৪ আগস্ট ২০২৩, শুক্রবার, ১:২০

কুড়িল-পূর্বাচল লিঙ্ক রোডে শেষই হচ্ছে না খাল খনন

রাজধানীর ডিওএইচএস, বারিধারা, সেনানিবাস এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতায় বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়। সংকট দূর করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প হাতে নেয় আট বছর আগে। পানি যাতে দ্রুত নেমে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা হিসেবে খিলক্ষেত থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বালু নদী পর্যন্ত কুড়িল-পূর্বাচল লিঙ্ক রোডের দু’পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন, সংরক্ষণ ও পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো ছিল প্রকল্পের প্রধান কাজ।

২০১৫ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালে। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় দুই দফায় প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩২২ কোটি টাকায়। সময় বাড়ানো হয় তিন দফা। বর্ধিত সময় অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। অথচ খালের ভেতর এখনও ডাইভারশন রোড রয়ে গেছে। টেস্ট পাইলগুলোও দাঁড়িয়ে আছে খালের মাঝখানে।

সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে। পরিদর্শন শেষে আইএমইডি এক প্রতিবেদনে বলেছে, ভারী ট্রাকের ধাক্কায় চারটি আন্ডারপাসের কলামের পলেস্তারা খসে পড়েছে। প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ে অসংগতি প্রসঙ্গে বলা হয়, রেট শিডিউলের চেয়ে ব্যয় বেশি দেখানো হয়েছে। প্রতি ঘনমিটার মাটি খননের ব্যয় ধরা হয় ৩৮৯ টাকা ৪৮ পয়সা। অথচ পিডব্লিউডির নির্ধারিত ব্যয় ২৩৯ টাকা ৪০ পয়সা। এ ছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর থেকে প্রকল্পটির অডিট কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। এর আগের দুটি অর্থবছরের দুটি অডিট আপত্তি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।

আইএমইডির প্রতিবেদনটি গত ৫ ফেব্রুয়ারি গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন এবং পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সরকারের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি অন্যান্য বিভাগে জমা দেওয়া হয়। সরেজমিন পরিদর্শনে নেতৃত্ব দেন আইএমইডির সেক্টর-৭ এর পরিচালক খলিল আহমেদ।

জানতে চাইলে ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া সমকালকে বলেন, প্রকল্পটিতে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ছিল। করোনার কারণেও নির্মাণকাজ বিঘ্নিত হয়। এ ছাড়া অন্যান্য যেসব অংগতির কথা জানা গেছে, সেগুলো নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। এর পর করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

প্রতিবেদনে আইএমইডি ডাইভারশন রোড এবং টেস্ট পাইলগুলো দ্রুত অপসারণের সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া বিগত অর্থবছরের অডিট কার্যক্রম শুরু করা এবং কাদামাটি অপসারণ, মাটি খনন এবং ভরাটের কাজে পিডব্লিউডির রেট শিডিউল অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। ট্রাকের ধাক্কায় চারটি আন্ডারপাসের কলামের পলেস্তারা খসে পড়া রোধে প্রকল্পের ডিজাইনে পরিবর্তন এনে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়।

রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএসের স্থায়ী বাসিন্দা সৈয়দ ফাইজুল আহসান শামীম সমকালকে বলেন, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বাড়ি করেও জলাবদ্ধতায় ভুগছেন তারা। একটু বৃষ্টিতেই ড্রেনেজ সিস্টেম কাজ করে না। টানা বৃষ্টি হলে পানিতে সয়লাব হয় পুরো এলাকা। পূর্বাচল লিঙ্ক রোডের দুই পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন, সংরক্ষণ ও পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার পর গত ৮ বছরেও শেষ হলো না। এ কারণে ভোগান্তিও কাটছে না তাদের।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। রাজউকের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এম এহসান জামীল প্রকল্পটির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। আইএমইডির প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে সমকালকে তিনি বলেন, খালের দুই পাড়ে জনবসতি আছে। তাদের যাতায়াতের কথা চিন্তা করেই ডাইভারশন রোড তুলে নেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিনেও প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কাজ শুরু হওয়ার পর অতিরিক্ত অঙ্গ সংযোজন করতে হয়েছে। খালের দৈর্ঘ্য মূল প্রকল্প প্রস্তাব-ডিপিপিতে উল্লিখিত দৈর্ঘ্যের অতিরিক্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার বাড়াতে হয়েছে। এ কারণে সময় বেশি লাগছে। দ্বিগুণ ব্যয়ের বিষয়ে তিনি জানান, শুধু ভূমি অধিগ্রহণেই সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হচ্ছে। মাটি খননে রেট শিডিউল অনুসরণ না করে অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, কাদামাটি অপসারণ করে অনেক দূরে নিয়ে যেতে হয়েছে। এ কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় ব্যয় বেশি হয়েছে। অনুমোদিত ডিপিপিতেই প্রতি ঘনমিটার মাটি খননে ব্যয়ের কথা উল্লেখ আছে ৩৮৯ টাকা ৪৮ পয়সা। পিডব্লিডির ২৩৯ টাকা ৪০ পয়সার সাধারণ হিসাব এখানে খাটে না।

কাজের অগ্রগতি অনুযায়ী ২০১৮ সালে বাস্তবায়নের কাজ শেষ করার সম্ভাবনা না থাকায় ২০১৬ সালের নভেম্বরে ডিপিপি বিশেষ সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বাড়ানো হয় ১৬২ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের নভেম্বরে আবার ব্যয় বাড়ানো হয় ৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এর ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। সময় বাড়ানো হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর পর সময় বাড়িয়ে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এ সময়ও কাজ শেষ হয়নি। নতুন করে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ দ্রুত শেষ করতে গত ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ৮ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত অর্থবছরেও চাহিদামতো ১ হাজার ৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর পরও প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৯৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৯ শতাংশ।

https://samakal.com/whole-country/article/2308187517