফা দাবি আদায়ে আমরা রাজপথে আছি। প্রয়োজনে আদালতে যাবো।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিসিকের ভুল তথ্যের কারণেই আদালত এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আর এতে করে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। আদালতের এমন সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা আজ বেকার। তাদের চাকরি ফিরে পাওয়া নিয়ে নতুন করে সংশয় দেখা দিয়েছে। সাভারে তাদের ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার কোন ব্যবস্থা নেই। তাদের থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। তাদের কাজেরও পরিবেশ নেই।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে তাদের আবাসনের ব্যবস্থাও করতে হবে। তা না হলে ট্যানারিগুলো কোন শ্রমিক পাবে না। আর অভিজ্ঞ শ্রমিক না পেলে ট্যানারি শিল্প অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তাদের দাবিগুলো হলো- ২০০৩ সালের সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী শিল্পনগরীর প্লটের মালিকানা দ্রত রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা, শিল্পনগরীতে আন্তর্জাতিক মানের সিইটিপি, ক্রোম রিকভারি ইউনিট ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণ নিশ্চিতকরণ, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের আবাসন, সেক্টর সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বরাদ্দসহ প্লট না পাওয়া উদ্যোক্তাদের প্লট দেয়া, বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য মালিকদের সরকারের পক্ষ থেকে এককালীন অর্থ বরাদ্দ, কারখানার উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় যেসব রফতানি আদেশ বাতিল হবে এবং ক্রেতাদের দাবি করা ক্ষতিপূরণের অর্থ সরকার কর্তৃক পরিশোধ, বিসিকের অব্যবস্থাপনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং শিল্প উদ্যোক্তাদের বিদ্যমান ঋণ ব্লক ও সুদ মওকুফ করা। এছাড়া হাজারীবাগের জমিতে ডিজাইন প্ল্যান পাসের ওপর রাজউকের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়।

http://www.dailysangram.com/post/281694-