৫ আগস্ট ২০২৩, শনিবার, ১:২৮

এপ্রিল-জুলাইয়ে কম বৃষ্টিপাত উষ্ণতা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গুর ঝুঁকি

কম বৃষ্টিপাত ও উত্তরোত্তর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত উষ্ণতা বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। কম বৃষ্টিপাত ও একটি নির্দিষ্ট লেভেলের তাপমাত্রা ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার বংশ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভবিষ্যতে আরো কিছু ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এর মধ্যে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জীবাণু সংক্রমণ অন্যতম। ৫০ বছর আগেও ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়া নামক কোনো রোগের কথা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষতো দূরের কথা চিকিৎসকরাও বলতে পারতেন না। ২০০০ সালে যখন প্রথম বাংলাদেশে ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে তখন চিকিৎসকরাও হিমশিম খেয়েছেন। তারা জানতেন না, কিভাবে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা করাতে হয়। পরে থাইল্যান্ডের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা ডেঙ্গুর চিকিৎসা শুরু করেন। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনের দিনগুলোতে শুধু ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়া নয়, জিকা ভাইরাস, ইয়েলো ফিভার, গুলেনব্যারে সিনড্রোমের মতো রোগগুলো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির সাসটেইনেবল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড দ্য বিল্ট এনভায়রনমেন্টের অধ্যাপক ড. রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ফ্রেঞ্চ গায়ানা, ইন্দোনেশিয়া, কলাম্বিয়া এবং সুরিনামে এল নিনু ও ডেঙ্গু এপিডেমিকের (মহামারী) মধ্যে একটি নিবিড় (৯৫ শতাংশ) সম্পর্ক রয়েছে। এল নিনুর এ সময়ে এই অঞ্চলগুলোতে যেমন কম বৃষ্টিপাত হয়েছে তেমনি বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। আমি মনে করি, বাংলাদেশ একই রকম সমস্যা মোকাবেলা করছে। আমি জানি না, এল নিনু ও ডেঙ্গুর মধ্যে যে একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এ বিষয়ে বাংলাদেশে কোনো গবেষণা হয়েছে কি না। বিষয়টি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণাটি করা হলে ৩ থেকে ৬ মাস আগেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সম্বন্ধে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। এ ধরনের গবেষণা হলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই জনসচেতনতা বাড়ানো এবং সরকার কীটনাশক প্রয়োগ করে মশক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারবে। ড. রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘ইতোমধ্যে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সংক্রামক রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এবং এটা প্রায় মহামারী আকারে দেখা দেয়ার পেছনে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি দায়ী। এ ছাড়া তাপ বেড়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ-শোক এবং মৃত্যুও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ডা: আহমেদ পারভেজ জাবীন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি এবং এদেশে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো জীবাণু সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুণিয়া নামক জীবাণুটি এডিস মশা বহন করে থাকে। গড়ে ২৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য আদর্শ তাপমাত্রা।

বাংলাদেশে এই আগস্ট মাস ও সেপ্টেম্বর মাসে তাপমাত্রা ৩২ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে বলে এই দুই মাসকে ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই দুই মাসেই পরিবেশে প্রচুর আর্দ্রতাও থাকে। নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা ডেঙ্গুর ডিম থেকে লার্ভা হয়ে পূর্ণাঙ্গ মশায় পরিণত হওয়ার জন্য আদর্শ। এই দুই মাস সরকারিভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক থাকতে হবে। ডা: আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, সরকারিভাবে ব্যাপক ভিত্তিতে মশক নিধন অভিযান চালাতে হবে এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গেলে মানুষকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যদিকে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে মানুষকে এডিস মশা সম্বন্ধে সতর্ক থাকতে হবে। ঘরে অথবা ঘরে আশপাশে যেন পানি জমে মশার বংশ বিস্তার করতে না পারে সেদিকে মানুষকে ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়া ঘুমানোর সময় মশারির মধ্যে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে সেটা দিনের বেলা হলেও।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/767436